প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৩০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৩০শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

ভারসাম্য কূটনীতিতে ফিরছে সরকার

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৮, ২০২৫, ১১:১১ পূর্বাহ্ণ
ভারসাম্য কূটনীতিতে ফিরছে সরকার

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপক টানাপোড়েন দেখা দেয়। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য চাইছে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে। দিল্লি অভিযোগ করেছে, ঢাকায় সরকারের ভেতর থেকে ভারতবিরোধী কথাবার্তা আসছে।

 

আবার ঢাকা অভিযোগ করেছে, ভারতের ভেতরে বাংলাদেশবিরোধী নানা অপপ্রচার চলছে এবং দেশটি সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। তাই সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এখনো সম্ভব হয়নি। তবে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কোন্নয়নে সম্প্রতি দু-পক্ষই আর উত্তেজনা না বাড়িয়ে সংযম রক্ষার পথেই এগোচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

 

অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য বা বিনিয়োগে সেভাবে সমর্থন পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিকল্প চীন। তবে পশ্চিমা দেশগুলোকে সন্তুষ্ট রাখতে গিয়ে চীনের প্রতি আগ্রহের বিষয়গুলোতে সেভাবে নজর দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না ঢাকার।

 

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার গত ৬ মাসে যেভাবে বৈদেশিক সহায়তার প্রত্যাশা করেছিল, কার্যত তা আসেনি। ফলে ভারত, পশ্চিমা বিশ্ব ও চীনের সঙ্গে বর্তমান সরকারের রসায়নটা ঠিকভাবে কার্যকর হয়নি। অবশেষে চীনের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাম্প্রতিক বেইজিং সফরের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা করছে সরকার। বেইজিং সফরে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রতিবন্ধকতা কাটানোর চেষ্টাও করেছে ঢাকা। সেখানেও ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বের কথা বিবেচনায় নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলে।

 

বিশ্লেষকদের মতে, চীন বাংলাদেশের অনেক বড় উন্নয়ন সহযোগী প্রতিবেশী দেশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে চীনের অনেক অর্থায়ন রয়েছে। বাংলাদেশে চীনের বড় বিনিয়োগের ইচ্ছা থাকলেও গত সরকারের আমলে একটি প্রতিবেশী দেশের আপত্তিতে অনেক প্রকল্পে সম্মতি দিতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার। যেমন- বাংলাদেশের আগ্রহে সমন্বিত তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নে রাজি হয়েছিল চীন সরকার। এই প্রকল্পে নানা ধরনের সমীক্ষার কাজও সম্পন্ন করেছিল দেশটি এবং তা গত সরকারের কাছে জমাও দিয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশের আপত্তিতে সেটি আর চীনকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাম্প্রতিক চীন সফরেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে তিস্তার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়নি সেই আপত্তির কথা মাথায় রেখেই।

 

চীন থেকে ফিরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন যে, তিস্তার বিষয়ে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনা হয়নি। চীনের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে কথা তোলেনি। কারণ, চীন সরকার চেয়েছিল তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নের আগ্রহ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেই আসুক। যাহোক, কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেটি আর হয়নি। কারণ, সরকার চাইছে ভারতের সঙ্গে আর বিতর্ক নয়, কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। আগামী ফেব্রুয়ারিতেও ওমানে অনুষ্ঠেয় ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সের সাইডলাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে সেই চেষ্টা করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

 

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে- বিগত রাজনৈতিক সরকারের বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগে চীন যেসব সেক্টরে আগ্রহ দেখিয়েছিল, একটি প্রতিবেশী দেশের আপত্তিতে সেগুলো করতে পারেনি বেইজিং। কাজেই এখন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় না থাকায় চীন সরকার চাইছে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যাপক সম্পর্ক গড়ার এখনি সময়। দেশটি চাইছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এই পথে এক পা এগিয়ে গেলে চীন সেক্ষেত্রে তিন ধাপ এগিয়ে যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রেও ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে গিয়ে চীনের ব্যাপক আগ্রহের জায়গাগুলোতে সম্মতি দিতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকার। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার। চীনের সঙ্গে বেশি সখ্য পশ্চিমা বিশ্ব ভালো চোখে দেখবে না, সেটা টের পাওয়া যায়। ফলে ভারত, চীন ও পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যের নীতি নিয়েই এখন এগোতে হচ্ছে সরকারকে।

 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় আসায় অন্তর্বর্তী সরকারের পশ্চিমের সঙ্গে যোগাযোগে কিছুটা ছন্দপতন হচ্ছে। বিশেষ করে, ট্রাম্প সরকার সম্প্রতি সব ধরনের বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশে ইউএসএআইডির সব প্রকল্পে অর্থায়ন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যসহ অন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকায় কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করে ট্রাম্প সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু ট্রাম্প সরকারের আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেল।

Sharing is caring!