প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বিপদগ্রস্ত রাজনীতিকরাই

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ৮, ২০২৪, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ণ
বিপদগ্রস্ত রাজনীতিকরাই

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিভেদের বিষয়টি দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে আলোচনায় আছে। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই আলোচনা আরও ব্যাপকতা পেয়েছে। বলা হচ্ছে, ১৭ বছর ধরে বিপদে ছিল এবং চরম কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ তাদের মিত্ররা। আর এখন বিপদে পড়েছে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগসহ দলটির মিত্ররা। অবশ্য ২০০৭ সালে এক-এগারোর পর বড় দুই দলের নেতা-কর্মীরাই বিপদে পড়েছিলেন। তবে ওই ঘটনা থেকে কেউ শিক্ষা নেননি বলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে।

তবে বিভেদের রাজনীতি যে দেশ ও সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেটি কিছুদিন আগেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে আলোচনায় ছিল। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো রওনক জাহান গত ফেব্রুয়ারিতে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, আইনের শাসন ক্রমাগত দুর্বল হচ্ছে। সমাজ ও রাজনীতিতে বিভাজন বেড়ে চলেছে। মুষ্টিমেয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সরকারের নীতিনির্ধারণ ও প্রয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর অশুভ প্রভাব বিস্তার করছে। এসব সমস্যার সমাধান করা সরকারের সামনে বিরাট রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।’

পর্যবেক্ষকদের মতে, ১৯৯১ সাল থেকে গত ৩৩ বছরে বড় দুটি রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে বিরোধে মোটাদাগে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের হামলা-মামলা, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকারও হয়েছেন তারাই। প্রশাসনে বা পেশাজীবীদের মধ্যে কেউ কেউ বিপদগ্রস্ত হলেও তাদের সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে এ বিষয়ে দলগুলোর কোনো আত্মোপলব্ধি হয়নি। আত্মোপলব্ধি ঘটে কেবল ক্ষমতা হারিয়ে বিপদে পড়লে।

 

শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে দলটির মাঠপর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হলে দলটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। এর আগে এক-এগারোর পর উদ্ভূত পরিস্থিতি, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং সর্বশেষ গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংস ঘটনার পরও বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওই ঘটনায় ২৫ হাজারের বেশি বিএনপির নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করার পর দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়েছিল। আত্মগোপনে ছিল জামায়াতসহ বিএনপির মিত্র দলগুলোও। ৫ আগস্টের পর দলগুলোর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। অনেকের মতে, ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে বিএনপির।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দলটির সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা হচ্ছে। এর আগে গত ১৫ বছরে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল লাখ লাখ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ দলটির অনেক নেতাকে সাজাও দেওয়া হয়েছে। এক-এগারোর পর বড় দুটি দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের এবং তারেক রহমানকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। ক্ষমতায় যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের মামলা প্রত্যাহার করা হলেও বিএনপির মামলাগুলো সচল রাখা হয়। ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতি মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য সরকারের ইঙ্গিতে ওই সাজা দেওয়া হয়েছিল বলে দেশের রাজনীতিতে আলোচনা আছে।

পরিস্থিতি এক-এগারোর তুলনায় এখন আরও বেশি কঠিন হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কে দেবেন, তা নিয়ে ইতোমধ্যে জনগণের মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকের মতে, বিপদগ্রস্ত হওয়ায় আত্মোপলব্ধি থেকে আওয়ামী লীগ এখন ‘রিকনসিলিয়েশন’ বা রাজনৈতিক মীমাংসা চাইছে। গত ১০ আগস্ট রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির সঙ্গে যাবতীয় দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয় বিএনপির উদ্দেশে বলেছেন, আসুন আমরা অতীতকে ভুলে সামনের দিকে অগ্রসর হই, প্রতিশোধের রাজনীতিকে প্রশ্রয় না দিই।

১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আট দল, বিএনপির নেতৃত্বে সাত দল এবং বামপন্থিদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ দল মিলে এরশাদ-পরবর্তী সরকারব্যবস্থা কী হবে তার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছিল।

অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, তিন জোটের রূপরেখায় বর্ণিত অঙ্গীকারগুলো রক্ষা করলে দেশে বিভেদের রাজনীতি এড়ানো যেত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, কোনো অঙ্গীকারই পরবর্তী সরকারগুলোর সময় রক্ষা করা হয়নি। এ কারণে জনমনেও সে বিষয়টি ঢাকা পড়ে গেছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের মতে, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বন্দ্বে তিন জোটের রূপরেখা হারিয়ে গেছে।’

১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর ওই তিনটি জোট আলাদা সমাবেশে সেই রূপরেখা তুলে ধরে। এরপর ৬ ডিসেম্বর এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। তিন জোটের বাইরে জামায়াত তখন যুগপৎ আন্দোলনে শামিল ছিল।

রূপরেখার প্রধান দিক ছিল মৌলবাদ ও স্বৈরাচার যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে প্রত্যয়। ছিল নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার। ওই রূপরেখাকে কেউ কেউ জাতীয় সনদ বলেও তখন উল্লেখ করেছিলেন।

রূপরেখায় জাতীয় সংসদের অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে ভোটারদের ইচ্ছামতো ভোট দেওয়ার বিধান নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় দেশে আবার গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আওয়ামী লীগ আমলে পরপর তিনটি নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেছেন, ‘বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা এবং আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি নেতাদের গুম হওয়ার ঘটনাকে মানুষ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেই মনে করেন।’

তিন জোটের রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত অঙ্গীকারনামার তিন নম্বর ধারায় বলা হয়েছিল, ‘আমাদের তিনটি জোটভুক্ত দলসমূহ ব্যক্তিগত কুৎসা রটনা এবং অপর দলের দেশপ্রেম ও ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে কটাক্ষ করা থেকে বিরত থাকবে। আমাদের জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলসমূহ সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেবে না। এবং সাম্প্রদায়িক প্রচারণা সমবেতভাবে প্রতিরোধ করবে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক ভালো সম্পর্ক থাকলে সংঘাতের রাজনীতি থাকত না। ১৯৯১ সালের পর কে কীভাবে ক্ষমতায় যাবে, দলগুলো এ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তাদের মধ্যে সংঘাত বেড়ে যায়।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতেও ‘রিকনসিলিয়েশন’ বা রাজনীতিতে মীমাংসা করার আলোচনা বহুবার সামনে এসেছে। ফলে আজকের এই পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো বা এমন পরিস্থিতি এড়ানো যেত কি না, সে আলোচনা এখন আওয়ামী লীগের মধ্যেই বেশি হচ্ছে। অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, বড় দুটি রাজনৈতিক দল বা শক্তির মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ থেকেই সমাজে আজকে বিভেদ চরম আকার ধারণ করেছে।

একই সমাজ ও রাষ্ট্রে যখন ক্ষমতার স্বার্থে দ্বন্দ্ব-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ ও অনৈক্য-অরাজকতা লালন করা হয় তখন সেটিই বিভাজনের রাজনীতি। কিন্তু বাংলাদেশের মতো জাতীয়তাবাদের নিরিখে একটি বা সমগোত্রীয় (হোমোজিনিয়াস) দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ ও অনৈক্য-অরাজকতার কারণ মূলত ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার অনৈতিক মানসিকতা থেকেই উদ্ভূত।

অনৈতিক রাজনীতির প্রবক্তা নিকোলো ম্যাকিয়াভ্যালি তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য প্রিন্স’-এ বৈদেশিক শক্তি ও সমভাবে অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের ক্ষেত্রে বিভাজনের রাজনীতিকে সিদ্ধ মনে করেছেন। তার মতে, যুদ্ধজয়ে কূটকৌশল ও বিভাজন নীতি অন্যায় নয়। তিনি শাসককে কুবুদ্ধি দেন যে, বিরোধী শক্তি সম্পর্কে সন্দেহপরায়ণতা ও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ তৈরি করতে পারলে শাসক সফল হতে পারেন। এভাবে রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর মধ্যে শত্রুতার সম্পর্ক তৈরি করতে পারলে তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা সহজতর হয়ে উঠবে। বিরোধী শক্তি ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও বিরোধী শক্তিগুলো ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে; এমন আলোচনা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত ছিল।

জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘পারপিচুয়াল পিস’ গ্রন্থে বিভাজনের রাজনীতির কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, বিভাজনের রাজনীতির প্রবক্তারা তাদের ক্ষমতা শক্তপোক্ত করার জন্য যা ইচ্ছা তাই করে। পরে এমন সব অজুহাত বানায় যাতে মনে হবে, বিষয়টি বাস্তব ছিল। তারা অন্যায় করে এবং সঙ্গে সঙ্গে তা অস্বীকার করে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে দেওয়া বিদায়ী ভাষণে বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আমার একটি বিশেষ আবেদন রইল। নতুন জাতীয় সংসদকে কেন্দ্র করে আপনারা এমন রাজনৈতিক রীতি-রেওয়াজ গড়ে তুলুন, যেন ভবিষ্যতে আর কোনো দিন রাজনৈতিক কোনো সমস্যা সমাধানে রাজপথের আশ্রয় নিতে না হয়। কিছুদিন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে যে সীমাহীন অসহিষ্ণুতা দেখেছি, ভবিষ্যতে যেন আর কাউকে অসহিষ্ণুতা ও রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখতে না হয়, তার প্রক্রিয়া সৃষ্টি করুন।’

তার এই ভাষণের কথা উল্লেখ করে ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’ গ্রন্থে অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্ব যে হাবিবুর রহমানের আহ্বানকে আমলে নেয়নি, পরবর্তী রাজনীতিই তার প্রমাণ। গত ২৭ বছরে রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ও অসহযোগিতা আরও বেড়েছে। আগে তারা সমস্যা সমাধানে লোকদেখানো হলেও কথাবার্তা বলতেন। এখন সেটিও নেই।’

যতদূর জানা যায়, বামপন্থি দু-একজন নেতা এবং সুধী সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে কেউ কেউ ক্ষমতায় থাকতে শেখ হাসিনাকে এ বিষয়টি বলারও চেষ্টা করেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেকবার তার বক্তব্যেও বিষয়টি সামনে এনেছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাই বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটতে রাজি হননি। সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরকালে মার্কিন প্রাক-পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকসহ গত ১৫ বছরে বিদেশিদের সঙ্গে সবগুলো বৈঠকে রাজনৈতিক মীমাংসার বিষয়টি আলোচনায় এলেও আওয়ামী লীগ তা নাকচ করে দিয়েছে। প্রতিবারই বলেছে, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বিএনপি অতীতে বহুবার বলেছে! আমরা দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ অব্যাহত রাখার পক্ষে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সমঝোতার বদলে বিএনপিসহ বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করেছে! গুম-খুন ও গণহত্যা করে তারা শেষ দিন পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টা করেছে! ফলে সবকিছুর আগে এখন এই গণহত্যার বিচার আগে হতে হবে!’

এদিকে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক মনে করেন, রাজনৈতিক মীমাংসা চাইতে হলে দুই দলকেই ছাড় দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটিই জাতীয়তাবাদী দল। বাঙালি ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। যদি এখনো দুটি দল সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি না করে তাহলে সাম্প্রদায়িক শক্তির উন্মাদনা বেড়ে যাবে।

তার মতে, এমন কতগুলো কাজ অতীতে হয়েছিল, সেগুলো ভুলে গিয়ে আমাদের আত্মোপলব্ধি হতে হবে। কারণ আমাদের জানার বাইরে রাজনীতিতে কতগুলো গুণগত পার্থক্য ঘটে গেছে। সবাই এখন রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান, সহমর্মিতা ও জাতীয় প্রশ্নে ঐকমত্য হওয়ার পক্ষে। আমাদের প্রতিবেশী দেশেও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়েই আমাদের সামনে এগোতে হবে। এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন হতে হবে। রাজনীতিকদের মানসিকতার পরিবর্তন হতে হবে।’

Sharing is caring!