স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলার ক্রিকেটের উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম তামিম ইকবাল খান। পত্র-পত্রিকার পাতায় তামিমকে নিয়ে সংবাদ লিখতে গিয়ে কতশত বিশেষণ দিয়েছেন লেখক, সংবাদকর্মী থেকে শুরু করে ক্রিকেটপ্রেমীরা। দেবেন না-ই বা কেন! তামিম ইকবাল তো বিশেষণ পাওয়ার মতোই একজন ক্রিকেটার। ক্রিকেটের ২২ গজে ক্যারিয়ারজুড়েই তিনি ছিলেন উড়ন্ত। কখনো চার-ছক্কার ফুলঝুরি, আবার কখনো ক্রাইসিস মোমেন্টে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করে শুধু দর্শকদের বিনোদিত করেননি, সবার হৃদয়ও জয় করেছেন। যেমন, ২০১৮ সালে হওয়া এশিয়া কাপে শ্রীলংকার বিপক্ষে ভাঙা হাতে ব্যাটিংয়ে নেমে গোটা বাংলার মানুষের হৃদয়টাই জয় করেছিলেন মি. খান। দিয়েছেন দেশপ্রেমের পরিচয়ও।
১৭ বছরের বর্ণিল ক্যারিয়ারে কতশত অর্জন আছে তামিমের, তা হয়তো এক বসাতে বলা কঠিন হবে। তবে তামিমের আছে দুঃখগাথাও। কখনো নিজ দলের সতীর্থ আবার কখনো টিম ম্যানেজমেন্ট, সিলেক্টর, অপারেশন্স থেকে শুরু করে স্বয়ং বোর্ড সভাপতির ওপরও নানা কারণে বিভিন্ন সময় চাপা অভিমান ছিল তামিমের। ক্যারিয়ারের মাঝপথে তাই তো অনেকটা কষ্ট আর ক্ষোভ থেকেই শেষবার ২০২৩ সালে ঘরের মাটিতে চট্টগ্রামে আফগানিস্তান সিরিজ চলাকালীন হঠাৎ করেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন তামিম। তবে কে জানত, বাংলার এ ক্রিকেটারের প্রতি এত ভালোবাসা ভক্তদের। তামিমের অবসরের খবরে হতবাক তার ভক্তরা তখন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় তামিমকে ফেরাতে আন্দোলন কর্মসূচি ও মিছিল বের করেছে। পৃথিবীর আর কোনো ক্রিকেট খেলোয়াড়ের প্রতি এতটা ভালোবাসা প্রদর্শন করা হয়েছে কিনা, আমার জানা নেই।
টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দিয়েছেন আগেই, তবে ভক্তদের বিশেষ অনুরোধে ফের ওডিআই ক্রিকেটে ফেরার ঘোষণা দেন তামিম। তবে তা শুধু ঘোষণায়ই সীমাবদ্ধ ছিল। ১৭ মাস ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন তামিম। গত ১০ জানুয়ারি (শুক্রবার) দ্বিতীয়বারের মতো ওডিআই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন ৩৫ বছর বয়সি বাংলাদেশের ক্রিকেটের কিংবদন্তি এ ড্যাশিং ওপেনার। তামিমের আগ্রাসী ব্যাটিং, পাওয়ার হিটিং, কাভার ড্রাইভ, অপরাজেয় মনোভাব, ক্যাপ্টেন্সি, তার শৈল্পিক ক্রিকেট আর দেখা যাবে না টিভি পর্দায় কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যাচে। তবে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ে ঠিকই স্মরণীয় হয়ে থাকবেন মি. খান। লাল-সবুজের জার্সিতে এ ক্রিকেটারকে নিঃসন্দেহে মিস করবে বাঙালি ক্রিকেটপ্রেমীরা।
২০০৭ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআই ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। শেষ ওয়ানডে খেলেন ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ১৭ বছরের বর্ণিল ক্যারিয়ারে তামিমের অর্জনের ঝুলিটাও বেশ ভারী। এখন পর্যন্ত ২৪৩ ওডিআই খেলে ৩৬.৬৫ গড়ে তামিম রান করেছেন ৮ হাজার ৩৫৭। ৭০ টেস্ট আর ৭৮টি টি-টোয়েন্টি খেলে মোট রান সংগ্রহ করেছেন ৬ হাজার ৮৯২। আর গোটা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তামিমের রানের সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশি হিসাবে ৫০টি ওডিআই হাফ সেঞ্চুরির কীর্তিও গড়েছেন ড্যাশিং এ ওপেনার। সব ফরম্যাটের ক্রিকেটেও বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক তিনি। দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বাধিক ২৫টি সেঞ্চুরি তামিমের দখলে।
ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময় তামিমের যন্ত্রণার সাক্ষী ছিল চোট। বিভিন্ন সময় চোটের কারণে ছিটকে গেছেন তামিম। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ৩ আগস্ট চোটের কারণে জাতীয় দিলের অধিনায়কত্বও ছাড়তে হয় তামিমকে। তবে তামিমের ক্রিকেটীয় অধ্যবসায় বারবার ফিরিয়ে এনেছে ২২ গজে। শুধু ২২ গজে নয়, ক্রিকেটের বাইরেও তামিম ছিলেন বরাবরের মতোই সবার কাছে প্রিয়। তামিমের মানবিক কার্যক্রম, সাহসী ও উদ্যমী চরিত্র, ভক্তদের প্রতি আন্তরিকতা মুগ্ধ করেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। কোভিড-১৯-এর সময় তামিমের অনলাইন টকশো দেখে লাখ লাখ ভক্ত-শ্রোতা আনন্দিত হয়েছে। ক্রিকেটের বাইরে নিতান্তই আদর্শ একজন মানুষ তামিম ইকবাল খান। খান সাহেবের ব্যাটিং বন্দনা দেখতে হলে এখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, বিপিএলের মতো ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লীগের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে ভক্তদের। এছাড়া তামিমকে দেখা যেতে পারে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকাতেও। সুন্দর হোক তামিমের আগামীর পথচলা। বিদায় হে ‘কিংবদন্তি’! ভক্তদের স্মৃতির ডায়েরিতে বেঁচে থাকবেন তামিম।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com