প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বিমানবন্দরে ধরা পড়ছে যুক্তরাজ্যের জাল ভিসা

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১০, ২০২৪, ০৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
বিমানবন্দরে ধরা পড়ছে যুক্তরাজ্যের জাল ভিসা

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

বিমানবন্দরে ধরা পড়ছে যুক্তরাজ্যের জাল ভিসা। এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ছাড়া মালয়েশিয়ার জাল ভিসার বিষয়টি ধরা পড়লেও এবারই প্রথম যুক্তরাজ্যের জাল ভিসা পাওয়া গেছে। গত ৪ ও ৬ ডিসেম্বর পরপর দু’দিন জাল ভিসা ধরা পড়ে। এদের মধ্যে এক ভুক্তভোগী বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আর অপর জাল ভিসাধারী দুই ব্যক্তি বিমানবন্দরের ভেতরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মরতদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

ঘটনার পর ঢাকায় যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের প্রতিনিধি দল বিমানবন্দরে এসে সংশ্লিষ্টদের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাল ভিসাধারী ব্যক্তিরা কীভাবে পালিয়ে গেলো—তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা জানা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর রাত পৌনে ১১টার দিকে মাদারীপুরের শিবচর থানার সানিউর ইসলাম শিপলু নামে এক ব্যক্তি যুক্তরাজ্যে যাওয়ার উদ্দেশে সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে চেক-ইন করতে যান। তখন তার ভিসা দেখে সেখানকার কর্মকর্তার সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে তার ভিসাটি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। পরবর্তী সময়ে শিপলু এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের অফিসে গিয়ে প্রতারিত হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেন। ঘটনা জানাজানি হলে বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে ছুটে যান। তারাও ভিসাটি জাল বলে নিশ্চিত করেন।

বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় প্রতারণার শিকার শিপলুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শিবচরে তার এক চাচার পরিচিত ব্যক্তি আসাদ ও লোকমানের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার ব্যাপারে তার ১৫ লাখ টাকার চুক্তি। তিনি তাদের ৫ লাখ টাকা অগ্রিমও দিয়েছেন।

সানিউর ইসলাম শিপলু বলেন, তারা যে আমাকে জাল ভিসা দিয়েছে, সেটা আসলে আমরা কেউই বুঝতে পারিনি। বিমানবন্দরে আসার পর ভিসাটি ভুয়া বলে ধরা পড়ে। এরপর আসাদ ও লোকমানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি।

এই ঘটনার একদিন পরই (৫ ডিসেম্বর) রুহুল আমিন ও আব্দুল হালিম নামে আরও দুই ব্যক্তি একই ধরনের জাল ভিসা নিয়ে বিমানবন্দরে সৌদি এয়ারলাইন্সে চেক-ইনের জন্য আসেন। জাল ভিসার বিষয়টি বুঝতে পেরে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এভিয়েশন সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের খবর দেন। একইসঙ্গে যুক্তরাজ্য হাইকমিশন থেকেও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়। পরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এভসেক কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। এরই মাঝে জাল ভিসাধারী রুহুল আমিন ও আব্দুল হালিম তাদের পাসপোর্ট রেখেই বিমানবন্দর থেকে সটকে পড়েন।

এদিকে বিমানবন্দরের ভেতর থেকে যুক্তরাজ্যের মতো একটি দেশের জাল ভিসাধারীরা কেমন করে পালিয়ে যায়, এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিদেশ পাঠানোর নামে জাল ভিসা দিয়ে একটি চক্র যেখানে মানুষকে প্রতারিত করছে, সেখানে কোনও ধরনের নজরদারির মধ্যে না রেখে ওই দুই ব্যক্তিকে চলে যেতে দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ ব্রিটিশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে আগে নিরাপত্তা দায়িত্বে ছিল এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। বর্তমানে তাদের স্থলে কাজ করছে এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক)। এ বিষয়ে এভসেকের পরিচালক উইং কমান্ডার জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন না ধরায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

 

ব্রিটিশ হাইকমিশনের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা জিনাত আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও কথা বলতে রাজি হননি।

অপরদিকে চাঞ্চল্যকর বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিমানবন্দর থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টিম কারা যুক্তরাজ্যের জাল ভিসা তৈরি করছে, সেটি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

ডিএমপি সদর দফতরের উপ-কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, জাল ভিসা তৈরি চক্রের বিরুদ্ধে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। এ ঘটনায় কারা কীভাবে জড়িত তা উদঘাটনে আমরা কাজ করছি।

জানা যায়, এর আগে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমানসহ কয়েকটি দেশের ভিসা জাল হওয়ার খবর প্রায়ই শোনা যেতো। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতারও করতো। তবে বেশ কিছু দিন যাবৎ যুক্তরাজ্যের ভিসা জাল হওয়ার খবর আসছে।

অনেকেই বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে অ্যাম্বাসিতে সরাসরি যেতে হয়। কিন্তু যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে সেটি করতে হয় না। এ কারণে একশ্রেণির অপরাধী এই সুযোগ নিচ্ছে।

অতি সম্প্রতি বিমানবন্দরে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। বিদেশ থেকে আনা প্রবাসী যাত্রীর মালামাল ছিনতাইয়ের সময় র‌্যাব-পুলিশের ৩ জনসহ ৪ জন আটক হয়। এছাড়া সক্রিয় হয়ে উঠেছে দেশি-বিদেশি মানবপাচারকারী। ডোমেস্টিক টার্মিনালে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া গত কয়েক দিনে বিমানবন্দরে প্রায় ২০ কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে।

Sharing is caring!