প্রজন্ম ডেস্ক:
ফায়ার সার্ভিসের ২০ ইউনিটের চেষ্টায় সাত ঘণ্টা পর মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে এসেছিল মধ্যরাতে লাগা সচিবালয়ের আগুন। তারও প্রায় চার ঘণ্টা পর একেবারে এই আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছেন ফায়ার ফাইটাররা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট নির্বাপণের কাজ শুরু। দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ইউনিট বেড়ে দাঁড়ায় ২০টিতে। টানা প্রায় ১১ ঘণ্টার বিরতিহীন চেষ্টায় নেভে আগুন।
এই সময়ে আব্দুল গনি রোডে মিনি ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত সোহানুর জামান নয়ন নামে এক ফায়ার সার্ভিস কর্মী। এ ছাড়া সৈয়দ মনিরুল ইসলাম নামে আরও একজন ফায়ার ফাইটার আহত হয়েছেন, যিনি বারিধারা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ।
সচিবালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেখানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রণালয়; ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; অর্থ মন্ত্রণালয়; অর্থ বিভাগ; আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর রয়েছে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কমিটির সদস্যসংখ্যা ৫ থেকে ১১ পর্যন্ত হতে পারে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লেগে তা ওপরে ছড়িয়েছে। ষষ্ঠ তলায় আনুমানিক রাত ১টা ৫০ মিনিটে আগুন ধরে। ১টা ৫২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। ১টা ৫৪ মিনিট থেকে তারা কাজ শুরু করে। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘কী হয়েছে তা আমরা দেখব। পুরোটা সার্চ করার পরে কিছু পাওয়া যায় কি না, আমরা জানাব।’
তবে আগুনের সূত্রপাত নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। সকালে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কী কারণে আগুনের সূত্রপাত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এর মধ্যে ১০টি ইউনিট সরাসরি কাজ করেছে। ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়িগুলো ভেতরে ঢোকানো যাচ্ছিল না। তাই গেট ভেঙে দুটি গাড়ি ঢোকানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসে ২১১ জন কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছে।
সচিবালয়ের এই আগুন পরিকল্পিত হতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নৌবাহিনীর সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার (পিও) আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যেখানে যেখানে আগুন লেগেছে, সব পুড়ে গেছে। আমরা সব এখনো আইডেনটিফাই করতে পারিনি, তবে করব। আমাদের নৌবাহিনীর টিম এখানে আছে, কাজ করছে।’
কেন এটি পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড মনে হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শর্টসার্কিটের আগুন লাগে এক জায়গা থেকে, সব জায়গায় একসঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে না। এই আগুন একসঙ্গে বিভিন্ন স্থানে লেগেছে।’
Sharing is caring!