স্টাফ রিপোর্টার:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই ও আগস্টে গণহত্যার অভিযোগে বিচার শুরুর প্রথম দিনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনাকে আগামী এক মাসের মধ্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত বাকিদের বিরুদ্ধে শুনানি চলছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় দিকে এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের সূচনা বক্তব্যে বিডিআর বিদ্রোহে ৭৪ জনকে হত্যা, শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে হত্যা, র্যাবের বিচার বহির্ভূত হত্যা, জুলাই-আগস্ট গণহত্যাসহ আওয়ামী শাসনামলে মানবতাবিরোধী অপরাধের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
প্রথম দিনেই প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালসহ হেভিওয়েটদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথম কর্মদিবসে পূর্বনির্ধারিত কোনো কার্যতালিকা নেই। তবে আজ সকালে বিচারকাজ শুরুর আগেই দিনের কার্যতালিকা তৈরি করা হবে। বিচারাধীন ৩০টি মামলার মধ্যে কয়েকটি মামলা কার্যতালিকায় আসতে পারে। এর বাইরে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় গত ১৪ ও ২৯ আগস্ট দাখিল করা দুটি অভিযোগ কার্যতালিকায় থাকতে পারে। এ দুটি অভিযোগে আসামির তালিকায় শেখ হাসিনাসহ মোট ৬১ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। একটিতে ৯ জন, অন্যটিতে ৫২ জনের নাম রয়েছে।
আসামির তালিকায় অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী মো. আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক মেয়র (ডিএনসিসি) আতিকুল ইসলাম, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ আলী আরাফাত, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি ডিবির সাবেক কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ। আসামির তালিকায় কয়েকজন সাংবাদিকের নামও রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে আগে থেকেই কেউ কারাবন্দি থাকলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো (শ্যোন অ্যারেস্ট) হবে। যারা ইতোমধ্যে আত্মগোপনে আছেন পরোয়ানা জারি হলে তাদের গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তারের স্বার্থে সংশ্লিষ্টদের নাম প্রকাশ নাও করা হতে পারে।
এদিকে বুধবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার এবং অন্য দুই সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীকে সংবর্ধনা দেয় অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারকের জীবনীর ওপর আলোকপাত করেন এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা জানিয়ে সংবর্ধনা দেন। পরে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
নিয়োগ পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার দুপুরে ট্রাইব্যুনালে আসেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনে তিন বিচারক নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালের ২৫ মার্চ। সে সময় মামলার তদন্ত ও বিচারকাজে ব্যাপক তৎপরতা দেখা যায়। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনাও হয়। বিচারকাজ ত্বরান্বিত করতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুটিকে একীভূত করে আবার একটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়। এ সময়ের মধ্যে অনেক আলোচিত মামলার রায় দেওয়া এবং কার্যকর করা হয়। গত ১৪ বছরে ৫৫টি মামলার রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এসব মামলায় ১৪৯ জনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে ছয়জনের।
এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা পাঁচজন এবং একজন বিএনপির নেতা। ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে স্থবিরতা তৈরি হয় গত বছরেই। সর্বশেষ চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি শেরপুরের নকলার তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। সেই সময়ে ট্রাইব্যুনালে ৩০টি মামলার বিচার চলছিল। এরপর আর কোনো মামলার বিচারকাজ পরিচালনা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের আগে ও পরে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারকের মধ্যে একজন অবসরে যান। আরেকজনকে হাইকোর্টে ফিরিয়ে আনা হয় এবং সর্বশেষ ২৭ আগস্ট বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ-পিআরএল ভোগরত) এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া অব্যাহতি নিলে বিচারকাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com