প্রজন্ম ডেস্ক:
বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পুনর্বাসন ও ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিশ্বব্যাপী সাম্প্রদায়িক সরকার হিসেবে চিত্রিত করার ভয়ঙ্কর এজেন্ডা নিয়েই মাঠে নেমেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইসকন। ভারত ও পতিত স্বৈরাচারের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে কিভাবে সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল তা ক্রমেই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। গোয়েন্দা তথ্যেও মিলেছে বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নানা যোগসূত্র। যা স্বীকার করে উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও।
মঙ্গলবার সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের মুক্তিকে কেন্দ্র করে ইসকন সন্ত্রাসীরা ঘোষণা দিয়ে আদালত পাড়ায় প্রাণঘাতি তাণ্ডব চালায়। অন্যদিকে, এটা নিয়ে দেশীয় ফ্যাসিস্ট গণমাধ্যম ও ভারতীয় মিডিয়ায় একই সুরে মিথ্যাচার করে। চিন্ময়ের মুক্তির দাবি ও বাংলাদেশে ভুয়া হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে দ্রুতই উদ্বেগ জানায় নয়া দিল্লি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়ে ভারতের দেওয়া পুরো বিবৃতিটিই ছিল মিথ্যা তথ্যে ভরা। পর্যবেক্ষকদের মতে এসব বিষয় খতিয়ে দেখলেই ষড়যন্ত্রের গভীরতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এদিকে, নানা অপকর্মে বিতর্কিত ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আটক চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের মুক্তি চেয়ে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতেই ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতারা। এ সময় তারা দাবি করেন, আদালতের আইনজীবীকে হিন্দু ভেবে হত্যা করা হয়েছে, এ ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ জড়িত নন।’
ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের এই বক্তব্য ভুলভাবে প্রচার করে ফ্যাসিস্ট মিডিয়া। কৌশলে উস্কানি দেওয়া হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার লাগামহীন মিথ্যাচার দেখলে খুব সহজেই বোঝা যাবে এই অস্থিতিশীলতা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে আরও আগ থেকেই।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে আদালত চত্বরে চিন্ময় অনুসারীদের হাতে খুন হওয়া সহকারী সরকারি কৌঁসুলি সাইফুল ইসলাম আলিফকে নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিতভাবে ইসকনপন্থী একজন সাংবাদিক ভুল তথ্য সরবরাহ করে বলে অভিযোগ। প্রচারিত এই খবরের প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
সিএমপি জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো ধরণের কথা না বলেই রয়টার্স প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যে পুলিশ কর্মকর্তার নাম প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে, তার সঙ্গে রয়টার্সের প্রতিবেদক যোগাযোগ করেননি। কিন্তু তার নাম ব্যবহার করে বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর হয়ে আইনি লড়াই করছিলেন মুসলিম আইনজীবী সাইফুল ইসলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভারতীয় হলুদ মিডিয়াগুলোতেও এই ভুল তথ্য দিয়ে ঢালাওভাবে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। যদিও রয়টার্স পরবর্তীতে তাদের সংবাদ সংশোধন করেছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে এই ধরনের মিথ্যা তথ্য প্রচারকে যথেষ্ট বলে মনে করেন সচেতন মহল।
চট্টগ্রাম আদালতে নির্মমভাবে খুন হওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী বলে দাবি করে কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম অপপ্রচারে উদ্বেগ জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
এদিকে উগ্রবাদী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন ও ভারতের কথিত হিন্দু নির্যাতন নিয়ে মায়া কান্নার মুখোশ উম্মোচন করে সমালোচনা করেছেন নেটিজেনরা। তারা বলেন, নিপুন রায়, গয়েশ্বর রায়কে যখন মারতো এবং গ্রেফতার করে নিয়ে যেত তখন তো হিন্দুরা চুপ ছিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে দেশ ছাড়া করলো তখন কেন হিন্দুদের নিয়ে মায়া কান্না দেখানো ইসকন মুখ খোলেনি, প্রতিবাদ করেনি? তাহলে এখন এসব কি হচ্ছে?
সমালোচকরা আরো বলছেন, বিশ্বজিৎ এর কথা বাদ দিলাম, এই তো কয়দিন আগে সীমান্তে দুইজন হিন্দুকে যখন ভারতীয় বিএসএফ গুলি করে মারলো সেই সময়ে তারা কোন প্রতিবাদ মিছিল করলো না কেন?? তাহলে তাদের মুল উদ্দেশ্য কি?? আমার তো মনে হয় এরা নিজেরাও ধ্বংস হবে অন্যান্য সাধারণ হিন্দু ভাইদেরকেও ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাবে।
গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান তার অনুসারীরা। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ইসকন সন্ত্রাসীরা আদালত ভবনের নীচ থেকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে তুলে নিয়ে রঙ্গম কনভেনশন হলের পেছনে নিয়ে যায়। সেখানে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে ফেলে চলে যায়।
এই হত্যার ভিডিও ফুটেজ সামাজিকমাধ্যম মুহুর্তে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, একদল উগ্রবাদী বিক্ষোভকারীদের হামলায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন আইনজীবী আলিফ। তার ঘাড় এবং মাথা থেকে ক্রমাগত রক্ত ঝরছে। কিন্তু এরপরও তার ওপর নির্মম হামলা চালিয়ে যান চিন্ময় দাসের অনুসারীরা।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা দিল্লিতে পালিয়ে যাওয়ার পর সেই ভারত ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের মেতে উঠেছে। একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে, আন্দোলনের কার্ড ছুঁড়ছে এবং বিপুল অর্থ ব্যয়ে ঢাকায় দালালচক্র সৃষ্টি করেছে। এই চক্র কখনো সম্মিলিত ভাবে কখনো বিক্ষিপ্ত ভাবে নানান মোড়কে বাংলাদেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।
সর্বশেষ হিন্দু উগ্রবাদী সংগঠন ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে চাপে ফেলে প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখছে পতিত স্বৈরাচার। ফ্যাসিস্ট ও খুনি হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এই ইসকন নেতা বিভিন্ন ষড়যন্ত করে যাচ্ছে। যা ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। কিছুদিন আগেও চট্টগ্রামে বিশৃঙ্খলা ও রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডের পেছনে তার ইন্ধন রয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়।
Sharing is caring!