প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৭ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক প্রশ্ন

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ৫, ২০২৫, ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক প্রশ্ন

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য করা মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন, প্ল্যান বাস্তবায়নে চলমান নির্মাণকাজ নিয়েও আছে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কেনাকাটা, অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত নভেম্বরে গঠন করা হয় ‘সত্যানুসন্ধান কমিটি’। এ কমিটি ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত এক যুগের ‘অনিময় ও দুর্নীতি’ অনুসন্ধানে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ ১১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির উপদেষ্টা।

মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে ‘ওভার ডিজাইন’, ডিজাইন ভেটিংয়ে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ওঠা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজন না থাকলেও শুধু অর্থ আত্মসাতের জন্য রূপপুর প্রকল্পের বালিশকাণ্ডে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশনকে দিয়ে বেশ কয়েকটি সুউচ্চ ভবন নির্মাণ, নকশায় ভুলের কারণে ভবনের পিলার কেটে লিফট লাগানো, ক্যাম্পাসের খালি জায়গা ভরাট করে অপ্রয়োজনীয় টেরাকোটা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ, কোটি কোটি টাকা খরচ করে ক্যাম্পাসের চারপাশে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা উঁচু করা, যার কারণে ভারি বৃষ্টিতে ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নভেম্বরে গঠিত কমিটি এসব অভিযোগও খতিয়ে দেখবে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে কমিটির একজন সদস্য জানান, কমিটির একটি সভা হয়েছে। সেখানে কীভাবে কাজ করা হবে তার একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। আরেকটি সভা করে কাজ শুরু করা হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম আমানউল্লাহ বলেন, ‘সাধারণ মানুষের ধারণা—বিগত সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতে অনিয়ম হয়েছে। কয়েকটি খাতে অনিয়ম হয়েছে বলে আমরাও অভিযোগ পেয়েছি। সেজন্য আমরা একটি কমিশন গঠন করেছি। এই কমিশন অনিয়মগুলো খুঁজে বের করবে। এরপর অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় মূল ক্যাম্পাসে ৭ তলা বিশিষ্ট সিনেট ভবন, ৭ তলা আইসিটি ভবন, ১০ তলা ডরমেটরি ভবন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আলাদা ৬ তলা বিশিষ্ট দুটি ভবন, টেরাকোটা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, শহীদ মিনার, পুরো ক্যাম্পাসের চারপাশে উঁচু সড়ক, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন, মহাসড়কের পাশে বাউন্ডারি দেয়াল, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের গেট ইত্যাদি নির্মাণ হচ্ছে।

তথ্য অনুযায়ী, সিনেট ভবনে খরচ হচ্ছে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা, আইসিটি ভবনে ১৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার বেশি, ডরমেটরি ভবনে প্রায় ৭৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারে প্রায় ১১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, কর্মচারীদের কোয়ার্টারে ৮ কোটি ১২ লাখ টাকার বেশি, শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে ৭৫ লাখ টাকা, উচ্চতায় ১৮ ফুট এবং প্রস্থে ২০৪ ফুট টেরাকোটায় ২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং শহীদ মিনারে ৩৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় খরচ প্রায় ১৬৪ কোটি টাকা। এর সঙ্গে লিফট, জেনারেটর, সাবস্টেশন, আসবাবপত্র, মূল গেট, বাউন্ডারি দেয়াল, ড্রেন নির্মাণসহ খরচ ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।

মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে নির্মাণকাজের সুপারভিশন ও অগ্রগতি মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মতিউর রহমান জানান, মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় যেসব স্ট্র্যাকচারাল ডিজাইন করা হয়েছে, তার সবই ‘ওভার ডিজাইন’ করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত পত্রে বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় শোর পাইলের কারণে নির্মাণ খরচ বেড়ে যাবে বলেও চিঠিতে সাবধান করেছিলেন; কিন্তু কর্তৃপক্ষ ডিজাইন সংশোধন করেনি।

ডিজাইন ভেটিংয়ের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভেটিং শেষে ডিজাইন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জমা না দিয়ে দেওয়া হয়েছে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিকে (আইইউটি)। কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ তখন আইইউটির উপাচার্য ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি আইইউটি থেকে পদত্যাগ করলে ভেটিংয়ের কাজ আইইউটির পাশাপাশি বুয়েট থেকে করানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই কাজ বুয়েটকে না দিয়ে অন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছিল। এতে দ্বিগুণ অর্থ খরচ করতে হয়েছে।

মতিউর দাবি করেন, মাস্টারপ্ল্যানের ডিজাইন নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণে দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও প্রতারণার অভিযোগ তুলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। তবে সে সময় ভ্যাটিংয়ের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. শফিউল বারীও ওভার ডিজাইনের কথা স্বীকার করেছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।

মতিউর আরও দাবি করেন, খোদ প্রকৌশল দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে শতকোটি টাকার অনিয়ম হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাদের মতে, টেরাকোটা, ম্যুরালসহ অপ্রয়োজনীয় কিছু স্থাপনা বাদ দিলে এই নির্মাণকাজ ১০০ কোটি টাকাতেই করা সম্ভব ছিল।

মতিউর রহমান বলেন, কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মনিটরিং রিভিউ কমিটির বিভিন্ন সভায় কাজের যে অগ্রগতি দেখানো হয়েছিল, তা কীসের ভিত্তিতে তার কোনো ব্যাখ্যা ছিল না। অথচ এই অগ্রগতি দেখিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেওয়া হয়েছিল। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভবন একাডেমিক ভবনের সঙ্গে মিল রেখে উঁচু করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল; কিন্তু তা করা হয়নি। আবার নবনির্মিত রাস্তার কারণে অনেক ভবনে পানি উঠতে পারে—এমন শঙ্কার কথা জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

কয়েক মাস আগে ভারি বৃষ্টির পর ক্যাম্পাস পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের ভেতরে পানি ঢুকেছে। কর্মচারীরা সেই পানি পরিষ্কারে ব্যস্ত। ক্যাম্পাসের নতুন সড়ক উঁচু হয়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে জানান তারা। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, বিগত সময়ে ক্যাম্পাসে পানি জমে থাকার কোনো নজির নেই।

এদিকে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন নিয়ে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের শুরুতেই আছে নন-টেকনিক্যাল একজন কর্মকর্তাকে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য সচিব বানানো। তিনি হলেন প্রকৌশল দপ্তরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। প্রকৌশলী না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য হারুন অর রশিদের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানতে চাইলে আবু হানিফ মাস্টারপ্ল্যানে অনিয়মের মূল হোতা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, সে (মিজান) মাস্টারপ্ল্যানের ড্রয়িং-ডিজাইন বুঝে নেওয়া কমিটি, টেন্ডার ডকুমেন্ট যাচাই কমিটি এবং টেন্ডারে অংশ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন কমিটির সদস্য সচিব। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য মুনাজ আহমেদের ক্লাসমেট হওয়ায় সে বিভিন্ন কমিটিতে ছিল।

নন-টেকনিক্যাল হয়েও কীভাবে প্রকৌশল দপ্তর চালিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সমস্যা হয়নি। পিপিআর বা অন্যান্য জটিল বিষয়গুলো বই থেকে পড়ে বুঝে নিয়েছি।

মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়নে নির্মাণকাজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পছন্দের প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে সর্বোচ্চ দরদাতাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার অনিয়ম হয়েছে। তবে কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে দরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। অর্থ কমিটির কার্যবিরণীতে দেখা যায়, টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির ২৩০তম সভায় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে আরও পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়। তবে পরের সভায় পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি আর উপস্থাপন হয়নি; কিন্তু জাল দলিল তৈরি করে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ডিডিসিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, ডিডিসির নামে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও তাদের কোনো ভূমিকাই ছিল না। স্ট্রাকচারাল ডিজাইন তৈরি, ভেটিং, ঠিকাদার নিয়োগ, নির্মাণকাজ তদারকি, অগ্রগতির রিপোর্ট প্রদান, বিল পেমেন্ট ইত্যাদি সব কাজই করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূরের ফার্ম ‘মার্ক আর্কিটেক্টস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড’। মার্ক আর্কিটেক্টসকে জয়েন্ট ভেঞ্চার দেখিয়ে দরপত্রটি দাখিল করা হয়েছিল ডিডিসির নামে। টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটিতে রাখা হয়নি বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের কাজে অভিজ্ঞ কোন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে। কার্যাদেশে মার্কের নাম না থাকলেও মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য গঠিত কমিটিতে রয়েছে তাদের একাধিক প্রতিনিধি। মুনাজ আহমেদ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হলেও কমিটির সার্বক্ষণিক সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।

এখানেই শেষ নয়, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে নির্মাণকাজের ঠিকাদারি পেয়েছে মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটি বহুল আলোচিত রূপপুরের বালিশকাণ্ডে জড়িত। এ কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণে গুণগত মান নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডরমেটরি ভবনের মূল নকশায় লিফট রাখা হয়নি। সে কারণে ভবন নির্মাণের পর পিলার কেটে লিফট লাগানো হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে পিলার কেটে লিফট লাগাতে দেখা গেছে। একই অবস্থা আইসিটি ভবনেরও। এই ভবন নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ও ইন্টেরিয়রের কাজ করা একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ডরমেটরি ভবনের মতো এখানেও পিলার কেটে লিফট লাগাতে হয়েছে। এ ছাড়া, ডরমেটরি ভবনকে থ্রি স্টার মানের বানাতে গিয়ে ইচ্ছাকৃত খরচ বাড়ানো হয়েছে।

জানতে চাইলে মজিদ অ্যান্ড সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ হোসেন জাভেদ বলেন, ‘আমাদের যেভাবে ডিজাইন দেওয়া হয়েছে, সেভাবে করেছি। এরপর কি করা হয়েছে, তা জানি না।’

সংশ্লিষ্টরা আরও বলেছেন, প্রয়োজন না থাকলেও সরকারকে খুশি করতে শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত বিশাল টেরাকোটা নির্মাণ করা হয়েছে। আবার শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালও স্থাপন করা হয়েছে। এসব করতে গিয়ে সিনেট ভবনের সামনের ফুলের বাগান নষ্ট করা হয়েছে। যদিও গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে এই ম্যুরাল উপড়ে ফেলা হয়। টেরাকোটায় কালো রঙ দিয়ে শেখ হাসিনার ছবি ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি সে সময় কোনো দায়িত্বে ছিলাম না। সবকিছু কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়। মতিউর রহমানের চাকরি চলে যাওয়ার পর আমি হানিফ সাহেবকে সেই কমিটিতে রাখার বিষয়ে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি সেটি করেননি। কমিটিতে না থাকায় আমার কিছু জানা নেই।’

তবে হানিফ তার পরামর্শেই সবকিছু করত—এমনটিই জানিয়েছেন মিজান। তিনি বলেন, ‘কমিটির মিটিংয়ে গিয়ে হানিফ বিভিন্ন বিষয় জানতে আমাকে কল করত। নন-টেকনিক্যাল বলে সে কিছুই বুঝত না।’ তিনি বলেন, ‘ড্রেনের লাইনটি ক্যাম্পাসের দিকে ঢালু কথাটি ঠিক নয়। ড্রেনের পানি সরাসরি রাস্তার দিকে চলে যাবে, সে ব্যবস্থাই করা হয়েছে। তবে পুরোনো ভবনগুলোর মধ্যে ১৪তলা বাদ দিয়ে বাকিগুলো একটু নিচু হয়ে গেছে। সে জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে, এসব ভবনের নিচতলার যেসব টয়লেট আছে, সেগুলো উঁচু করতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় সেপটিক ট্যাঙ্ক করতে হবে। আগের সব টেন্ডার যেহেতু বাতিল করা হয়েছে, আমরা নতুন করে টেন্ডার করব।’

মাস্টারপ্ল্যানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তন করতে গিয়ে কিছু বিষয়ে কম-বেশি দেখা গেছে। সে কারণে সংযোজন বা বিয়োজন হয়েছে। আগের যে গেট ডিজাইন করা হয়েছিল, তা নতুন প্রশাসনের পছন্দ হয়নি। সে কারণে নতুন করে ডিজাইন করা হচ্ছে। তবে ফাউন্ডেশন আগেরটাই থাকছে। সে কারণে খুব বেশি খরচ হবে না।’

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. শফিউল বারী এবং বর্তমান ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল জলিলের কাছে পিলার কেটে লিফট লাগালে ভবন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে জানতে চাইলে তারা ডিজাইন বা নকশা ছাড়া কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের কাছে নকশা চাওয়া হলেও তিনি সেটি দেননি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নুর বলেন, ‘আমি এখন এসব বিষয়ে কোনো কথা বলব না।’

প্রকৌশল শাখার সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এমদাদুল হকের মুঠোফোনে কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া দেননি মার্ক আর্কিটেক্টস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনও। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।

অপচয় কিংবা অনিয়মের অভিযোগ মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রবেশ মুখে চত্বরের নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্য কমিটির সিদ্ধান্তে টেরাকোটা নির্মাণ করা হয়েছে। আর জলাবদ্ধতার বিষয়টি সংশোধিত মাস্টারপ্ল্যানে আমলে নেওয়া হয়েছে।

একাডেমিক ভবনের সমান উঁচু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবন নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরামর্শক এ বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে পারতো। পরামর্শক ও ঠিকাদার আমার যোগদানের আগে নিয়োগ পেয়েছে, তাই এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। পিলার কেটে লিফট লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলোর নকশাও আমার যোগদানের আগে হয়েছে।’

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘হারুন স্যারের সময়ে একাডেমিক ও ফিজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে একটা কম্পোনেন্টে খরচ বেড়েছে আমাদের। সেটি হলো সিনেট ভবন। এর কারণ কনসালটেন্ট ছিল অথর্ব। তারা ভালো ড্রয়িং দেয়নি। সে কারণে নতুন করে ডিজাইন করতে হয়েছে। এরপর সিন্ডিকেটে তুলে সবার মতামতের ভিত্তিতে খরচ বাড়াতে হয়েছে। তবে ভবনের পিলার কাটার বিষয়ে নিজাম স্যার ভালো বলতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসের পানি সামনের ড্রেনের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোথাও বিগত সময়ে পানি জমেছে বলে আমার জানা নেই। সামনের ড্রেনের সঙ্গে মার্জ করা হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত আধুনিক ড্রেনেজ না হবে, ততদিন পেছন দিক দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হবে। আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম করেই সব করা হয়েছে, এর জন্য বাড়তি খরচ হয়নি।’

Sharing is caring!