প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে বাংলাদেশি মিশনগুলো টার্গেট করেছে উগ্রবাদীরা

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৩, ২০২৪, ০৭:৫০ পূর্বাহ্ণ
ভারতে বাংলাদেশি মিশনগুলো টার্গেট করেছে উগ্রবাদীরা

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলো টার্গেট করছে সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোক। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে– এ ধরনের একটি অপপ্রচারের ওপর ভিত্তি করে সম্প্রতি মুম্বাইতে বাংলাদেশ মিশনে একটি পিটিশন দিয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোক। এরপর গত সপ্তাহে কলকাতায় পিটিশন দেওয়ার সময়ে বাংলাদেশ মিশনের সীমানা প্রাচীরের কাছে পৌঁছে যায় হিন্দু লোকজন।

এরপরের ঘটনা ঘটেছে সোমবার (২ ডিসেম্বর) ত্রিপুরার আগরতলায়। সেখানে কিছু উগ্রবাদী কিছু লোক পিটিশন দেওয়ার সময়ে বাংলাদেশ মিশনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা দূতাবাসের কিছু ক্ষতি করেছে বলে জানা গেছে। গোটা বিষয়টিকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন সাবেক কূটনীতিকরা। তাদের মতে, এর ফলে ভারতের স্বার্থরক্ষা হচ্ছে কিনা সেটি দেখা দরকার।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতীয় প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের বিষয়টি কোনও গোপন বিষয় নয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দুই দেশের সম্পর্কের রসায়ন ভিন্ন হয়ে গেছে। ভারতের সরকার, মিডিয়া, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশবিরোধী নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’

এর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি ভারতীয়দের ইগোর কারণে হতে পারে। শেখ হাসিনার সরকারকে সর্বত্র সহায়তা দেওয়ার পরও ক্ষমতায় রাখা সম্ভব হয়নি– এটি হয়তো তাদের মনঃকষ্টের কারণ হতে পারে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। সেখানে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালানো হলে ভারতীয় রাজনীতিতে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়।’

আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের মন্তব্যটি করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে মাথায় রেখে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে— বাংলাদেশের হিন্দুদের পক্ষে কথা বলে তিনি পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের মন জয় করতে চাইছেন। এটি হিসাব-নিকাশ করেই বলা হয়েছে।’

 

ত্রিপুরায় বাংলাদেশ মিশনের ক্ষতি

বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে– এ অভিযোগ তুলে একটি পিটিশন দাখিলের জন্য সোমবার (২ ডিসেম্বর) ত্রিপুরায় বাংলাদেশ মিশনে যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু উগ্রবাদী লোক। উত্তেজিত এই লোকেরা ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং মিশনের ক্ষতি করে। পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই তারা ক্ষতি করে বসে।

এ বিষয়ে দিল্লি থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণ ভাঙার ঘটনাটি গভীরভাবে দুঃখজনক। কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি কোনও অবস্থাতেই লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং সে দেশে বাংলাদেশের অন্যান্য ডেপুটি বা সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য ভারত সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

 

অন্যান্য মিশনে হামলার আশঙ্কা

দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ছাড়াও ত্রিপুরা, আসাম, মুম্বাই ও চেন্নাইতে বাংলাদেশের উপ ও সহকারী হাইকমিশন রয়েছে। পাঁচটি মিশনের মধ্যে তিনটি ইতোমধ্যে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘চেন্নাইতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে পিটিশন দাখিলের সম্ভাবনা কম। এর কারণ দক্ষিণে বিজেপি বা হিন্দুত্ববাদের প্রভাব কম। দীর্ঘদিন পরে এবারের লোকসভা নির্বাচনে তারা গোটা দক্ষিণে একটি আসনে জয়লাভ করেছে।’

দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস লক্ষ্যবস্তু হতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি বলা মুশকিল। উগ্রবাদীরা কী করবে, এটি তারাই ভালো জানে।’

 

লাভ-ক্ষতি

রাষ্ট্রব্যবস্থা জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের বর্তমান নীতি তাদের জাতীয় স্বার্থ কতটুকু রক্ষা করছে– এটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘ভারতে রাজনীতিবিদ, উগ্রবাদী হিন্দু ও মিডিয়া ব্যবহার করে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে ভারতের কী লাভ হচ্ছে সেটি পরিষ্কার নয়।’

তিনি বলেন, ‘এর ফলে দুপক্ষেরই ক্ষতি হচ্ছে। অপপ্রচার চলতে থাকলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভালো হওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকে না। ভারতীয়রা যত তাড়াতাড়ি এটি বুঝবে– আঞ্চলিক শান্তির জন্য সেটি ভালো হবে।’

Sharing is caring!