প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

পণ্যের দাম কমছেই না

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ০৯:১২ পূর্বাহ্ণ
পণ্যের দাম কমছেই না

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আলোচনা গত কয়েক দশকের। সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে বাজার- এমন আলোচনাও এখন পুরোনো। বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীরা দাম কমানোর আশ্বাস দিলেও কাজ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে তারাও চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে সব জেলার বাজার নজরদারিতে গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স। এসব টাস্কফোর্সের সদস্যরা বাজার পরিদর্শনে গেলে দাম কমে যায় এবং বের হলে দাম আগের অবস্থায় ফিরে যায়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রব্যমূল্য বাড়ার মূল কারণ বা সমস্যা এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে বাজার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার পরিবর্তনের পর বাজারে মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে এসেছে নতুন মুখ। পরিবহন ও দোকান থেকেও কমবেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে। অন্যদিকে গত ১৫/১৬ বছরে বিগত সরকারের কাছের লোক বলে পরিচিত গুটিকয়েক ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে বাজার চাহিদার বেশিরভাগ পণ্য আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ আছে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের অনেকে আগের মতো পণ্য আমদানি করছে না বা করতে পারছে না। এমনকি শুল্ক কমানোর পরও পণ্য আমদানি বাড়ছে না, বা বাড়লেও বাজারে আনা হচ্ছে না। ফলে বাজারে পণ্য সংকট থেকে যাচ্ছে এবং এ কারণে দাম কমছে না।

বাজার বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, ডলারসংকটের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। ফলে বাজারে পণ্য সরবরাহ বাড়ছে না।

 

দেশের নিত্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মওলা বলেন, এতদিন কিছু ব্যবসায়ী দেশের মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি পণ্য আমদানি করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের অনেকে বিভিন্ন ধরনের তদন্তের মুখে পড়েছেন। এতে তারা আগের মতো আর পণ্য আমদানি করতে পারছেন না বা করছেন না। ফলে বাজারে পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে ডলারসংকটের কারণে এখনো সাধারণ ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই স্বাভাবিকভাবে পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। ফলে বাজারে পণ্য সংকট কমছে না। আর যা-ও বা বিক্রি হচ্ছে তা বিক্রেতারাও সিন্ডিকেট করে দাম কমাচ্ছেন না। এ জন্য বর্তমান সরকারের গঠিত টাস্কফোর্স বাজার থেকে বের হয়ে গেলেই দাম বাড়ছে।

গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার পর্যবেক্ষক দল রাজধানীর বনানী কাঁচাবাজারে যান। পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন পণ্যের দাম ১৫ থেকে ৫০ টাকা কমে যায়। কিন্তু পর্যবেক্ষক দল বাজার ছাড়ার পর আবারও আগের বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।

বাজার পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা, ডিম প্রতি ডজন ১৬০ টাকা, আলু ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ ২৮০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১১৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কর্মকর্তারা বাজার ছাড়ার পরপরই গরুর মাংসের দাম বেড়ে ৭৮০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা, আলু ৬০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি বিক্রি করতে থাকেন ব্যবসায়ীরা।

এ বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, জরিমানা এড়াতে পরিদর্শনের সময় মন্ত্রণালয়ের মূল্য তালিকা মেনে চলতে বাধ্য হই। মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারিত দাম মেনে চলার জন্য আমাদের সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু এই দামে বিক্রি করা মানে আমরা কেবল আমাদের খরচ মেটাতে পারি।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার নানা খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। দ্রব্যমূল্য কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় দুই মাসে ছয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। কমেছে মাত্র দুটির। বাজারে এখন সবজির দাম ব্যাপক চড়া। ডিমের প্রতি ডজনের দর উঠেছে ১৭০ টাকায়। মুরগি ও মাছের দামেও স্বস্তি নেই। সব মিলিয়ে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট কমেনি। মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদ হার বাড়িয়ে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এদিকে মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে একটা জায়গায় স্থিতিশীল হয়েছে। কিন্তু সুদের হার ও ডলারের দামের কারণে নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়েছে।

জিনিসপত্রের দাম কয়েক মাসের মধ্যে দৃশ্যমানভাবে কমে আসবে এমন আশ্বাস দিয়ে এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, অনেকগুলো কারণে দাম বেড়ে গেছে, সেটা চট করে টেনে নামিয়ে আনা যাবে না। মূল্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। জিনিসপত্রের দাম কমাতে ইতোমধ্যে টাস্কফোর্স হয়েছে। আলু, পেঁয়াজ ও কীটনাশকের আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর সুফল যাতে ভোক্তা পর্যায়ে পাওয়া যায়, তা-ও নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্য সব পণ্যের দামও কমানোর চেষ্টা চলছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সুফল পেতে যে সময় লাগবে, সেটা মাননীয় উপদেষ্টার কথা থেকেই বোঝা যায়, তিনি কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাম কমার কথা বলেননি। বলেছেন ‘কয়েক মাস’।”

তিনি আরও বলেন, ‘দফায় দফায় হাতবদলের কারণেও দাম বেড়ে যায়। সে জন্য হাতবদলের সংখ্যা কমাতে হবে। ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের স্বার্থ না দেখে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ তথা তাদের ক্রয়ক্ষমতা বা সামর্থ্যের কথা চিন্তা করে দ্রুত বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে এদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এসব বিষয় বর্তমান সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।’

Sharing is caring!