স্পোর্টস ডেস্ক:
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দুর্দান্ত ছন্দেই ছিল আর্জেন্টিনা। তবে সবশেষ দুই ম্যাচ একেবারেই ভালো যায়নি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। টানা ১২ ম্যাচ জয় তুলে নেওয়া দলটি গেল মাসে হেরে বসে কলম্বিয়ার কাছে। এর ঠিক এক মাস পর, ভেনেজুয়েলার মুখোমুখি হয়েও জয়ের দেখা পায়নি লিওনেল স্কালোনির দল। টানা দুই ম্যাচের হতাশা কাটিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মতোই।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) ভোরে ঘরের মাঠে বলিভিয়াকে ৬-০ গোলে হারিয়েছে আলবিসেলেস্তেরা। হ্যাটট্রিক করেছেন লিওনেল মেসি। একটি করে গোল পেয়েছেন জুলিয়ান আলভারেজ, আলমাদা এবং লাউতারো মার্টিনেজ।
মেসির হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি গোল পেয়েছেন বাকি দুই স্ট্রাইকার লাউতারো মার্তিনেজ এবং হুলিয়ান আলভারেজ। অন্য গোলটা এসেছে আলভারেজের বদলি নামা থিয়াগো আলমাদার পা থেকে। ৬ গোলের এই জয়ের সুবাদে ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কনমেবল অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য আরও শক্ত করল আর্জেন্টিনা।
লাউতারো মার্তিনেজ এবং হুলিয়ান আলভারেজকে অদলবদল করে খেলিয়েই গত দুই বছর সাফল্য পেয়েছেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। বলিভিয়ার বিপক্ষে তাদের দুজনকেই একসঙ্গে নামানো হলো। সঙ্গে ডানপ্রান্তে ছিলেন মেসি। একাধিক ইনজুরিতে জর্জর আর্জেন্টিনার রক্ষণে ছিলেন ক্রিশ্চিয়ান মেদিনা আর নিকোলাস তালিয়াফিকো। ফর্মেশন থেকেই আর্জেন্টাইন কোচের আক্রমণাত্মক দর্শন ছিল স্পষ্ট।
ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিটের পরিসংখ্যানেও সেটা ছিল স্পষ্ট। পুরো প্রথমার্ধেই বলিভিয়ার রক্ষণে ছড়ি ঘুরিয়েছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচে বল পজেশনের পাশাপাশি আক্রমণেও আর্জেন্টিনার আধিপত্য ছিল পুরোদমে। প্রথমার্ধে দুই দলের ব্যবধান হয়ে রইলেন শুধুই মেসি। এক গোলের পাশাপাশি করেছেন দুই অ্যাসিস্ট। তাতেই ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিট শেষে আর্জেন্টিনা পেল ৩ গোল।
লাউতারো মার্তিনেজের পাস ধরে মেসির বা পায়ের ক্লিনিক্যাল ফিনিশে আসে ম্যাচের প্রথম গোল। ১৯ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে এনে দেন নাম্বার টেন। সামনে থাকা ডিফেন্ডার বা কাছের পোস্টে গোলরক্ষকের ঠেকানোর সাধ্য ছিল না (১-০)। জোরালো শটে কাছের পোস্টে জাল কাঁপান মেসি। জাতীয় দলে এটি ছিল তার ১১০তম গোল। সংখ্যাটা অবশ্য আরও ২ বেড়েছে ম্যাচের শেষে।
এরপর লাউতারোর প্রতি কৃতজ্ঞতাও যেন স্বীকার করলেন ম্যাচের ৪৩ মিনিটে। পাল্টা আক্রমণে মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে নিজেই ঢুকে গিয়েছিলেন বক্সে। এরপরই নিঃস্বার্থ মাপা পাস দিলেন লাউতারোর দিকে। ততক্ষণে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে বলিভিয়ান রক্ষণের পুরোটাই। ফাঁকা পোস্টে আলতো টোকায় করেছেন স্কোর (২-০)।
প্রথমার্ধের একেবারে যোগ করা সময়ে মাঝমাঠে ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। নিরীহদর্শন সেই জায়গা থেকেই চকিত ক্রস মেসির। অফসাইড ট্র্যাপ ভেঙেছিলেন হুলিয়ান আলভারেজ। বুক দিয়ে বল নামিয়ে জটলার মধ্যে ফিনিশ (৩-০)৷ প্রথম ৪৫ মিনিটেই স্কোরশিটে নাম তুললেন আর্জেন্টিনার ৩ স্ট্রাইকার।
দ্বিতীয়ার্ধেও খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই রাখে আর্জেন্টিনা। ৬৫ মিনিটে আলভারেজের বদলি হিসেবে নামেন আলমাদা। আর ৭০তম মিনিটেই গোলের দেখা পান তিনি। ডি-বক্সের ভেতরে মোলিনা বল পেয়ে যান। নিচু ক্রস করেন আলমাদার দিকে। বল পেয়ে ওয়ান টাচে গোল করেন তিনি।
এরপর শুধু মেসি শো। দুই মিনিটে দুই গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। ৮৪ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে পালাসিওসের কাছ থেকে পাস পেয়ে মেসি বলিভিয়ার দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে গোল করেন। তার দুই মিনিট পরই ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নিকো পাজের ব্যাক পাস থেকে দারুণ এক গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন মেসি।
শেষ পর্যন্ত এই ৬-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের কনমেবল অঞ্চলে শীর্ষস্থানটা আরও মজবুত করল মেসির দল। ১০ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট আর্জেন্টিনার।
Sharing is caring!