প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দুই  গভর্নরে অর্থনীতির সর্বনাশ

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ৮, ২০২৪, ০৯:০৫ পূর্বাহ্ণ
দুই  গভর্নরে অর্থনীতির সর্বনাশ

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

দেশের অর্থনীতি কেমন হবে তা নির্ভর করে ব্যাংক খাতের ওপর। আবার পুরো ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলা হয় অর্থনীতির মূল ভিত্তি। এ কারণে দেশের অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের অবদান অনেক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকে চলতি গভর্নরসহ ১৩ জন দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও সমালোচিত সাবেক দুই গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও ফজলে কবির। যারা অর্থ সচিব থেকে গভর্নর হয়েছেন। তাদের সময়ে ব্যাংক খাতে বড় অনিয়ম হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, তাদের কারণেই ডুবতে বসেছে পুরো ব্যাংক খাত।

 

 

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর ব্যাংকে আসেননি তৎকালীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। পরে ৯ আগস্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন তিনি। পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ না পেলেও দুই বছরে দেশের ব্যাংক খাতকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেন তিনি। তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ব্যাংক খাতে যে পরিমাণ ক্ষত তৈরি হয়েছে, এমন ঘটনা অতীতে আর কখনো ঘটেনি। তিনি সব অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছিলেন। এর ফলস্বরূপ তিনিই একমাত্র গভর্নর, যিনি সরকার পরিবর্তনের পর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং পলাতক থেকেই পদত্যাগ করেছেন।

 

সচিব থেকে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার : গভর্নর নিযুক্তির আগে অর্থ সচিব ছিলেন আব্দুর রউফ তালুকদার। বিভিন্ন সময়ে শিল্প মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করলেও চাকরিজীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কাজ করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত আমলা হিসেবেও পরিচিতি ছিল তার। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন থাকার সুবাধে ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও গভীর সম্পর্ক ছিল আব্দুর রউফ তালুকদারের। তাই তাকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিতে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও সরকারের কাছে জোর তদবির করা হয়েছিল। মূলত ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত সুবিধা নিতেই তাকে গভর্নর হিসেবে চেয়েছিলেন। আর গভর্নর হওয়ার পর তিনি অকৃতজ্ঞ হননি। নিয়মনীতি সব বিসর্জন দিয়ে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিয়েছেন।

 

যোগদানের পরই খেলাপিদের বড় ছাড় : আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দিয়ে একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করেন। সার্কুলারে আড়াই থেকে সাড়ে চার শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দিয়েছিলেন। আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। আবার এসব ঋণ পরিশোধ করার সময় দিয়েছিলেন পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে। আগে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও ঋণ জালিয়াতির ঘটনা আব্দুর রউফ তালুকদারের নাম শোনা যায়। বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে কিছু ব্যবসায়ী ব্যাংক মালিক বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। তিনি ব্যবসায়ী এবং ব্যাংক মালিকদের নিয়ন্ত্রণ না করে উল্টো তাদের অনিয়ম-জালিয়াতিগুলোকে ঢেকে রাখার কাজে ব্যস্ত থাকতেন।

 

খেলাপি ঋণের রেকর্ড : বারবার পুনঃতফসিল করেও ঠেকানো যায়নি খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষেও দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি বছর মার্চে এসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। আবার জুন মাসে খেলাপি ঋণ ছাড়ায় ২ লাখ ১১ হাজার কোটি। আর পুনঃতফসিল, অবলোপন, বেনামি ঋণসহ ঝুঁকিতে রয়েছে এমন ঋণের পরিমাণ এখন ৬-৭ লাখ কোটি টাকা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

 

তলানিতে রিজার্ভ : দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে তলানিতে আসে আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়ে। তিনি যোগদানের সময় গ্রস রিজার্ভ ছিল ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। এরপর কমতে কমতে তা নেমে আসে ১৮ বিলিয়নের ঘরে। এর মধ্যে ব্যবহারযোগ্য বা নিট রিজার্ভ নামে ১৪ বিলিয়ন পর্যন্ত।

 

ব্যাংক পরিদর্শনে হস্তক্ষেপ : আগে কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের অভিযোগ উঠলেই ওই ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় পরিদর্শন করা হতো। অভিযোগের বিষয় তদন্ত হতো। আব্দুর রউফ তালুকদার আসার পর এগুলো খুব একটা করা হয়নি। ব্যাংক পরিদর্শনকালেও কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারতেন না। সেখানেও হস্তক্ষেপ করতেন তিনি। আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন কমে অর্ধেকে নামে।

 

 

এস আলম গ্রুপকে বিশেষ সুবিধা : আব্দুর রউফ তালুকদার সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হন এস আলম গ্রুপকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে। নামে-বেনামে এস আলম গ্রুপের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রদানে তিনি সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া অনিয়ম আর ঋণ জালিয়াতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়া এস আলমের ব্যাংকগুলোকে নগদ সহায়তা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমনকি এই গ্রুপের সাতটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলতি হিসাবে ঋণাত্মক রেখেও বিনা বাধায় লেনদেন করত।

 

অনিয়ম ঢাকতে সাংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা : ব্যাংক খাতের অনিয়ম ঢাকতে সাংবাদিকদের ওপর নিষেধজ্ঞা দিয়েছিলেন আব্দুর রউফ তালুকদার। চলতি বছর এপ্রিল মাসে হঠাৎই বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দেন গভর্নর। তখন সাংবাদিকদের ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশের অস্থায়ী পাস ইস্যু বন্ধ রাখা হয়। তবে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার আবার স্বাভাবিক হয়।

 

‘ডি’ গ্রেড গভর্নর : মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা রক্ষা করা বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর গভর্নরদের রেটিং করছে গ্লোবাল ফাইন্যান্স। যার সর্বনিম্ন মান ‘ডি’। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের র‌্যাংকিংয়ে গভর্নর হিসেবে ‘ডি’ গ্রেড পান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। যেখানে ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের গভর্নরও থাকে বাংলাদেশের ওপর।

 

বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক খাত সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অসৎ আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়ার কারণে ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। একদিকে পক্ষপাত করে বিভিন্ন গ্রুপ প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যারা অসদাচরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে তো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি যেটা দেখে অন্যরা উৎসাহিত হয়েছে, যা একটা ছোঁয়াচে রোগে পরিণত হয়েছে। যারা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে বিভিন্ন অনিয়ম প্রশ্রয় দিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। তাদের সহমত ছাড়া ব্যাংক খাতে এত অনিয়ম করার কেউ সাহস পেত না। গভর্নর-ডেপুটি গভর্নর পর্যায়ে যারা অনিয়ম উৎসাহিত করেছে, যদিও তারা কোনো প্রমাণ রাখেনি। তারা তো ফাইলের ওপর নোট লিখে দেয়নি। মুখের কথায় অনেক কিছুই করেছে। কাজেই এসব তদন্ত করে বের করতে হবে।

 

 

গভর্নর ফজলে কবির

 

গভর্নরদের মধ্যে ‘আজ্ঞাবহ’ গভর্নর হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ১১তম গভর্নর ফজলে কবির। ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও প্রভাবশালীদের সুযোগ-সুবিধা দিতে কাউকে অখুশি করতেন না। গভর্নরদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দেশের ইতিহাসে আইন পরিবর্তন করে দ্বিতীয় মেয়াদে নিযুক্ত করা হয় তাকে। এর আগে অর্থ সচিব ও রেলপথ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফজলে কবির গভর্নরের দায়িত্বে থাকাকালে সরকারের কোনো সিদ্ধান্তেই আপত্তি জানাননি। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা, ঋণখেলাপিদের জন্য বিশেষ সুবিধা, নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, ব্যাংক পরিচালকদের জন্য আইন পরিবর্তন, সুদহার ৯ শতাংশ করা কোনো ক্ষেত্রেই প্রশ্ন তোলেননি তিনি। অর্থাৎ তিনি যা করেছেন সবই ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ছিল প্রভাবশালীদের চাপও। এসব কারণে বেশ সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে।

 

সব থেকে বেশি মেয়াদের গভর্নর : ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বা রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তখনকার গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। কোনো আলোচনা ছাড়াই এর পরদিন অর্থাৎ ১৬ মার্চ সাবেক অর্থ সচিব ফজলে কবিরকে চার বছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের ১১তম গভর্নর হিসেবে যোগ দেন ফজলে কবির। সেই হিসাবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৯ মার্চ। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৪ দিন আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিন বাড়িয়ে দেয় সরকার, যা ওই বছরের ৩ জুলাই শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৬৫ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ফজলে কবির গভর্নর থাকবেন। পরে গভর্নর পদের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ৬৭ বছর করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন সংশোধন করা হয়। ফলে ফজলে কবিরের মেয়াদ ২০২২ সালের ৩ জুলাই পর্যন্ত বেড়ে যায়।

 

লাখ কোটি ছাড়ায় খেলাপি ঋণ : গভর্নর ফজলে কবিরের সময়ই প্রথম লাখ কোটি টাকা ছাড়ায় খেলাপি ঋণ। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে তিনি যখন যোগ দেন তখন দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। যোগদানের ঠিক তিন মাসের মাথায় খেলাপি ঋণ প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে খেলাপি ঋণ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে তা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকায়। বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে ২০২১ সালের তা বেড়ে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকায় ঠেকে। গভর্নরের বিদায় বেলায় তার রেখে যাওয়া সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।

 

চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে অগ্রগতি ছিল না : বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সহযোগিতায় মাত্র দেড় কোটি ডলার উদ্ধারে সামর্থ্য হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর ফজলে কবিরকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে ছয় বছরের বেশি সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বে থাকলেও রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনতে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি তাকে।

 

শক্তি হারায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক : ফজলে কবিরের বিরুদ্ধে বড় সমালোচনা, তার সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার নীতি গ্রহণ ও নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্বল হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনেক ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করতে হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব কাজ করেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল চাপিয়ে দেওয়া সুদহার বাস্তবায়ন, নীতিনির্ধারণী সুদহার পরিবর্তন এবং শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিশেষ তহবিল থেকে সুকুক বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান।

 

জোরপূর্বক ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন : দেশের বৃহৎ ব্যাংক হিসেবে সুখ্যাতি ছিল ইসলামী ব্যাংকের। গভর্নর ফজলে কবিরের সময়ে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন হয়। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভীর রাতে অনুমোদন দেয় বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া সরকার-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও একাধিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফজলে কবিরের সময়ে আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দখলের পর থেকে পতন শুরু হয় ইসলামী ব্যাংকের। ইসলামী ব্যাংক এখন দুর্বল ব্যাংকগুলোর একটি। যেই ব্যাংক একসময় বিভিন্ন ব্যাংককে তারল্য সহযোগিতা করত। আজ ইসলামী ব্যাংক নিজেই চরম সংকটের মধ্যে।

Sharing is caring!