প্রজন্ম ডেস্ক:
চব্বিশের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন আগস্টে রূপ নেয় সরকার পতনে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওই আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে এবং দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের দেশ ছেড়ে পালানোর হিড়িক পড়ে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও চলে যান আত্মগোপনে। ৫ আগস্টের আগে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে জনরোষানলে পড়ে পুলিশ। এতে সরকার পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারেই ভেঙে পড়ে।
এদিকে পালাতে গিয়ে অনেকে আটকও হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। অনেকে ভয়ে দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে চলে যান। শুধু মন্ত্রী-এমপি বা প্রভাবশালীই নয়, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারাও আত্মগোপন করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় গত ১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ২৩ দিনে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ৪৫ জন সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও রাজনৈতিক নেতা। বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে অন্তত ১০ জন মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালীকে। বিমানবন্দরে এসেও পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ফিরে গেছেন অনেক মন্ত্রী-এমপি, রাজনৈতিক নেতা ও দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা।
গত ১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পালিয়েছেন ৪৫ মন্ত্রী-এমপি
১৪ জুলাই : ভোর ৬টা ৫০ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে দেশ ছাড়েন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু। দুপুর ২টায় থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২২ ফ্লাইটে ব্যাংকক যান কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. কামরুল আরেফিন। একই ফ্লাইটে ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য দেওয়ান জাহিদ আহমেদ মালেক।
১৫ জুলাই : সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ-৪৪৭ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। একই ফ্লাইটে ছিলেন দিনাজপুর-৬ আসনের শিবলী সাদিক, টাঙ্গাইল-৫ আসনের মো. সানোয়ার হোসাইন ও নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। বিমান বাংলাদেশের বিজি-৩৯১ ফ্লাইটে কলকাতা যান ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা সজল।
১৬ জুলাই : বিমানের বিজি-৩১৫ ফ্লাইটে মালয়েশিয়া যান সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী। এমিরেটস এয়ারলাইন্সে (ইকে-৫৮৩) দুবাই চলে যান সাবেক রেলমন্ত্রী ও কুমিল্লা-১১ আসনের এমপি মুজিবুল হক। বাংলাদেশ বিমান বিজি-৩০৮ ফ্লাইটে ম্যানচেস্টারের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন ঢাকা-১৬ আসনের মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা।
১৭ জুলাই : ক্যাথে এয়ারলাইন্সে (সিএক্স-৬৬২) হংকং যান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য ফায়জুর রহমান। চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সে (সিজেড-৩৯১) চীনের গুয়াংজুর উদ্দেশে দেশ ছাড়েন কুমিল্লা-৮ আসনের আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউদ্দিন। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে (এসকিউ-৪৪৭) সিঙ্গাপুর যান ময়মনসিংহ-৮ আসনের মাহমুদুল হাসান সুমন।
১৮ জুলাই : বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৫৮৪ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরে পলায়ন করেন সাতক্ষীরা-৩ আসনের এমপি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ এফ এম রুহুল হক।
২০ জুলাই : শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সে (ইএল-১৯০) দেশ ছাড়েন বিসিবির প্রেসিডেন্ট, ক্রীড়ামন্ত্রী ও কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের এমপি নাজমুল হাসান পাপন।
২৫ জুলাই : ব্যাংককের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন কুমিল্লা-৫ আসনের এমপি এ এম তাহের। ময়মনসিংহ-৭ আসনের এবিএম আনিসুজ্জামান দেশ ছেড়ে ব্যাংককে যান। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কানাডার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন সংরক্ষিত নারী আসনের নীলুফার আনজুম। একই এয়ারলাইন্সে করে কানাডা যান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান।
২৬ জুলাই : কাতার এয়ারলাইন্সে (কিউআর-৬৪৩) গ্রিসে পালান কুমিল্লা-৪ আসনের আবুল কালাম আজাদ।
২৭ জুলাই : এমিরেটস এয়ারের ইকে-৫৮৭ ফ্লাইটে দুবাইয়ের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেন সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব।
২৮ জুলাই : এমিরেটস এয়ারে (ইকে-৫৮৫) নেদারল্যান্ডসের হেগে যান আলোচিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চৌধুরী। বর্তমানে তিনি সপরিবারে বেলজিয়ামে অবস্থান করছেন। ইউএস-বাংলার বিএস-৩০৭ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর যান কুমিল্লা-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম।
২৯ জুলাই : এমিরেটসে (ইকে-৫৮৩) তেহরান যান সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। নভোএয়ারে কলকাতা যান যশোর-৩ আসনের কাজী নাবিল আহমেদ। বিমানের বিজি-৩৩৭ ফ্লাইটে মদিনা যান বরগুনা-৫ আসনের মো. মজিবুর রহমান মজনু।
৩০ জুলাই : মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে (এমএইচ-১৯৭) ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন পটুয়াখালী-৩ আসনের এমপি এসএম শাজাহান।
৩১ জুলাই : এমিরেটস এয়ারলাইন্সে (ইকে-৫৮৫) নিউইয়র্ক পালিয়ে যান ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরী। বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৩৯৭ ফ্লাইটে দিল্লি যান শরীয়তপুর-৩ আসনের নাহিম রাজ্জাক। চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সে (সিএস-৩৯২) চীনের গুয়াংজু যান কুমিল্লা-৮ আসনের আবু জাফর মো. শফিউদ্দিন।
২ আগস্ট : টার্কিশ এয়ারের টিকে-৭১৩ ফ্লাইটে ইস্তানবুল গেছেন ঝিনাইদহ-২ আসনের নাসের শাহরিয়ার জাহিদী। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে (বিএস-৩০৭ ফ্লাইটে) সিঙ্গাপুর যান সংরক্ষিত মহিলা আসনের পারুল আক্তার। বাংলাদেশ বিমানে (বিজি-৫৮৪) সিঙ্গাপুর পালান শেখ পরিবারের সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। ভিসটারা এয়ারে (ইউকে-১৮২) দেশ ছাড়েন জাতীয় পার্টির নেতা ঢাকা-৪ আসনের সাবেক এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৫৮৪ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
৪ আগস্ট : দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ বিমানে (বিজি-৩৯৭) ঢাকা ছাড়েন নেত্রকোনা-৪ আসনের সাজ্জাদুল হাসান।
৫ আগস্ট : সিঙ্গাপুর এয়ারে (এসকিউ-৪৪৭) সিঙ্গাপুর গেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের (এমএইচ-১৯৭) মালয়েশিয়া যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগের কারণে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আর দেখা যায়নি। তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তবে ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন সন্দেহে’ বিভিন্ন স্থানে তাকে ধরতে দেশে চার দফা অভিযান চালালেও ব্যর্থ হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী। কিন্তু তাকে ধরতে না পারলেও গত গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ৩টার পর রাজধানীর উত্তরা থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছেলে শাফি মুদ্দাসির খানকে গ্রেফতার করে ঢাকা জেলা পুলিশের একটি দল। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, তার ছেলে শাফি মুদ্দাসির খানসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
গত ১ অক্টোবর বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ক্যামেরায় দেখা গেছে, কলকাতার ইকো পার্কে আড্ডা দিচ্ছিলেন। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কলকাতার ইকো পার্কে আড্ডা দিতে দেখা যায় আসাদুজ্জামান খান কামালকে। তার মুখে শুভ্র দাড়ি ছিল। এ সময় তার সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, অপু উকিল ও হাজি সেলিমের এক ছেলে ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে ১৮৮টি মামলা হয়েছে। বেশিরভাগ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
দেশের সীমান্ত এলাকা পাড়ি দিয়ে পালিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পালিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। পালিয়েছেন সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিম, সংসদস সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলও। এ ছাড়াও ছাত্রলীগের সাদ্দাম, ইনান, শয়নসহ ছাত্রলীগ যুবলীগের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী-এমপিসহ শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক বিমানমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলের শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেফতার করে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাবেক সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। এ ছাড়া আলোচিত সেনা কর্মকর্তা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল হাসানকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে পরবর্তী সময়ে মোট ৬২৬ জন আশ্রয় নেন দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আশ্রয় নেয় ৫১৫ জন পুলিশ সদস্য-কর্মকর্তা। ৫১৫ জনের মধ্যে ২৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং ৪৮৭ জন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য ছিলেন। এদিকে পটপরিবর্তনের পর পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৮৭ জন সদস্য আত্মগোপনে চলে যান। তবে এর বাইরেও অনেক পুলিশ সদস্য নানা কৌশলে বা কারণ দেখিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন।
পুলিশের যারা এখনও আত্মগোপনে : কর্মস্থলে যোগ না দেওয়া ১৮৭ সদস্যের যে তালিকা দেয় পুলিশ সদর দফতর তাদের মধ্যে ডিআইজি থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা ১৬ জন, পুলিশ পরিদর্শক ৫ জন এবং উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা ১৪ জন। অন্যদের মধ্যে এএসআই ৯ জন, নায়েক ৭ জন ও কনস্টেবল ১৩৬ জন।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, কাজে যোগ না দেওয়া শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান (স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসরের আবেদন করেছেন), ডিএমপির সাবেক যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ডিবির সাবেক যুগ্ম কমিশনার খোন্দকার নুরুন্নবী, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার এস এম মেহেদী হাসান, রংপুর মহানগর পুলিশের (আরপিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার উত্তম কুমার পাল এবং পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার। পুলিশ সুপার থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আত্মগোপনে থাকা আট কর্মকর্তা হলেন-আরপিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবু মারুফ হোসেন, আরপিএমপি ডিবির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহ নূর আলম, ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান ও মো. ইফতেখার মাহমুদ, আরপিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুজ্জামান ও মো. আল ইমরান হোসেন এবং সিরাজগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার রানা। পরিদর্শক পদে কর্মস্থলে যোগ না দেওয়া কর্মকর্তারা হলেন-লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানার সাবেক ওসি মো. মাহফুজার রহমান, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পরিদর্শক খাদেমুল বাহার বিন আবেদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর সার্কেলের পরিদর্শক মো. ইউসুফ হাসান, ডিএমপির সাবেক পরিদর্শক জাকির হোসাইন ও ঢাকা জেলা পুলিশ পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন।
বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো পুলিশ কর্মকর্তারা আত্মগোপনে : ৫ আগস্টের পর থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অপরাধী তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামানসহ শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত ২৩ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। অবসরে যাওয়ার আগে তাদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে চলে যান।
গ্রেফতার হওয়া পুলিশের আলোচিত ৭ কর্মকর্তা : গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলির চালানোর ঘটনায় পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশের সাবেক দুই আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং এ কে এম শহীদুল হক, ডিবির ডিসি মশিউর রহমান, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহিল কাফী ও যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচিত অন্তত সাত সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন।
পলাতক হিসেবে শীর্ষে ডিবি হারুন : পুলিশের পলাতক কর্মকর্তাদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন। পলাতক হিসেবে হারুনকে পুলিশ সদর দফতরের তালিকায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও ৫ আগস্টের আগে-পরে সংঘটিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে হতাহতের ঘটনায় করা মামলায় আসামির তালিকায়ও শীর্ষে তিনি। এসব মামলার মধ্যে ২০১১ সালে যে ঘটনাকে কেন্দ্র এ কর্মকর্তা লাইমলাইটে আসেন সেই তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে নির্যাতনের মামলাও আছে। ১৩ বছর পর গত ১৯ আগস্ট জয়নুল আবদিন ফারুক নিজেই বাদী হয়ে ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। ৫ আগস্টের পর ডিবি কার্যালয়ে ‘হারুনের ভাতের হোটেল’-এর সমাপ্তি ঘটে।
দেশ ছেড়েছেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মীর রেজাউল আলম : গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এমএইচ ১০৩-এর একটি ফ্লাইটযোগে সিডনির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মীর রেজাউল আলম।
পলাতক বিপ্লব কুমার সরকার : এর আগে ১২ সেপ্টেম্বরে গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়ন সীমান্ত পথ দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে চলে গেছেন ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে কোনো একসময় তিনি ভারতে প্রবেশ করেন বলেও শোনা যায়। তবে পটপরিবর্তনের পর তিনি কর্মস্থলে যোগ দেননি।
Sharing is caring!