প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৮ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশকে কাছে চায় চীন

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ৭, ২০২৫, ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশকে কাছে চায় চীন

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

ভূরাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (জিডিআই) বাস্তবায়ন করতে চায় চীন। ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের সময়েই এই উদ্যোগে যুক্ত হতে ঢাকাকে আমন্ত্রণ জানায় বেইজিং। চলতি ২০ জানুয়ারি ৪ দিনের সফরে বেইজিং যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বাংলাদেশকে কাছে পেতে এই সফরে ডিজিআই ইস্যুতে জোর দিতে পারে বেইজিং।

মূলত বিশ্ব-রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীন তাদের নেতৃত্বে বেশকিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে জিএসআই এবং জিডিআই অন্যতম। এর আগে ২০১৬ সালে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে (বিআরআই) যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। এখন জিডিআই উদ্যোগে যোগ দিলে বাংলাদেশ চীন থেকে উন্নয়ন সহযোগিতা পাবে। এতে উন্নয়ন সহযোগিতার পাশাপাশি চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশ-চীন দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, চীন অনেক আগেই তাদের নেতৃত্বে বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ (জিএসআই) এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে (জিডিআই) যোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়। তবে বিগত হাসিনা সরকারের আমলে ঢাকা বেইজিংকে জানায়, এ মুহূর্তে জিএসআইতে যোগ দেওয়া সম্ভব না। জিডিআই নিয়ে ঢাকা আরও পর্যবেক্ষণ করতে চায়। এরই মধ্যে জিডিআই সংক্রান্ত সব নথিপত্র বেইজিং ঢাকার সঙ্গে শেয়ার করেছে।

চীন এসব উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের পরিধি আরও শক্তিশালী করার এবং অন্যদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তা কারোরই অজানা নেই। তাই এসব উদ্যোগে ভেবে-চিন্তে পা ফেলতে চায় ঢাকা। কেননা এসব উদ্যোগে যুক্ত হলে সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকিও রয়েছে। চীনবিরোধী বৈশ্বিক শক্তিগুলো এসব উদ্যোগকে কীভাবে দেখছে এবং এতে যোগ দিলে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে; তা জানা-বোঝার চেষ্টা করছে ঢাকা। যে কারণে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকার জিডিআই ইস্যুতে বেইজিংকে জানিয়েছিল যে এই ইস্যুতে ঢাকা আরও পর্যবেক্ষণ করতে চায়। এখনকার অন্তর্বর্তী সরকারও হুট করে কোনো কিছুতে যোগ দিতে চায় না। তারা মনে করে, গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর ইস্যুতে রাজনৈতিক সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এটি ইতিবাচক হলে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ এগিয়ে রাখতে পারে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তরা জানিয়েছেন, আগামী ২০ জানুয়ারি ৪ দিনের সফরে বেইজিং যাবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। পরদিন ২১ জানুয়ারি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা। আসন্ন সফরের আলোচ্য বিষয় এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ কী কী ইস্যুতে সহযোগিতা নিতে পারে, তা নির্ধারণে আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। আসন্ন সফরের আলোচ্য বিষয় আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত হতে পারে। তবে অনেক আগেই চীন সবুজ সহযোগিতা এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের দুই পরিবেশগত ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবনার সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের খসড়া কপিও পাঠিয়েছে বেইজিং। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে এই দুই ইস্যুতে আলাপ হতে পারে। চীনের বাজারে সামনের মৌসুম থেকে আম রফতানি শুরু করবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি কাঁঠাল, পেয়ারাসহ অন্য দেশীয় ফলও চীনে রফতানি করা হতে পারে। আসন্ন সফরে এই বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠতে পারে।

এদিকে রোহিঙ্গা এবং প্রতিরক্ষা ইস্যুতে চীনের আরও সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। গত ১৪ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্ক : ভবিষ্যত দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই একমাত্র সমাধান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন আমাদের শুরু থেকেই সহযোগিতা করে আসছে। রোহিঙ্গারা যাতে তাদের অধিকার ও নিরাপত্তাসহ নিজ দেশে ফিরতে পারে, সেজন্য চীনের আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করি। যাতে করে রোহিঙ্গা সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান সম্ভব হয়। ওই দিন প্রতিরক্ষা ইস্যুতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে সামরিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা বিদ্যমান। চীন বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জামের বড় সরবরাহকারী। সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন ও প্রশিক্ষণে চীনের আরও সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। সামরিক খাতে দুই দেশের বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কার্যকর অংশগ্রহণে বাংলাদেশের সামর্থ্য বাড়িয়েছে। আমরা এখন অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, গ্রিন এনার্জি, আইসিটি প্রভৃতি খাতে চীনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ বলেন, চীন বাংলাদেশের খুব ভালো বন্ধু। তারা আমাদের অনেক বিষয়েই সহযোগিতা করছে। পরিবেশসহ যেসব বৈশ্বিক উদ্যোগে তারা সহযোগিতা করতে চায় তা সরকার পর্যালোচনা করে আগে দেখবে। যদি এতে আমাদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন থাকে, তবে সমঝোতা হতে সমস্যা নেই।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং অনাবাসিক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের পর ভারতের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন থেমে গেলেও চীনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন একই গতিতে চলছে। চীন বাংলাদেশের চোখে আঞ্চলিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বাংলাদেশকে ভূরাজনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। আবার এই কারণেই হয়তো গত জাতিসংঘ সম্মেলনের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে চীন বাংলাদেশকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। একে কাজে লাগাতে হবে। না হলে দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

Sharing is caring!