প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৮ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষেতের সবজি ক্ষেতেই পচছে

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ৬, ২০২৫, ১২:২০ অপরাহ্ণ
ক্ষেতের সবজি ক্ষেতেই পচছে

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণের মাথাব্যথার বড় কারণ। তার মধ্যে সবজির দাম ছিল আকাশচুম্বী। বিগত বছরজুড়ে বিষয়টি থেকেছে আলোচনার কেন্দ্রে। প্রায় সারা বছরই প্রতি কেজি সবজির দাম ওঠানামা করেছে ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। কোনো কোনো সবজির দাম ছিল দেড়শ টাকা ছাড়িয়ে।

চাহিদা অনুপাতে সরবরাহ কম থাকায় গত বছর সবজির ভালো দাম পেয়েছেন কৃষকরা। সে বিষয়টি ভাবনায় রেখে এ বছরও দেশে সবজির আবাদ বেশি করেছেন তারা। তবে সবজির দাম যা দাঁড়িয়েছে তাতে লাভ তো দূরে থাকÑ আসলও উঠে আসছে না কৃষকের।

 

সবজির দামে ভোক্তারা স্বস্তি পেলেও খরচের টাকা তুলতে না পেরে পথে বসতে চলেছেন উৎপাদকরা। অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে সবজি তুলতেও নারাজ। এ অবস্থায় ক্ষেতের সবজি পচছে ক্ষেতেই।

 

বাজারচিত্র

 

ঢাকার বাজারে প্রতিটি সবজির দামই তুলনামূলক অনেক কম। আর জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আক্ষরিক অর্থেই পানির দরে সবজি বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীতে প্রতি পিস ফুলকপি ২০-৩০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০-৩৫ টাকা ও লাউ প্রতি পিস ২০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শিম (শক্ত বিচিসহ) ৫০-৬০ টাকা, সাধারণ মানের ৩০-৩৫ টাকা, আলু ৪৫-৫০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০, করলা ৮০, বরবটি ৮০, মুলা ২০, পাকা টমেটো ৬০ টাকা কেজি।

অথচ গত বছর এই সময়ে প্রতি কেজি শিমের দাম ছিল ৬০-৮০ টাকা, আলু ৬০-৭০, গাজর ৪০-৫০, কাঁচামরিচ ৯০-১০০ টাকা। বেগুন, করলা, পটোল, ধুন্দল ও কচুরলতির কেজি ওঠানামা করেছে ৬০-৮০ টাকায়। তা ছাড়া প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০-৫০ এবং আকারভেদে প্রতিটি লাউ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর কলমিলতা বাজারে কথা হয় সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পানির দামে সবজি বিক্রি করছি। সবচেয়ে বেশি কমেছে ফুলকপির দাম।’

আরেক বাজারের বিক্রেতা রিনা আক্তার বলেন, ‘বাজারে চাহিদার চেয়ে বেশি ফুলকপি আমদানি হওয়ায় দাম অনেক কমে গেছে। কারওয়ান বাজারে ট্রাক ট্রাক ফুলকপি আসছে। আমার মনে হয় এদের যাতায়াত ভাড়াও উঠছে না।’

কম দামে সবজি কিনতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করলেন মো. ওয়াসিম হোসেন। তেজগাঁও রেলওয়ে বাজারে কথা হয় এই ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সারা বছর সবজির দাম বেশি থাকায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয়েছে। আমরা চাহিদামতো কিনতে পারিনি। এখন দাম কম হওয়ায় ভাতের চেয়ে সবজিই বেশি খাচ্ছি।’

বর্তমান বাজারদরে কৃষকের যে অবস্থা দাঁড়াচ্ছে, তাতে ক্রেতা হিসেবে আপনার মূল্যায়ন কীÑ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ক্রেতা হিসেবে আমি যত কম দামে পাব তা আমার জন্য ভালো। তবে যারা উৎপাদন করছে, তাদের দিকটি বিবেচনা করলে দেখা যাবে তারা হয়তো ন্যায্য দামটা পাচ্ছে না। এতে তারা উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। তা ছাড়া দাম চড়া থাকলেই কৃষক বেশি দাম পায়Ñ বিষয়টি মোটেও এমন না। কেননা লাভের বড় অংশই মধ্যস্বত্বভোগীরা পকেটে ভরে। আর উৎপাদক হিসেবে কৃষকরা খুব কম দামই পায়।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক কেজেএম আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশেই দামের একটা ভারসাম্য থাকে। কোন অঞ্চলের কৃষক কোন জাতের কী পরিমাণ ফসল (শাকসবজি, মাছ, ফল ফলাদি) উৎপাদন করবেন, সরকারের পক্ষ থেকে তার একটি নির্দেশনা দেওয়া থাকে। কৃষকের উৎপাদিত ফসল বিক্রির ব্যবস্থাও সরকারই করে থাকে। আমাদের দেশে এখনও এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হয়নি। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকের বাজার নামে ঢাকায় কিছু বাজার তৈরি করেছে। সেখানে শুক্র ও শনিবার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল এনে নিজেরা বিক্রি করেন।’

 

কী বলছেন কৃষকরা

দেশের অন্যতম বড় সবজির বাজার হিসেবে পরিচিত বগুড়ার ‘মহাস্থান হাট’। বছরজুড়েই এখানে প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শত শত মণ সবজির কেনাবেচা চলে। বাজারটিতে শীতকালীন সবজির সরবরাহও ভালো। কিন্তু পণ্যের দাম না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত কৃষকরা।

মহাস্থান হাটে বুধবারও কৃষকরা প্রতি মণ ফুলকপি বিক্রি করেছেন ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। গত শুক্রবার দাম কিছুটা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মণ। এতে প্রতি কেজি ফুলকপির দাম পড়েছে ৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ৭ টাকা ৫০ পয়সা। প্রতি মণ মুলা বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। এতে প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা ২৫ পয়সা।

এই হাটে কৃষকরা পাকরি জাতের আলু ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা কেজিতে ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন। ৩২ টাকা ৫০ পয়সা কেজি দরে সাদা জাতের আলু প্রতি মণ বিক্রি করছেন ১ হাজার ৩০০ টাকায়। প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি করছেন ৫ থেকে ৭ টাকায়। বিচিযুক্ত শিম বিক্রি করছেন ৩২ টাকা কেজি।

কৃষকদের দেওয়া হিসাবমতে, বগুড়ায় প্রতিটি ফুলকপি উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮ টাকা ও বাঁধাকপিতে ৪ টাকা। এক কেজি আলুতে ১৪-১৬ টাকা, কাঁচামরিচে ১৭ টাকা, মুলা ২ টাকা, শিম বিচি ছাড়া ৬ ও বিচিযুক্ত ১০ টাকা এবং করলা ১৫ টাকা।

বগুড়ার মহাস্থান এলাকার কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, এবার অসময়ে বৃষ্টির কারণে ফুলকপি ও আলুসহ সব ধরনের সবজির উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী তারা দাম পাচ্ছেন না।

মহাস্থান হাটের পাইকারি আড়তদার সফুরা ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম জানান, গত শীত মৌসুমের তুলনায় এবার ফুলকপিসহ সব ধরনের সবজির আবাদ বেশি হয়েছে। এমনকি যেসব জেলায় আগে আলু আবাদ হতো না, সেখানেও এবার আবাদ করা হচ্ছে।

 

 

রংপুরে সবজির দরপতনে দিশেহারা কৃষক

 

রংপুরে সবজির দরপতনে দিশেহারা কৃষকরা। শ্রমিক খরচ না ওঠায় অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে সবজি তোলা বন্ধ রেখেছেন। অনেকে ক্ষেত ভেঙে অন্য ফসল আবাদ শুরু করেছেন। সবজি সংরক্ষণে বিশেষ সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

রংপুরে কৃষকপর্যায়ে শিম ৫ টাকা, বেগুন ৫ ও মুলা ২ টাকা কেজি; ফুলকপি-বাঁধাকপি ৫ টাকা পিস, লাউ ১০-১৫ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা পর্যায়ে শিম ১৫ টাকা কেজি, ফুলকপি-বাঁধাকপি ১৫ টাকা পিস, লাউ ২০ থেকে ২৫ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সবজি উৎপাদনের শীর্ষে থাকা রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের খানপাড়া এলাকার কৃষক মাজেদ আলী ৫২ শতক জমিতে শিম চাষ করেছেন। ক্ষেত ভরে আছে শিম ও ফুলে। সবজির দাম কমে যাওয়ায় মাজেদ আলী তার শিমক্ষেতের কিছু অংশের মাচা ভেঙে পেঁয়াজ লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

পাশের জমিতে আনোয়ারুল ইসলামও শিম লাগিয়েছেন। কিন্তু শিম বিক্রির টাকা দিয়ে শ্রমিকদের মজুরি দিতে না পারায় শিম তোলা বন্ধ রেখেছেন তিনি।

অপর কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘শিমের বাজার খুব কম। অ্যালা ৫ টাকা কেজি করি ক্ষ্যাত থ্যাকি শিম বিক্রি করা নাগতেছে।’

লতিবপুর ইউনিয়নের পাইকান পাড়ার কৃষক ফাত্তারুল ইসলাম বলেন, ‘সার, বীজ, কীটনাশক, পানিÑ সবকিছুর দাম বেশি। যারা আগাম সবজি চাষ করছেন, তারা লাভ করছেন। আমরা যারা একটু লেটে আবাদ করেছি, তারা লাভ করতে পারছি না। সরকার সার, কীটনাশক ও বীজের দাম কমাক। তাহলে কৃষকরা বাঁচতে পারবে।’

 

কুমিল্লার নিমসারে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে সবজি

 

কুমিল্লার সর্ববৃহৎ তথা দেশের অন্যতম বৃহৎ নিমসার কাঁচাবাজারেও বিভিন্ন প্রকারের সবজি বিক্রি হচ্ছে অনেকটা পানির দামে। এ অবস্থায় স্থানীয় কৃষকÑ এমনকি পাইকারদের মাঝেও নেমে এসেছে হতাশা।

শুক্রবার নিমসার বাজারে প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকায়। উচ্ছের কেজি ২৫ টাকা, করলা ২০, টমেটো ৪৫-৫০, গাজর ২৫, শিম ১২, শালগম ১২, মিষ্টি কুমড়া ২০, শসা ১২-১৩, কাঁচামরিচ ১৩-১৪, পেঁয়াজের ফুল ১ টাকা বস্তা, ফুলকপি ৫-৬ টাকা পিস, চিচিঙ্গা ১৫, ধুন্দল ২৫, মুলা ৪-৫, ঝিঙা ২০, বরবটি ৩৮, নতুন আলু ৩৮-৪০ ও পুরোনো আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কুষ্টিয়া সদরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম জামালপুরের সরিষাবাড়ী থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে ৯০ বস্তা কাঁচামরিচ কিনে নিমসার পাইকারি বাজারে আনেন। বেলা ১০টায় এই প্রতিবেদককে জানান, ১৭ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে এখন ১৩-১৪ টাকায় মরিচ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।

 

 

অভিন্ন চিত্র নরসিংদীতে

 

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বারৈচা সবজির হাটে প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকায়। এছাড়া বাঁধাকপি ১৭-২০, করলা ৪০-৫০, বরবটি ৪০-৫০, বিচিসহ শিম ৩৫-৪০, সাধারণ শিম ১৮-২০, নতুন আলু ৩২-৩৫ টাকা ও টমেটো ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

শিবপুরের মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক নিজাম মিয়া বলেন, ‘৬ গন্ডা জমিতে বরবটি চাষ করেছি। সার ও কীটনাশকের দাম বেশি থাকায় চাষে খরচ বেশি হয়েছে। কিছুদিন আগেও বাজারে সবজির যে দাম ছিল তা থাকলে ভালো লাভের মুখ দেখতে পারতাম। এখন বাজারের অবস্থা খুব খারাপ। লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না।’

পাবনায় কৃষকদের প্রতি কেজি বাঁধাকপি ও ফুলকপি উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ১৮ টাকা। অথচ পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি। লাউ ১৩ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। প্রতি কেজি শিম উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০ টাকা। আর বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি।

 

উৎপাদন খরচ কত

 

প্রতি কেজি কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় কতÑ এ ধরনের হিসাব করে থাকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। চলতি শীত মৌসুমে প্রতি কেজি সবজির দাম কত পড়েছেÑ এ ধরনের কোনো হিসাব এখনও করেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে গত বছরের তথ্যমতে, প্রতি কেজি বেগুনের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা, ঢেঁড়স ১১ টাকা, টমেটো ৯ টাকা এবং লাউ প্রতি পিস ৬ টাকা। আর প্রতিটি ফুলকপির উৎপাদন খরচ ৫ টাকার বেশি।

কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ বিষয়ে কাজ করেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ রেজা আহমেদ খান। চলতি শীত মৌসুমে কোন ধরনের সবজির উৎপাদন খরচ কত তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি গবেষণার বিষয়। আমরা একটা খসড়া তৈরি করেছি। এখনও সেটি চূড়ান্ত হয়নি। তাই বলাও যাচ্ছে না।’

শীতের সবজির মৌসুমের প্রায় অর্ধেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। অথচ এখনও দাম নির্ধারণ করা হয়নি। ওদিকে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাহলে দাম নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে কবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পণ্যের দাম নির্ধারণে তো কৃষকের বিক্রিতে কিছু আসে-যায় না।’

তাহলে কৃষক কোন দাম ধরে তার পণ্য বিক্রি করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সব জায়গা থেকে তথ্য আসতে হয়। এতে কিছুটা সময় লাগে।’

 

 

কী ভাবছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা

 

কৃষক পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় সমাধান কী হতে পারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তাজ উদ্দিন বলেন, ‘কাঁচামালের দাম প্রায় সময় ওঠানামা করে। মুলা, ফুলকপিসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম কমে যাওয়ার কারণÑ যে পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে, সেই তুলনায় বাজারে ক্রেতা কম। দাম কমলে ক্রেতারা খুশি হলেও উৎপাদকদের লোকসানের অবস্থা তৈরি হয়।’

তিনি বলেন, ‘পণ্যের যথাযথ মূল্য নিশ্চিত করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যেমন পণ্যের বিকল্প ব্যবহার বাড়াতে হবে। অর্থাৎ মুলা দিয়ে শুধু তরকারি না খেয়ে অন্য কীভাবে এটিকে সংরক্ষণ করা যায়, অন্য আইটেম বানানো যায়Ñ সেটি চিন্তা করতে হবে। সেক্ষেত্রে এসব পণ্য এখন বিক্রি না হয়ে কয়েক মাস পরে বিক্রি হবে। তখন দাম পাওয়া যাবে। কৃষিপণ্যের ভ্যালু এডিশন করতে হবে। এতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনীয় অর্থ ও সরঞ্জাম রাষ্ট্রীয়ভাবে দিতে হবে। এতে কৃষক উপকৃত হবেন। পাশাপাশি ক্রেতারাও উপকৃত হবেন।’

ড. তাজ উদ্দিন বলেন, ‘দ্বিতীয় হলো, বিদেশে রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। বিভিন্ন দেশে আমাদের বাঙালিরা থাকে। তারা দেশি পণ্য পেলে খুব আনন্দ ও উৎসাহের সঙ্গে তা নেয়। আমরা নিজেরাও বিদেশে থাকা অবস্থায় দেশি পণ্য পেলে আগ্রহভরে নিয়েছি। তাই রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’

অঞ্চলভিত্তিক ফসল উৎপাদনে কোটা নির্ধারণ করা যায় কি নাÑ এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. তাজ উদ্দিন বলেন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে উৎপাদনের ব্যাপারে কোটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তারা আগাম দামও নির্ধারণ করে দেয়। যদিও আমাদের দেশে এ কাজ করা খুব কঠিন, তারপরও অসম্ভব নয়। আমরা দাম এমন সময় পাই যখন বিক্রি প্রায় অর্ধেক বা শেষের দিকে চলে যায়। মৌসুমের শুরুতেই দামটা নির্ধারণ করে দেওয়া হলে কৃষকরা লোকসানে পড়বেন না।’

পরিকল্পনাভিত্তিক চাষাবাদ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন বাকৃবির অ্যাগ্রিবিজনেস অ্যান্ড মার্কেটিং অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘একই সময়ে একই ধরনের ফসল উৎপাদন না করে অর্থাৎ একই সময়ে সব জায়গায় মুলা, ফুলকপি চাষ না করে বরং ধাপে ধাপে চাষ করা যেতে পারে। উৎপাদিত পণ্য ধাপে ধাপে বাজারজাত হলে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে ভালো হয়। এখন তো আমাদের দেশে সব জায়গার কপি, আলু বেগুন প্রায় একই সময়ে বাজারে চলে আসে। তাতে সরবরাহ বেশি হয়ে যাওয়ায় দাম পড়ে যায়। তা ছাড়া সরকারিভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। তা সম্ভব হলে বাজারমূল্যে এতটা পার্থক্য হবে না।’

Sharing is caring!