প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে হাসিনার ফেরা

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪, ১২:১৬ অপরাহ্ণ
ভারতের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে হাসিনার ফেরা

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে যাওয়ার পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কথা বলে আসছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিভিন্ন সময়ে দিল্লির কাছে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ফেরত চাওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন সরকারের উপদেষ্টারা।

সোমবার পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে চিঠি দেওয়া হলেও, শেখ হাসিনাকে পাওয়া এত সহজ হবে না বলে মনে করছেন কূটনীতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ভারতের সঙ্গে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নির্ভর করবে ভারত সরকারের ইচ্ছার ওপর। আবার প্রত্যর্পণ চুক্তিতেও বাধা রয়েছে। তাছাড়া ভারত চাইলে বিষয়টি বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখতে পারে। যদিও চিঠির বিষয়ে ভারত কর্র্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভারতের সঙ্গে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির বিষয়ে ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলেন, এ ধরনের সব চুক্তিতেই নানা ‘ফাঁকফোকর’ থাকে যেগুলো কাজে লাগিয়ে আইনি বিশেষজ্ঞরা কয়েক মাস বা কয়েক বছর পর্যন্ত একটা অনুরোধকে স্থগিত করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও ভারতও একই ধরনের পথ নেবে।

ভারতের সাবেক কূটনীতিক টিসিএ রাঘবন গণমাধ্যমকে বলেন, বিপদের মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে ভারত যেভাবে আশ্রয় দিয়েছে, সেটাই ভারতের নীতি।

তাকে ‘আরও বড় বিপদে ফেলা’ ভারতের জন্য কোনো ‘অপশন’ হতেই পারে না।

অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তির আলোকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে। গতকাল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বাংলাদেশ ফেরত চেয়েছে। এটা ভারতকে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে ভারতকে নোট ভারবাল পাঠানো হয়েছে।’

এর আগে সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাকে (শেখ হাসিনা) প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে অনুরোধ জানাতে এরই মধ্যে আমাদের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের) চিঠি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে। আমাদের সঙ্গে তাদের একটা এক্সট্রাডিশন (প্রত্যর্পণ) চুক্তি আছেই।’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও ঢাকায় ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী প্রত্যর্পণ চুক্তি বিষয়ে বলেন, এ ধরনের চুক্তির আওতায় অনুরোধ মঞ্জুর হতে অনেক সময় বছরের পর বছর লেগে যায়। তিনি বলেন, মুম্বাইয়ে ২৬/১১’র জঙ্গি হামলার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত তাহাউর হুসেন রানা যিনি একজন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক; তাকে হাতে পাওয়ার জন্য ভারত চেষ্টা চালাচ্ছে সেই ২০০৮ সাল থেকে। অথচ ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে ১৯৯৭ সাল থেকে। ফলে এতদিনে তাকে তো ভারতের হাতে পেয়ে যাওয়াই উচিত ছিল, তাই না?

এই কূটনীতিক বলেন, শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতের কাছে কোনো অনুরোধ এলে সেটা যে কয়েক দিন বা কয়েক মাসের মধ্যেই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই।

কী আছে ভারত ও বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিতে : ভারত ও বাংলাদেশ ২০১৩ সালে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ২০১৬ সালে সংশোধিত হয়। এ চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে পলাতক আসামিদের দ্রুত এবং সহজে বিনিময়ের জন্য গৃহীত হয়েছে। বিশেষ করে, এটি ভারতীয় পলাতকদের, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যদের বাংলাদেশে লুকিয়ে থাকার প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়।

এ ছাড়া বাংলাদেশও জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) মতো সংগঠনের কারণে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল, যেখানে তাদের অপারেটররা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের মতো রাজ্যে লুকিয়ে ছিল। এ পরিস্থিতিতে, চুক্তিটি উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

২০১৫ সালে এ চুক্তির ফলে ভারত সফলভাবে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রত্যর্পণ করতে সক্ষম হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশও ভারতকে আরও কিছু পলাতক হস্তান্তর করেছে।

চুক্তির মূল দিক হলো, ভারত ও বাংলাদেশ এমন ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণের জন্য সম্মত হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, অভিযোগ আনা হয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এমন সব অপরাধ, যার সর্বনিম্ন সাজা এক বছরের কারাদণ্ড। এর মধ্যে আর্থিক অপরাধও অন্তর্ভুক্ত। অপরাধটি প্রত্যর্পণযোগ্য হতে হলে দ্বৈত অপরাধের নীতি প্রযোজ্য হতে হবে, অর্থাৎ অপরাধটি উভয় দেশে শাস্তিযোগ্য হতে হবে।

অতিরিক্তভাবে চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের কমিশনে সহযোগী হিসেবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বা সহায়তা, প্ররোচনা, প্ররোচনা বা অংশগ্রহণ’ করার ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ মঞ্জুর করা হবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো, যার হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি ‘রাজনৈতিক প্রকৃতি’র হয়, তাহলে সেই অনুরোধ খারিজ করা যাবে। তবে কোন কোন অপরাধের অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক’ বলা যাবে না, সেই তালিকাও বেশ লম্বা। এর মধ্যে হত্যা, গুম, অনিচ্ছাকৃত হত্যা ঘটানো, বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো এবং সন্ত্রাসবাদের মতো নানা অপরাধ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এ চুক্তি ভারতের এবং বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনগত ভিত্তি প্রদান করে, যা তাদের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং অপরাধ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ফেরত আনা সম্ভব : গত অক্টোবরে শেখ হাসিনাসহ পলাতকদের গ্রেপ্তার করে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে হাজির করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে থাকা দুই দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তির বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পায়। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শুরুর পর থেকে আলোচনায় আসে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি।

সরকারের পক্ষ থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জোরালোভাবে বলা হলেও কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রত্যর্পণ বা ইন্টারপোলের রেড নোটিস দুভাবেই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা দিল্লির ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় কোনো দেশ যদি কোনো আসামিকে ফেরত দিতে না চায় তাহলে যেকোনো কারণ দেখিয়ে ইন্টারপোলের আবেদন নাকচ করে দিতে পারে।

প্রত্যর্পণ চুক্তি বিষয় উল্লেখ করে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন করার বিষয়টি শুধু আইনি নয়, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেরও বিষয়। ভারত সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের সম্পর্ক এবং বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্কও এর সঙ্গে যুক্ত। ইন্টারপোল বা চুক্তির আলোকে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাওয়ার বিষয়টি অনেক জটিল বলে মনে করেন এ কূটনীতিক।

ঢাকা ও দিল্লির একাধিক কূটনীতিক অভিন্ন মত পোষণ করে বলেন, চুক্তির মধ্যে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। নানা আইনি জটিলতা বা মারপ্যাঁচ দেখিয়েও সেই অনুরোধ ফেলে রাখতে পারে দিনের পর দিন। তারা মনে করেন, শেখ হাসিনা প্রায় ৫০ বছর ধরে ভারতের সবচেয়ে আস্থাভাজন ও বিশ^স্ত বন্ধুদের একজন। ফলে তাকে বিচারের জন্য বা দ-িত হলে শাস্তিভোগের জন্য বাংলাদেশের হাতে ভারত তুলে দেবে বাস্তবে এ সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই চলে।

এর আগে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারির মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের ফেরত আনার প্রক্রিয়াও শুরু করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারে রেড নোটিস জারির জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পুলিশিং সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিস।

ইন্টারপোলের রেল অ্যালার্টের বিষয়েও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেন, ইন্টারপোল কাউকে রেড নোটিস দিলেই যে তাকে দেশে ফেরত আনা যাবে, বিষয়টি একদমই তেমন নয়। ইন্টারপোল বা প্রত্যর্পণ কোনোভাবেই বিষয়টি সহজ নয়। এটা দীর্ঘ সময়ের বিষয়। যার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তাকে যে দেশে নেওয়া হবে সেই দেশের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। এখানে রাজনৈতিক কোনো কারণ আছে কি না, সেগুলোও বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কাউকে ফৌজদারি অপরাধে আটক দেখিয়ে আনা খুব একটা সহজ নয়।

ইন্টারপোল ও রেড নোটিস : ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন বা ইন্টারপোল হলো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। এ সংস্থাটি সারা বিশ্বের পুলিশ এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞদের একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত ও সমন্বয় করে। এ সংস্থার প্রধান কাজ হলো অপরাধীদের ধরতে ইন্টারপোলের সঙ্গে সংযুক্ত পুলিশকে সহায়তা করা। যাতে করে বিশ্বের সব পুলিশ অপরাধের বিরুদ্ধে এক হয়ে কাজ করতে পারে।

ইন্টারপোলের এমন একটি ডেটাবেস রয়েছে যেখানে অপরাধীদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য যেমন অপরাধীর ছবি বা স্কেচ, ক্রিমিনাল প্রোফাইল, ক্রিমিনাল রেকর্ড, চুরির রেকর্ড, চুরি হওয়া পাসপোর্ট, যানবাহন এবং জালিয়াতির তথ্য ইত্যাদি পাওয়া যায়। দুর্নীতি, যুদ্ধাপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, মানব পাচার, অস্ত্র পাচার, মাদক পাচার, সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, শিশু সহিংসতাসহ ১৭ ক্যাটাগরির অপরাধ তদন্তে ইন্টারপোল তার সদস্য দেশগুলোকে সহায়তা দিয়ে থাকে।

ইন্টারপোলের নোটিস কমলা, নীল, হলুদ, সবুজ, কালোসহ সাত ধরনের হয়ে থাকে। এর মধ্যে রেড নোটিস হলো সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। মূলত গুরুতর ও বিপজ্জনক অপরাধীদের ক্ষেত্রে রেড নোটিস জারি করা হয়। রেড নোটিসকে ইন্টারপোল অনেক বেশি গুরুত্বসহকারে দেখে। কারণ ওই ব্যক্তিকে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচনা করা হয়।

একবার কারও বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি হলে ইন্টারপোল তার সব সদস্য দেশকে ওই রেড নোটিসপ্রাপ্ত অভিযুক্তের দিকে নজর রাখতে বলে এবং তার প্রত্যর্পণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করতে বলে। তবে রেড নোটিস কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয় এবং ইন্টারপোল কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নয়, যারা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারে।

ইন্টারপোল যেভাবে কাজ করে : একটি দেশের আসামি অপরাধ করার পর যদি অন্য দেশে চলে যায়, তখন সেই আসামিকে ধরতে বা ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা লাগে। সংস্থাটি অপরাধের তদন্ত, ফরেনসিক ডেটা বিশ্লেষণ এবং একই সঙ্গে পলাতক আসামিকে খুঁজতে সহায়তা করে। আর এর জন্য ওই দেশকে সন্দেহভাজন অপরাধীর যাবতীয় তথ্য দিয়ে রেড নোটিস জারির জন্য আবেদন করতে হয়।

যদিও ইন্টারপোল কোনো আসামিকে ধরিয়ে দেওয়ার আবেদন পেলেই তার বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করতে পারে না। কোনো দেশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করার জন্য ইন্টারপোল সদর দপ্তরে আবেদন জানালে তার সঙ্গে ওই অভিযুক্তের অপরাধবিষয়ক যাবতীয় কাগজপত্র, মামলা কপি ইত্যাদি সংগ্রহ করে ইন্টারপোলের কাছে দিতে হয়। এরপর ইন্টারপোল সেই কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে যে, তার বিরুদ্ধে কোনো নোটিস জারি করা হবে কি না। নোটিস জারির ক্ষেত্রে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া না হওয়া তাদের কাছে মুখ্য নয়। ইন্টারপোল কারও বিরুদ্ধে একবার রেড নোটিস জারি করলে তা সংস্থাটির সদস্যভুক্ত ১৯৪টি দেশের কাছে পাঠানো হয়। তবে কোনো দেশ যদি তাদের নিজস্ব বিবেচনায় বা মানবাধিকার প্রশ্নে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, সে ক্ষেত্রে ইন্টারপোল বা তাদের জারিকৃত রেড নোটিসের মাধ্যমে কিছু করা সম্ভব নয়।

যদি গ্রেপ্তার করতেই হয়, তাহলে অভিযুক্ত যে দেশে আছেন সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তারা নিজ দেশের বিচারিক আইন মেনে চলবে অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়া নির্ভর করে অভিযুক্ত যে দেশে রয়েছেন তাদের ওপর। তবে কারও বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস থাকলে তাকে যে দেশে খুঁজে পাওয়া যায় সেই দেশ তার সম্পদ জব্দ, চাকরিচ্যুত এবং তার ভিসা প্রত্যাহার করে দিতে পারে। রেড নোটিস থাকলে একটি দেশ আরকটি দেশে থাকা তাদের অপরাধীকে ধরিয়ে দিতে শুধু সাহায্য চাইতে পারে।

নোটিস ছাড়া এক দেশের অপরাধীকে অন্য দেশে খুঁজে বের করাও কঠিন। সে ক্ষেত্রে রেড নোটিস হলো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা, নজরদারি করা ও গ্রেপ্তার করার অনুরোধ। ইন্টারপোল শুধু অপরাধ দমনে এ তথ্য ভাগ করে থাকে। বাংলাদেশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রেড নোটিস জারি করা আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনা গেছে। ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিসের তালিকায় বর্তমানে ৬৪ বাংলাদেশির নাম রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারি অপরাধ ও বিভিন্ন হত্যা মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি।

Sharing is caring!