প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দানব হয়ে ওঠা’ পুলিশ কর্মকর্তারা অধরা

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ০৯:১৫ পূর্বাহ্ণ
দানব হয়ে ওঠা’ পুলিশ কর্মকর্তারা অধরা

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

শেখ হাসিনা সরকারের আলোচিত-সমালোচিত পুলিশ কর্মকর্তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ পালিয়ে যাওয়া দু-একজন বাদে অন্য কর্মকর্তারা দেশে না-কি বিদেশে পালিয়ে গেছেন তা নিয়ে জনমনে এখনো নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কারও মতে, অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, আবার কেউ মনে করেন, এখনো দেশেই অনেকে লুকিয়ে রয়েছেন।

তবে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তারা কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তা নিয়েও জনমনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ব্যাপক অর্থ খরচ করে তারা সীমান্ত বা বিমানবন্দর পার হয়েছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। পাশাপাশি দেশে যদি কেউ থেকে থাকেন তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না- তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। জানা গেছে, এই কর্মকর্তারা এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজি মনিরুল ইসলাম, সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারসহ ‘দানব হয়ে ওঠা’ ওই সব পুলিশ কর্মকর্তা এখন কোথায় আছেন তা নিয়ে জনগণের স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। অথচ হাসিনা সরকারের রক্ষাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের একাধিক মামলা রয়েছে।

সাবেক আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যায়ের ১৮৪ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ডিবির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুনের বিরুদ্ধে অর্ধশত মামলা, বেনজীরের বিরুদ্ধে ৩টি, হাবিবুরের বিরুদ্ধে ৩৭টি, মনিরুলের বিরুদ্ধে ১১টি ও বিপ্লবের বিরুদ্ধে ২৯টি মামলা হয়েছে।

এ ছাড়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে হয়েছে ৪১টি মামলা। উপপরিদর্শক বা এসআইদের মধ্যে ডিবির এসআই অমিতাভ দর্জির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলা হয়েছে ৫ আগস্ট ও তার আগে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায়।

ডিএমপির সাবেক কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে হয়েছে ১টি মামলা, সিআইডির মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে ২টি, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে ৫টি এবং পুলিশ সদর দপ্তরের বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া অতিরিক্ত আইজি লুৎফুল কবীরের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে ২টি, পুলিশ সদর দপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি জামিল আহমেদের বিরুদ্ধে ১টি, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২টি, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেনের বিরুদ্ধে ১টি, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২টি, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান (অতিরিক্ত কমিশনার) মো. আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৫টি, সাবেক ডিআইজি রিপন সরদার ও খালিদ হাসানের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে। অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের বিরুদ্ধে ৫টি ও ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা হয়েছে।

এর মধ্যে সাবেক দুই আইজিপিসহ অন্তত ১০-১২ জন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া সাবেক ও বর্তমান অন্তত ১০০ জন গ্রেপ্তারের তালিকায় রয়েছেন। মামলার আসামি হওয়া এসব পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল কাফীসহ অনেকে এখন কারাগারে আছেন।

গত ৪ মে রাতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। বিমানবন্দরের সিসিটিভির ফুটেজে তার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে, সম্প্রতি সাবেক অতিরিক্ত আইজি মনিরের নয়াদিল্লিতে বসে কেনাকাটার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। একটি বেসরকারি টিভিতে সম্প্রতি ডিবি হারুনের সাক্ষাৎকার প্রচরিত হওয়ায় অনেকে ধারণা করছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন। তবে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলায় এখনো আলোচিত অনেক পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, ‘হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশের যেসব সদস্য এখনো কর্মস্থলে যোগদান করেননি, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। যারা এখনো কাজে যোগদান করেননি তাদের আমরা পুলিশ বলব না। তাদের ক্রিমিনাল বলব।’

পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া প্রসঙ্গে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিআইজি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশে-বিদেশে যেখানেই থাক না কেন মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেসব পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলা হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।

বিদেশে পালিয়ে যাওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব পুলিশ কর্মকর্তা পালিয়ে গিয়েছেন তাদের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনের (ইন্টারপোল) মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

Sharing is caring!