প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

জুলাই-আগস্ট প্রেক্ষাপট: ‘পাইকারি’ মামলা, সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ১৫, ২০২৪, ১২:২৯ অপরাহ্ণ
জুলাই-আগস্ট প্রেক্ষাপট: ‘পাইকারি’ মামলা, সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এবং পরবর্তীকালে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় গত ৬ আগস্ট থেকে গত রবিবার, ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে দায়ের হওয়া প্রায় ১২ হাজার মামলায় আসামি লক্ষাধিক। গ্রেপ্তার হয়েছে ৩২ হাজার জনের বেশি। অধিকাংশের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা মামলা। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৮২ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ৭১৭ জন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ এবং অপরাধ বিশ্লেষকরা বিভিন্ন ঘটনায় এ যাবৎ দায়ের হওয়া মামলাগুলোর ধরন ও সংখ্যা নিয়ে কিছু জটিলতার আশঙ্কা করছেন। তাদের মতে, নিহতদের অধিকাংশেরই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়নি। যে অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে আলামত হিসেবে সেগুলোও উদ্ধার বা শনাক্ত নেই। উদ্ধার হয়নি নির্দিষ্ট গুলি বা গুলির খোসা। আবার অনেক আগেই মারা গেছেÑ এমন ব্যক্তিদের কাউকে কাউকে এজাহারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হত্যাকাণ্ড চালানোর কথা উল্লেখ করে আসামি করা হচ্ছে। অধিকাংশ মামলাতেই দেখা গেছে, বাদী সব আসামি বা সাক্ষীকে চেনেন না। মামলায় অপরাধ প্রমাণের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এমন দুর্বল দিকগুলো ভাবিয়ে তুলেছে তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের। অনেকেই মনে করছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে আলোচিত এসব মামলা তদন্তের জন্য পুলিশ ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ সেল গঠন করা।

 

আইন ও অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও নিরীহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করার লক্ষ্যে গত ২২ সেপ্টেম্বর জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দুটি কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে কমিটির সভাপতি, পুলিশ সুপার (মহানগর এলাকার জন্য পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার) ও পাবলিক প্রসিকিউটরকে (মহানগর এলাকার মামলাসমূহের জন্য মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর) সদস্য এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু তদন্তের জন্যও একটি পৃথক সেল করা দরকার। এতে করে মামলাগুলো দীর্ঘসূত্রতা থেকে রেহাই পাবে। ক্ষতিগ্রস্তরাও সঠিক বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন না।

 

পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্রমতে, গত জুলাই মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। ওই মাসে সারা দেশে ২০ হাজার ৫৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের অধিকাংশই ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকর্মী। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নতুন করে শুরু হয় ভিন্নধারার গ্রেপ্তার অভিযান। আগস্টে গ্রেপ্তার হয় ৮ হাজার ৫৫৯ জন। সেপ্টেম্বরে ১৪ হাজার ১৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী। অক্টোবরে এসে গত শনিবার পর্যন্ত ৯ হাজার ৪৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই সারা দেশে মোট ৭ হাজার ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ২৪৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছে চট্টগ্রামে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৩ জনকে ঢাকা বিভাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রাজশাহী রেঞ্জ, যেখানে মোট ৮৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ মহাপরিদর্শকের নির্দেশে শিগগিরই সারা দেশে শুরু হবে চিরুনি অভিযান। তখন গ্রেপ্তারের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।

 

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, গত ৬ আগস্ট থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে সাবেক ও বর্তমান ৪৫১ পুলিশ কর্মকর্তা ৩০১ মামলায় আসামি হয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজন সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ২০ জন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, ১১ জন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), ৪২ জন পুলিশ সুপার এবং ২৬ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার। সাবেক দুই আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং এ কে এম শহীদুল হকসহ ১৭ কর্মকর্তা গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এদের প্রায় সবাই হত্যা মামলার আসামি।

সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৬ আগস্ট থেকে ১১ অক্টোবরের মধ্যে লক্ষাধিক ব্যক্তিকে হত্যাসহ নানান সহিংসতার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আসামি করা হয়েছে। এই সময়কালে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মিলিয়ে ৪০০ জনের বিরুদ্ধে ১২ শতাধিক মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭০ জন শীর্ষ রাজনীতিক কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরে সারা দেশে অন্তত ২০০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারও হয়েছেন ১৩ জন। সব মিলিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩২ হাজার। আগামীতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এক সভার কার্যবিবরণীর বরাত দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি নির্দেশনা বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে বলে জানা যায়। সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ঘিরে হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য মামলায় তদন্ত ছাড়া কোনো ব্যক্তির সম্পৃক্ততার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া না গেলে তাকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যাবে না। একই সঙ্গে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলোর প্রাথমিক তদন্তে কোনো আসামির সম্পৃক্ততা না পাওয়া গেলে মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) এ বিষয়ে বলেন, পুলিশকে বলা হয়েছে তদন্ত ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। তারা এখন সেভাবেই কাজ করছে।

পিবিআইর প্রধান ডিআইজি মোস্তফা কামাল বলেন, প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত না হয়ে কাউকে এ ধরনের মামলায় গ্রেপ্তার করা ঠিক নয়। পুলিশ সেটা করছেও না। মামলার প্রাথমিক তদন্তে যদি প্রমাণ হয় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জড়িত নন, তাহলে তাকে কেন গ্রেপ্তার করে হয়রানি করব আমরা?

সাম্প্রতিক তথ্য থেকে জানা যায়, সারা দেশে অন্তত ২০০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারও হয়েছেন অনেকে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের সময় সরকারপ্রধান এবং মন্ত্রী-এমপি ও আমলাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে সেসব অভিযোগ না এনে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে।

অপরাধবিষয়ক সিনিয়র আইজীবী ব্যারিস্টার খালিদ আদনান বলেন, ৩০২ ধারায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে ফৌজদারি আইনে অধিকাংশ মামলা হয়েছে থানায় বা আদালতে। এসব মামলায় হুকুমের আসামিও রয়েছেন। ফৌজদারি আইনে একটি হত্যা মামলার অপরাধ তদন্তে এবং বিচারে কিছু আলামতের গুরুত্ব অনেক বেশি। যেমন ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। এতে করে আঘাত এবং মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাওয়া যায়। আরেকটি হচ্ছে, হত্যার ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হলে ব্যবহৃত অস্ত্র ও বুলেট শনাক্ত এবং সেগুলো উদ্ধার করা। সেগুলো কি সম্ভব হয়েছে? আমার জানা মতে, সিংহভাগ ঘটনাতেই হয়নি। সংঘর্ষে মারা গেলেও কার গুলিতে বা কোন অস্ত্রের গুলিতে মৃত্যু ঘটেছেÑ তা নির্ণয় করা জরুরি। এখানে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না? হুকুমদাতার নাম আছে, কিন্তু হুকুম পালন করে কে হত্যা করল সেটা তদন্তে বের হয়ে আসতে হবে।

এসব মামলা থেকে ভবিষ্যতে আসামিপক্ষ বেনিফিট নেওয়ার চেষ্টা করবেন বা পাবেন বলে মনে করেন এই আইনজীবী। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি কেন্দ্রীয় সেল গঠন করা হলে ভালো হতো। এখনও সেটা করা সম্ভব। এমনও ব্যক্তি আছেন যার বিরুদ্ধে দেড় থেকে দুইশ মামলা হয়েছে। এখন বিচ্ছিন্নভাবে এসব মামলার তদন্ত করতে গেলে এবং আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে কত বছর লেগে যাবেÑ সেটাও ভেবে দেখা দরকার। এতে তদন্ত ও বিচার শেষ করতে অনেক সময় পার হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

মানবাধিকার নেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস রুমা বলেন, অপরাধী যে-ই হোক, প্রতিটি অপরাধেরই বিচার হওয়া উচিত। হতে পারেন তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। যাচাই-বাছাই না করার ফলে শুধু ব্যক্তির মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, প্রকৃত আসামিকেও অপরাধ থেকে রেহাই পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া একজন ব্যক্তি যে ধরনের অপরাধ করেছেন, যেমনÑ দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, দখল, গুম, স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করা, জুলুম, চাঁদাবাজি ইত্যাদি; সেগুলোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে সেই সব অভিযোগই আনা দরকার। কিন্তু সেটা না করে সরাসরি হত্যা মামলায় জড়ানো মানবাধিকার ও আইনের শাসনের বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক পুলিশপ্রধান প্রতিবেদককে বলেন, আসলে পরিস্থিতি আর বাস্তবতা অনেক কিছুই পাল্টে দেয়। এই সুযোগেই এসব ঘটনা ঘটছে। সরকারকেও এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে চারপাশে মামলার নামে যা ঘটছে সেগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যথাযথ তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আনা হচ্ছে হত্যার অভিযোগ। এতে দেখা যাবে, যে ব্যক্তি বা পরিবারগুলো তাদের সন্তান হারিয়েছে তারা হয়তো সেই হত্যাকাণ্ডের বিচারই পাবেন না। উচ্চ আদালত থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন আসামিরা। আবার অনেক ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিকেও এজাহারে আসামি করা হচ্ছে। এলোমেলোভাবে তথ্যপ্রমাণ ছাড়া হত্যার অভিযোগ এনে আইনকে প্রহসন বানানোর এমন কর্মকাণ্ড স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। সরকারের দায়িত্বশীলরা বলছেন, তদন্তে প্রমাণ না হলে আসামিরা ছাড়া পেয়ে যাবেন। কিন্তু সেটা বড় কথা নয়। এর আগে যে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন আর হয়রানির শিকার হলেন, সেটার কি প্রতিকার হবে? এসব বিষয় এজাহারের আগেই ভেবে দেখা দরকার। আমি মনে করি, সরকার নিজেদের অবস্থান অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে। এখন তারা একটি বিশেষ সেল করে এই বিষয়গুলো নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবা শুরু করতে পারে।

হত্যা মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তারা কী তদন্ত করবেন, কীভাবে করবেনÑ নিজেরাই বুঝে উঠতে পারছেন না। দেখা যাচ্ছে, বাদীই আসামিদের চেনেন না। অনেকে বলছেন, তাদের কাছ থেকে শুধু স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। নিহতের ময়নাতদন্ত হয়নি, আলামত উদ্ধার নেই, সাক্ষীদের অবস্থাও হযবরল। সব মিলিয়ে এক বিব্রতকর আর জটিল পরিস্থিতি।

এসব বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এজাহার একটি প্রাথমিক তথ্য। এখানে অনেক ভুল থাকতেই পারে। অপরাধ নির্দিষ্ট হবে মামলার তদন্তে। একজন মৃত ব্যক্তির নাম এজাহারে থাকতেই পারে। এমন অনেক হত্যাকাণ্ড বা অপরাধের ঘটনা থাকেÑ যেটার পরিকল্পনা বা সূত্রপাত অনেক আগের। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আগে তিনি মারা গেলেও ওই পরিকল্পনা বা প্রাথমিক সূত্রপাতের সময় তিনি জীবিত থাকলে তার নাম এজাহারে আসতেই পারে। এজাহারে কোনো ভুল থাকলে তার বেনিফিট কখনোই আসামি পেতে পারে না। বিচার হবে তদন্ত রিপোর্ট এবং সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে। প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বা এজাহারের লেখা মুখ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত, দুর্নীতি বা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ সাধারণত সিআইডি ও দুদক মামলা করে থাকে। সাধারণ মানুষের এই মামলা করার সুযোগ কম। ফলে এই মামলাগুলো কে বা কারা করবেÑ সেটা তাদেরই ব্যাপার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিশোধমূলক। এটা ২০ বছর ধরে ঘৃণ্যভাবে চলেছে। এর জন্য দুটি বড় রাজনৈতিক দল সমানভাবে দায়ী। তবে আওয়ামী লীগের আমলে এর মাত্রা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ছিল।

তিনি আরও বলেন, যেভাবে মামলা দেওয়া হচ্ছে, এর মধ্যে কতগুলো সঠিক, তা আমার জানা নেই। যতটুকু বুঝি, অনেক মামলাই ভুয়া। যদি তা-ই হয়, তাহলে এসব মামলা দিয়ে মানুষকে হেনস্থা করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।

Sharing is caring!