প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

রাজনৈতিক সমীকরণে নির্ভর করছে তারেক রহমানের ফেরা

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২, ২০২৪, ০৩:০২ অপরাহ্ণ
রাজনৈতিক সমীকরণে নির্ভর করছে তারেক রহমানের ফেরা

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরছেন তা নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন মহলে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়েছে। দলটির শীর্ষ নেতারাও তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফিরছেন বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তবে ঠিক কবে ফিরবেন, সে বিষয়ে দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। কয়েকটি রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর তার দেশে ফেরা নির্ভর করছে।

 

তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এখনো চার মামলায় সাজা আছে। শুধু আইনি প্রক্রিয়ায় সব মামলা থেকে খালাস পেলেই যে তিনি দেশে ফিরবেন তা নয়; কিছু রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয় আছে, সে বিষয়েরও সমাধান করতে হবে।

 

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান কী, দলের পক্ষ থেকে সেটিও বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালী দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিও বিবেচনায় আনা হচ্ছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, দণ্ডপ্রাপ্তসহ সব মামলা থেকে খালাস পেলে তার দেশে ফেরার একটি দরজা খুলবে। দেশি-বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মহলের সঙ্গে তার ন্যূনতম সমঝোতার বিষয়ও রয়েছে।

 

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে পাঁচটি মামলায় সাজা হয়, তার মধ্যে একটিতে তিনি খালাস পেয়েছেন। বাকি চারটি মামলা বিচারাধীন।

বিএনপির তিনজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে সুনির্দিষ্ট বিষয় জানা যায়নি। দলীয় ফোরামে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের আলোচনাও হয়নি। নেতারা জানান, তার দেশে ফেরার ব্যাপারে যেমন দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয় আছে, তেমনি এটি পারিবারিক বিষয়ও। তিনি কবে ফিরতে পারেন, সে বিষয়ে চলতি মাসের মধ্যে একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

 

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, নাশকতা, গ্রেনেড হামলা ও দুর্নীতির অভিযোগে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ৮৪টি মামলা করা হয়।

ওয়ান-ইলেভেনের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এসব মামলা হয়েছে। এই মামলাগুলোর মধ্যে ৬২টির মতো মানহানির মামলা রয়েছে বলে জানান তার আইনজীবীরা।

 

২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্য যান। তখন থেকেই তিনি লন্ডনে রয়েছেন। লন্ডনে থাকাকালে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তার মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন ‘সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান’ তারেক রহমান। সেখানে থেকেই তিনি দল পরিচালনা করছেন।

 

৮৪ মামলার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৯টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে কোনোটিতে তিনি খালাস পেয়েছেন, কোনো মামলা বাতিল করা হয়েছে। আবার কোনো মামলায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা, সাজানো পাঁচ মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। আজ (রবিবার) এক মামলায় (২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা) যেভাবে তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন, বাকি চার মামলায়ও তিনি ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা করছি।’

 

 

যেসব মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান

 

মানি লন্ডারিং মামলা : বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর একটি মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক হাইকোর্টে আপিল করে। ওই আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ২১ জুলাই বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।

 

অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে দুদকের আপিলে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছিলেন হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল বিচারাধীন।

 

আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন : জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগের মামলায় ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে ৯ বছর এবং তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন।

 

মানহানির মামলা : ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার ও পাকবন্ধু আখ্যা দিয়ে বেশ কিছু বক্তব্য দেন তারেক রহমান। এতে বঙ্গবন্ধুর সম্মানহানি হয়েছে জানিয়ে নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বিশ্বাস জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। নড়াইলের একটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন।

Sharing is caring!