
শেখ নিয়ামত উল্লাহ:
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ। গভর্নরের প্রাসাদের সামনে হাজির হয়েছেন হাজার দশেক মানুষ। সেখানে আনা হলো সৌদি রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স ফয়সাল বিন মুসাইদকে। পরনে সাদা পোশাক। হাঁটু গেড়ে বসলেন তিনি। কিছুক্ষণ বাদেই নেমে এল জল্লাদের তলোয়ার। হাজারো জনতার সামনে শিরশ্ছেদ করা হলো যুবরাজকে। তারিখটা ১৯৭৫ সালের ১৮ জুন।
এবার কয়েক মাস পেছনে ফেরা যাক। সেদিন ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ, আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগে। সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ নিজ কার্যালয়ে কুয়েতের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন প্রিন্স ফয়সাল বিন মুসাইদ। সম্পর্কে তিনি বাদশাহ ফয়সালের ভাইপো। ওই হত্যাকাণ্ডের জন্যই তাঁর শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল।
বাদশাহ ফয়সাল ছিলেন সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ বিন আল সৌদের ছেলে। সৌদি আরবের তৃতীয় বাদশাহ তিনি। তাঁর মৃত্যু সে সময় দুনিয়াজুড়ে সাড়া ফেলেছিল। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টসহ নামীদামি সব সংবাদপত্র এ নিয়ে ফলাও করে খবর ছেপেছিল। শোক জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডসহ বিশ্বনেতারা। তবে কী কারণে চাচাকে হত্যা করতে প্রিন্স ফয়সাল অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, সে রহস্যের আর সমাধান হয়নি।
প্রিন্স ফয়সাল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য, এমন অভিযোগও উঠেছিল।
যেভাবে হত্যা করা হয় ফয়সালকে
বাদশাহ ফয়সালকে যখন হত্যা করা হয়, তখন তাঁর জ্বালানি তেলমন্ত্রী ছিলেন শেখ আহমেদ জাকি ইয়ামানি। তাঁর মেয়ের নাম মেই ইয়ামানি। পেশায় তিনি লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাদশাহ ফয়সালকে যখন হত্যা করা হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর। এখন বয়স ৬৮। হত্যাকাণ্ডের সময় কী ঘটেছিল, তা বিবিসির সঙ্গে আলাপচারিতায় জানিয়েছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মেই ইয়ামানি বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন তেলমন্ত্রী। তাই তিনি সেদিন বাদশাহ ফয়সালকে এ বিষয়ে আগে থেকে ব্যাখ্যা করতে গিয়েছিলেন। আর যে যুবরাজ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন, তিনি বাদশাহর ভাইপো ছিলেন। ভাগ্যের পরিহাস হচ্ছে, তাঁর নামও ছিল ফয়সাল।
মেই ইয়ামানি আরও বলেন, ‘কুয়েতের তেলমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে প্রতিনিধিদল বাদশাহর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল, তাদের ভেতরে ঢুকে পড়েন ফয়সাল। বাদশাহ ফয়সাল তাঁর ভাইপোকে আলিঙ্গন করতে দুই হাত বাড়িয়ে দেন। তখনই তাঁর ভাইপো পকেট থেকে একটা ছোট্ট পিস্তল বের করেন। এরপর গুলি করেন বাদশাহ ফয়সালকে। মাথা লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি। আমার বাবা তখন বাদশাহ ফয়সালের খুব কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।’
এরপর বাদশাহ ফয়সালকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, তিনি মারা গেছেন। মেই ইয়ামানির বাবা শেখ ইয়ামানি বাদশাহ ফয়সালের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মন্ত্রীদের একজন। বিবিসিকে মেই ইয়ামিন বলেন, ‘আমি সেদিনের কথা কখনোই ভুলব না। সে কষ্ট আমাকে সইতে হয়েছে। আমি এখনো তা মনে করতে পারি। আমার বাবার যে বেদনা, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন বাদশাহ ফয়সালের পাশে, যিনি ছিলেন তাঁর সব কিছু—গুরু, বন্ধু, পথপ্রদর্শক। অথচ তাঁকে এত কাছে থেকে গুলি করে মারা হলো।’
বাদশাহ ফয়সালকে হত্যার খবর পরদিন স্থান পেয়েছিল নিউইয়র্ক টাইমসের প্রথম পাতায়
বাদশাহ ফয়সালকে হত্যার খবর পরদিন স্থান পেয়েছিল নিউইয়র্ক টাইমসের প্রথম পাতায়ছবি: নিউইয়র্ক টাইমসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
হত্যাকারী যুবরাজ কি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন
যুবরাজ ফয়সালের চালানো প্রথম গুলিটি লাগে বাদশাহর চিবুকে। দ্বিতীয় গুলিটি তাঁর কান ঘেঁষে চলে যায়। একজন রক্ষী অকস্মাৎ এগিয়ে এসে যুবরাজকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করেন। তখন তেলমন্ত্রী জাকি চিৎকার করে ওঠেন, যুবরাজকে হত্যা করা যাবে না। এরপর প্রিন্স ফয়সালকে গ্রেপ্তার করে কারাবন্দী করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর সৌদি রাজপরিবার থেকে দাবি করা হয়েছিল, যুবরাজ ফয়সাল মানসিকভাবে অসুস্থ। তবে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গঠন করা বিশেষজ্ঞদের বরাতে ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছিল সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। ওই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, হত্যার দিন যখন নিরাপত্তারক্ষীদের পেরিয়ে যুবরাজ ফয়সাল বাদশাহের কাছে গিয়েছিলেন, তখন তিনি মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন।
যুবরাজ ফয়সাল যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছিলেন। সে সময় তাঁর মানসিক অবস্থা কেমন ছিল, তা জানতে দেশটিতে বিশদ খোঁজখবর নেন তদন্তকারীরা। জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে এলএসডি নামের একধরনের মাদক বিক্রির জন্য একবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল যুবরাজ ফয়সালকে। সৌদি আরবে ফেরার পর রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তখন তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে খবর বের হয়। লেবাননের রাজধানী বৈরুতেও মানসিক চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত চাচাকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পান ২৭ বছর বয়সী যুবরাজ ফয়সাল। ১৯৭৫ সালের ১৮ জুন তাঁকে শিরশ্ছেদের আগে বিকেল সাড়ে চারটায় আদালতের রায় গভর্নরের প্রাসাদের সামনে উপস্থিত জনতাকে জানায় সৌদি সরকার। এরপর শিরশ্ছেদ কার্যকর করা হয়। সাজা দেওয়ার পর কিছুক্ষণ জনসাধারণের সামনে রাখা হয় যুবরাজের খণ্ডিত মাথা। এরপর কবর দেওয়ার জন্য পুরো শরীর অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাদশাহ ফয়সালের পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে সবচেয়ে অগ্রাধিকার পেয়েছিল ফিলিস্তিন। তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনের দুর্দশাপীড়িত মানুষের পক্ষের মানুষ।
হত্যার পেছনে রহস্য কী
বাদশাহ ফয়সালকে হত্যার পর কারণ খুঁজতে ১৬ সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। শেষ পর্যন্ত তাঁরা জানান, এ হত্যার পেছনে কোনো চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্র নেই। যদিও বাদশাহ ফয়সালকে হত্যার পেছনে কী কারণ কাজ করেছিল, তা নিয়ে গুঞ্জন কম ছড়ায়নি।
চাচাকে হত্যার পর যুবরাজ ফয়সালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছিল। যেমন বলা হয়েছিল, রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে নিজের বার্ষিক বরাদ্দের পরিমাণ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন যুবরাজ। এ ছাড়া তাঁর দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত কারণে ওই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। যুবরাজ ফয়সাল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য, এমন অভিযোগও আনা হয়েছিল।
বাদশাহ ফয়সালের মৃত্যুর পর তাঁর স্থলে আসেন বাদশাহ খালিদ। তখন সৌদি আরবের গোয়েন্দাপ্রধান ছিলেন যুবরাজ তুর্কি আল ফয়সাল। তাঁকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেন বাদশাহ খালিদ। ২০২০ সালের এপ্রিলে সৌদি রোতানা খালিজিয়া চ্যানেলে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাদশাহ ফয়সালের হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত ছিল না। হত্যার পেছনে কাজ করেছিল যুবরাজ ফয়সালের ‘ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও বাদশাহর কিছু নীতি’।
বাদশাহ ফয়সালের মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিবিসিকে মেই ইয়ামানি বলেছিলেন, ‘বাদশাহ ফয়সালকে কেন হত্যা করা হয়েছিল, তার আসল কারণ আমরা জানি না। শুধু এটা জানি, বাদশাহকে যিনি হত্যা করেছিলেন, সেই ভাইপো ছিলেন মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত।’
বাদশাহ ফয়সালের জ্বালানি তেলমন্ত্রী শেখ আহমেদ জাকি ইয়ামানির মেয়ে মেই ইয়ামানি
বাদশাহ ফয়সালের জ্বালানি তেলমন্ত্রী শেখ আহমেদ জাকি ইয়ামানির মেয়ে মেই ইয়ামানিছবি: মেই ইয়ামানি ডটকম ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
‘ফিলিস্তিনের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত’
আরব উপদ্বীপকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য লড়াই করেছিলেন বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সৌদ। ১৯৩২ সালে বাদশাহ হন তিনি। ১৯৫৩ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। এরপর ক্ষমতায় বসেন আবদুল আজিজের বড় ছেলে সৌদ বিন আবদুল আজিজ। তিনি দায়িত্ব পালন করেন ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত। বড় ভাইয়ের শাসনামলে সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ।
১৯৬৪ সালে বাদশাহ হন ফয়সাল। সৌদি আরব তখন মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে পশ্চাৎপদ এক দেশ, যদিও আকারে প্রায় ইউরোপের সমান। ফলে ক্ষমতায় বসে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার বিরাট এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন ফয়সাল। সেই চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে দেশের আধুনিকায়নের জন্য সৌদি আরবের সদ্য পাওয়া বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেলসম্পদ ব্যবহারের উদ্যোগ নেন তিনি।
বাদশাহ ফয়সাল একজন বিচক্ষণ রাজনীতিক ও ধার্মিক মানুষ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আধুনিক বিচারব্যবস্থা প্রবর্তনের কাজে হাত লাগান তিনি। তাঁর আমলে ষাটের দশকে সৌদি আরবে প্রথম টেলিভিশন স্টেশন চালু করা হয়। মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর উদ্যোগও নেন। সে সময় সৌদি আরবে বহুবিবাহের প্রচলন থাকলেও ফয়সালের একসঙ্গে একটির বেশি স্ত্রী ছিল না।
বিবিসিকে দেওয়া মেই ইয়ামানির সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে বাদশাহ ফয়সালের শিক্ষা সংস্কারের কথা। ফয়সালের স্ত্রী রানি এরফাদ মেয়েদের জন্য স্কুলশিক্ষা চালু করেন। বাদশাহ সৌদি আরবের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে পেরেছিলেন যে শিক্ষার মাধ্যমে নারীদের ভালো মায়ে পরিণত করতে হবে। রানি এরফাদের স্কুলের প্রথম ৯ মেয়েশিক্ষার্থীর একজন ছিলেন মেই ইয়ামানি।
বাদশাহ ফয়সালের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ ছিল সৌদি আরবের জ্বালানি তেল নীতি। এ নীতির মাধ্যমে নিজেদের তেলসম্পদের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ পায় সৌদি আরব। ফলে আরব বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায় দেশটি।
বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ
বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজফাইল ছবি: বাদশাহ ফয়সাল ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় এই তেলসম্পদকে প্রথম রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সৌদি আরব। ইসরায়েলের সমর্থনকারী পশ্চিমা দেশগুলোতে তেল রপ্তানি বন্ধের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় দেশটি। ফলে বিশ্বে রাতারাতি তেলের দাম বহুগুণ বেড়ে যায়।
বাদশাহ ফয়সালের তেলমন্ত্রী শেখ ইয়ামানি তখন পশ্চিমা গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ইসরায়েল সব আরব এলাকা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার না করলে তেলের সরবরাহ বাড়ানো হবে না। এ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে দারুণ শোরগোল পড়েছিল। ওই ঘটনার পর প্রভাবশালী টাইম সাময়িকী ১৯৭৪ সালে বাদশাহ ফয়সালকে বছরের আলোচিত ব্যক্তিত্ব ঘোষণা করে।
বাদশাহ ফয়সালের পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে সবচেয়ে অগ্রাধিকার পেয়েছিল ফিলিস্তিন। তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনের দুর্দশাপীড়িত মানুষের পক্ষে। ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। ১৯৬৫ সালে এক রেডিও সম্প্রচারে বাদশাহ ফয়সাল বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিন আমাদের কাছে তেলের চেয়ে দামি। প্রয়োজন পড়লে যুদ্ধের একটি অস্ত্র হিসেবে তেলকে ব্যবহার করা যাবে। ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই তাদের জন্মভূমিতে ফিরিয়ে নিতে হবে, এ জন্য আমাদের সবার জীবন দিতে হলেও।’
Sharing is caring!