প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৯শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

পাঁচ লাখের বেশিই থাকছে হজের খরচ

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ০৯:৫১ পূর্বাহ্ণ
পাঁচ লাখের বেশিই থাকছে হজের খরচ

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন দায়িত্ব নেওয়ার পর হজের খরচ কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করার ঘোষণা দিলেও ২০২৫ সালের হজের খরচ পাঁচ লাখ টাকার ওপরেই থাকছে। হজ প্যাকেজের ঘোষণা আগামী বুধ বা বৃহস্পতিবার হতে পারে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। অন্যদিকে প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হলেও এখনো হজের প্যাকেজ ঘোষণা না হওয়ায় হজ করতে ইচ্ছুকরা আছেন ধোঁয়াশায়। ফলে নিবন্ধনের গতিও কম। তবে হজের সময় মিনায় বিশ্রামের ভালো জায়গা পেতে আগেই হজযাত্রীদের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে বলছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

 

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১ জুন পবিত্র হজ পালিত হওয়ার কথা। বাংলাদেশ থেকে আগামী হজে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। ২০২৫ সালের হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয় ১ সেপ্টেম্বর। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমের প্রাক-নিবন্ধন ফি ৩০ হাজার টাকা। যেকোনো সময় হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা এটি করতে পারেন। এ টাকা ফেরতযোগ্য। আর আগের বা নতুন প্রাক-নিবন্ধিত যেকোনো ব্যক্তি তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে পারবেন। প্রাথমিক নিবন্ধনের এই টাকা ফেরতযোগ্য নয়। তবে হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যদি মারা যান অথবা গুরুতর অসুস্থ থাকেন তবে এই টাকায় অন্য কেউ বদলি হজ করতে পারেন। সরকারি-বেসরকারি দুই মাধ্যমেই এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রাথমিক নিবন্ধনের সময় পরে আর বাড়ানো হবে না বলেও জানানো হয়েছে।

এদিকে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরুর দেড় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৭৮৯ জন। যার মধ্যে সরকারি ২ হাজার ৮১৩ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৮ হাজার ৯৭৬ জন। এ ছাড়া প্রাথমিক ও চূড়ান্ত নিবন্ধিতের সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৪৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ হাজার ১৭৬ জন ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ হাজার ২৭০ জনে। কারণ হিসেবে হজ ব্যবস্থাপনার এজেন্সিগুলো বলছে, প্যাকেজ মূল্য ঘোষণা না করায় আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

 

এ বিষয়ে আল-কাবা ইন্টারন্যশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান এইচ এম বরকতুল্লা বলেন, “হজযাত্রীরা প্যাকেজের দিকে তাকিয়ে আছেন। হজযাত্রীরা বলছেন, ‘আগে আমরা দেখি কত টাকার প্যাকেজ ঘোষণা হয়। তারপর আমরা প্রাথমিক নিবন্ধন করব। না হলে তিন লাখ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করলাম। আর পরে বাকি টাকা জোগাড় করতে পারলাম না, তখন এই তিন লাখ টাকা তো ফেরত পাওয়া যাবে না।’ এ কারণেই আমরা হজযাত্রী জোগাড় করতে পারছি না। ফলে প্রাথমিক নিবন্ধনও হচ্ছে না।”

অন্যদিকে প্রাথমিক নিবন্ধনের টাকা কমানোর দাবি জানিয়েছে আল কুতুব হজ ট্রাভেলসের কর্ণধার মো. কুতুব উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘তিন লাখ টাকা যে সরকার চাচ্ছে, এটার একটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। কারণ আমাদের কাছে হাজিরা জানতে চান এত টাকা প্রাথমিক নিবন্ধনে কেন নেওয়া হচ্ছে। একদিকে আমরা আমাদের প্যাকেজে কী থাকছে, প্যাকেজ কোন ধরনের হচ্ছে, কত টাকার হচ্ছে তার কিছুই বলতে পারছি না। অন্যদিকে তার কাছে তিন লাখ টাকা চাচ্ছি এটা কোনো যুক্তিতেই তারা মানেন না। ফলে প্যাকেজ ঘোষণার আগ পর্যন্ত আমরা হাজিদের নিবন্ধনে আগ্রহী করতে পারছি না।’ এ জন্য দ্রুত হজ প্যাকেজ ঘোষণা করার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগের বছরগুলোতে দেখেছি অনেকেই নিবন্ধন করে পরে বাকি টাকা জোগাড় করতে পারেন না। তাই এবার বিমান ভাড়াসহ কিছু খরচ যা আমাদের মাথাপিছু দিতেই হয়, সেই টাকা হিসাবে এই তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ হজ প্যাকেজের খরচ গতবারের তুলনায় কিছুটা হয়তো কমবে; কিন্তু তাকে তো তিন লাখ টাকার বেশিই দেওয়া লাগবে পুরো প্যাকেজের খরচ হিসাবে। তাই আমরা প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করেছি। আর হজ প্যাকেজ মূল্যের অবশিষ্ট টাকা প্যাকেজে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ বছরের হজ প্যাকেজ মূল্য সৌদি পর্বের ব্যয় ও বিমান ভাড়া নির্ধারণ সাপেক্ষে ঘোষণা করা হবে। আগামী ২৩ অক্টোবর সৌদি পর্বের ওই খরচের বিষয়টি জানা যাবে। এর পরই আমরা আমাদের প্যাকেজ ঘোষণা করব।’

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন হজের খরচ কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করার ঘোষণা দিলে অনেক এজেন্সি ও হজযাত্রী ভেবেছিলেন এবারের খরচ হয়তো গতবারের তুলনায় অনেকটাই কমে আসবে। কিন্তু ২০২৫ সালের হজের খরচ পাঁচ লাখের ওপরেই থাকছে বলে খবরের কাগজকে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘বিমান ভাড়া ও সৌদি পর্বের যে খরচ সেগুলো মিলিয়ে হজ প্যাকেজের মূল্য খুব বেশি কমানোর সুযোগ নেই। কিছুটা কমালেও তা পাঁচ লাখের কম হবে না। আগামী ২৩ অক্টোবর সৌদির খরচ জানা সাপেক্ষে ওই দিন বা পর দিন আমাদের প্যাকেজ ঘোষণা হতে পারে।’

অন্যদিকে আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া দিন দিন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের কাছে এক লিখিত আবেদনে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া জনপ্রতি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণের জোর দাবি জানিয়েছেন। এতে তিনি হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে থার্ড ক্যারিয়ার চালু করারও দাবি জানান।

আটাব সভাপতি বলেন, ‘হজ করতে হাজিদের খরচ যেন একটু কমে আসে সে জন্য আমরা এ আবেদন করেছি। কারণ প্রতিবছরই এই খরচ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে হজ টিকিটের বিমান ভাড়া অনেক বেশি। দুই-তিনটি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে সব হজযাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করায় হজ প্যাকেজের মেয়াদ দীর্ঘ হয় ও ভাড়া বেড়ে যায়। মাত্রাতিরিক্ত বিমান ভাড়ার কারণে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নির্ধারিত হজ প্যাকেজ মূল্য প্রতিবছরই বাড়ে। ফলে সাধারণ হজযাত্রীরা আর্থিক চাপের মুখে পড়ছেন। অনেকে হজে যাওয়ার সক্ষমতা হারাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘হজযাত্রীদের পরিবহন ও সেবা প্রদানের জন্য দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের অংশগ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা যেতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশে হজযাত্রীদের পরিবহন ও সেবা প্রদানে এই প্রচলন রয়েছে। এর ফলে দেশীয় এয়ারলাইনসের পাশাপাশি বহুজাতিক এয়ারলাইনসগুলোর অংশগ্রহণমূলক প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং হজযাত্রী পরিবহন ব্যয়ের তুলনামূলক মূল্য নির্ধারণ ও মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা সহজ হবে বলে আমরা মনে করি।’

হজ প্যাকেজের মূল্য নিয়ে চলা দোটানার মাঝেই অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, আগামী ২৩ অক্টোবর থেকে মিনা-আরাফার তাঁবু ভাড়া নির্ধারণ ও সৌদি সার্ভিস কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন কার্যক্রম শুরু হবে। আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে মিনা-আরাফার তাঁবু বরাদ্দ দেওয়া হবে। আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে হজযাত্রী নিবন্ধন সম্পন্ন না হলে মিনা-আরাফাহ ময়দানে কাঙ্ক্ষিত জোনে তাঁবু বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। তাঁবু গ্রহণ ও সার্ভিস কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনে দেরি হলে মিনা থেকে অনেক দূরের তাঁবুতে অবস্থান করতে হবে। অনেক সময় এটি নিউ মিনায়ও চলে যায়, যা মিনা থেকে অনেকটা দূরে। ফলে হজযাত্রীদের প্রখর রোদ ও গরমের মধ্যে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হবে। সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ৩ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে হজযাত্রীদের প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করার অনুরোধ জানান এই অতিরিক্ত সচিব।

Sharing is caring!