প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৫ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৫, ২০২৫, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ
আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য দখল করে নেওয়া আরাকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধে ব্যাপক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ লক্ষ্যে দেশটির সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা বরাবর সিটওয়ে থেকে নুয়েসং পর্যন্ত ৬টি স্থানে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে মায়ানমারের জান্তা সরকার। অন্যদিকে মাগওয়ে থেকে পাথেইন পর্যন্ত আরও ৬টি স্থানে সেনা সমাবেশ বাড়াচ্ছে দেশটির সরকার। মাঝখানে রাখাইন ইয়োমা পর্বতমালার শীর্ষ ভাগে অবস্থান করছে আরাকান আর্মি। নৌবাহিনী ও স্থলবাহিনীর পাশাপাশি বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান দিয়েও ব্যাপক আক্রমণের পরিকল্পনা করছে দেশটির জান্তা সরকার। উদ্দেশ্য আগামী মার্চের মধ্যে অর্থাৎ বর্ষা শুরুর আগেই রাখাইন থেকে আরাকান আর্মিকে তাড়িয়ে দেওয়া। সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন মায়ানমার আর্মির সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের মাধ্যমে সম্প্রতি দখলে নেয় দেশটির জাতিগত গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এই রাজ্যটি মায়ানমারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য রাখাইন থেকে আরাকান আর্মির দখলমুক্ত করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটির জান্তা সরকার। মায়ানমারের উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকার তিনটি করিডর দিয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে জান্তা সরকার। এর মধ্যে রয়েছে আন-মাগুয়ে করিডর, তানগুপ-পিয়ে করিডর ও গোয়া-পাথেইন করিডর। এই তিন করিডরের মধ্যে আরাকান আর্মির প্রায় ১০ হাজার যোদ্ধা অবস্থান করছেন। এই তিনটি করিডর দখলমুক্ত করার পর রাখাইন রাজ্য আক্রমণ করতে চায় দেশটির জান্তা সরকার। এই রাখাইনে প্রায় ৩০ হাজার আরাকান আর্মি রয়েছে যারা রাজ্যটি দখলে নিয়ে রেখেছে। এখানে এখনো ৪ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। এ ছাড়া রাখাইনে অন্তত ৩০ লাখ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করেন, যারা আরাকান আর্মির সমর্থক।

এ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান মোহাম্মদ শামসুদ্দীন শামস জানান, আরাকান আর্মির রাখাইন দখলের বিষয়টি ছেড়ে দেবে না মায়ানমার সরকার, এতে কোনো সন্দেহ নেই। রাখাইনে আমরা ব্যাপক ও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের আশঙ্কা করছি। এতে ব্যাপক প্রাণহানি ও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। মায়ানমারে অনেক দিন ধরে চলছে গৃহযুদ্ধ। এরই মাঝে মায়ানমারের বিমানবাহিনী গত ১০ জানুয়ারি রাশিয়ার কাছ থেকে ৬টি সুখোই বিমানের উন্নত সংস্করণ Su-30 SME পেয়েছে। এসব যুদ্ধবিমান দিয়ে ইতোমধ্যে চীন ও থাইল্যান্ড সীমান্তে দখল হয়ে যাওয়া এলাকায় ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে। তারা রাখাইনেও আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে এই যুদ্ধবিমানগুলো প্রথম অবস্থাতেই ব্যবহার করবে তাদের দুর্বল করার জন্য। পাশাপাশি ড্রোন হামলাও চালাবে, যাতে আরাকান আর্মির ক্যাম্পগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়। এরপর তারা স্থল সেনা অভিযান পরিচালনা করবে। এতে ব্যাপক প্রাণহানি ও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরও জানান, রাখাইনে যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশ বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হবে। মায়ানমার সেনাবাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পারলে এবার আরাকান আর্মির সদস্যরাও বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। এর আগেও আরাকান আর্মির আক্রমণে টিকতে না পেরে মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে গ্রহণ করে মায়ানমার সরকার। কিন্তু এবার মায়ানমার আর্মির আক্রমণে আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশে ঢুকে পড়লে তাদের ফেরত পাঠানোর কোনো রাস্তা নেই। কারণ মায়ানমার সরকার তাদের গ্রহণ করবে না। আর বাংলাদেশ ছাড়া অন্যদিকে পালানোর কোনো সুযোগ নেই। এর সঙ্গে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নামতে পারে। এ জন্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। যেমন সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার লক্ষ্যে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও সেনা মোতায়েনের জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। কূটনৈতিক উপায়ে মায়ানমার সরকারকে বোঝাতে হবে তাদের আক্রমণের প্রভাব যেন বাংলাদেশে না পড়ে। আগের মতো বাংলাদেশে যেন তাদের গুলি না আসে। সে দেশের নাগরিকরা যাতে বাংলাদেশে না আসে। এ ছাড়া রেডক্রসসহ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হবে, যাতে পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা রাখাইনে ব্যবস্থা নিতে পারে। কারণ মায়ানমারের মূল ভূমি থেকে রাখাইনে তেল, ওষুধসহ অন্য নিত্যপণ্য আসে। যুদ্ধ শুরু হলে সেগুলো আসা বন্ধ হয়ে যাবে। আরাকান আর্মির সঙ্গেও ভিন্ন চ্যানেলে বাংলাদেশের যোগাযোগ রাখতে হবে, যাতে বিপর্যয়ের মুখে তারা বাংলাদেশে ঢুকে না পড়ে।

 

এদিকে জাতিসংঘের একটি গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়ে হয়েছে, মায়ানমারের সিটওয়ে ব্যাটালিয়নে এক হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম সদস্যকে গত ডিসেম্বরে নিয়োগ দিয়েছে জান্তা সরকার। পাহাড়ি এলাকায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তাদের এখন প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে। কারণ জঙ্গলের মধ্যে প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠা রোহিঙ্গা মুসলিম যুবকদের সেখানে যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করছে জান্তা সরকার। বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

Sharing is caring!