প্রজন্ম ডেস্ক:
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘন কুয়াশা বা খারাপ আবহাওয়ায় ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য আইএলএস-২ সিস্টেম স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে ৫ কোটি টাকা। আগামী মাসের প্রথম দিকে বিদেশি ফ্লাইটের মাধ্যমে এই প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক উদ্বোধন করা হবে। ফলে উন্নত প্রযুক্তি না থাকায় শীতকালে যে ফ্লাইট বিপর্যয় হতো তা আর হবে না। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভিজিবিলিটি ৪০০ মিটার পর্যন্ত হবে, আগে যা ৮০০ পর্যন্ত ছিল। বেবিচক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আধুনিক সময়ে এসে আইএলএস ক্যাটাগরি-২ প্রযুক্তি স্থাপন ভিত্তিহীন ও অর্থের অপচয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন আইএলএস-৩ ও আইএলএস-৩ (বি) ব্যবহার করছে।
আইএলএস-৩ প্রযুক্তির মাধ্যমে রানওয়ের ভিজিবিলিটি ১০০ মিটারের মধ্যে থাকলে বিমানবন্দরে অবতরণে পাইলটের কোনো সমস্যা হয় না। পাকিস্তানের ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আর ভারতের কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যবহৃত হচ্ছে আইএলএস-৩ (বি)। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ৫০ মিটার দৃষ্টিসীমার মধ্যেও উড়োজাহাজ অবতরণ করানো যায়। একমাত্র আধুনিক আইএলএস পদ্ধতির সাহায্য ছাড়া কুয়াশা ঢাকা রানওয়েতে কোনো বৈমানিকের পক্ষে উড়োজাহাজ অবতরণ করানো সম্ভব নয়। গত বছর থেকে আইএলএস-২ স্থাপনের কাজ শুরু হলেও তা শেষ হয়নি। বলা হচ্ছে, এ বছর হয়ে যাবে।
শাহজালালে আইএলএস-২ প্রযুক্তির মাধ্যমে ৪০০ মিটার দৃষ্টিসীমার মধ্যে উড়োজাহাজ অবতরণ করা যাবে। এতে কিছুটা উপকার হবে। তবে আবহাওয়া বেশি বৈরী হলে ফ্লাইট বিপর্যয় দেখা দেবে। আমাদের দ্রুত আইএলএস-৩ এ আপগ্রেড করতে হবে, তা হলে ১০০ মিটার পর্যন্ত ভিজিবিলিটি পাওয়া যাবে। যত দ্রুত হবে তত মঙ্গল।
বেবিচক বলছে, শাহজালালে স্থাপিত আইএলএস-১ অনেক পুরোনো প্রযুক্তি। এর ফলে খারাপ আবহাওয়া বা কুয়াশায় ভিজিবিলিটি ৮০০ মিটার পর্যন্ত হয়। এখন আইএলএস-২ তে উন্নীত হওয়ায় ৪০০ মিটার পর্যন্ত ভিজিবিলিটি থাকবে। ফলে ফ্লাইট বিপর্যয় রোধ হবে, ঘন কুয়াশায়ও উঠতে-নামতে পারবে বিমান, কমবে ভোগান্তি। তবে এই সিস্টেমকে আপগ্রেড করে আইএলইস-৩ এ রূপান্তর করলে প্রচণ্ড খারাপ আবহাওয়ায়ও কোনো সমস্যা হবে না। শিগগিরই সেটিও করা হবে। বিশ্বের বেশিরভাগ বিমানবন্দরে এখন আইএলএস-৩ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। আইএলএস-২ না করে আইএলএস-৩ করা যায় না। এখন আপগ্রেড করা সহজ হবে।
এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত বৈরী আবহাওয়া বা ঘন কুয়াশার কারণে পাইলট খালি চোখে রানওয়ে দেখতে না পারলে নিরাপদ অবতরণের জন্য বিমানবন্দরগুলোতে আইএলএস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে পাইলটকে এক ধরনের বেতার তরঙ্গ পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে সহজেই রানওয়ের অবস্থান শনাক্ত করে ফ্লাইট অবতরণ করতে পারেন পাইলট। এখন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে আইএলএস আছে, তার দৃষ্টিসীমা ৮০০ মিটার। শীতকালে ঘন কুয়াশায় প্রায়ই বিমানবন্দরের রানওয়েতে দৃষ্টিসীমা নেমে আসে ৫০ থেকে শূন্য মিটার পর্যন্ত। পুরোনো আইএলএস প্রযুক্তির কারণে গত বছরও ফ্লাইট বিপর্যয় দেখা দেয়। শাহজালালে নামতে না পেরে অসংখ্য ফ্লাইটকে ঢাকার বাইরে বা পাশের দেশে অবতরণ করতে হয়। এতে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলোকে।
বেবিচক বলছে, ৫ কোটি ডলার দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আইএলএস-২ প্রযুক্তি কেনা হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চলতি ১ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন রাতে সাড়ে ৩ ঘণ্টা রানওয়েতে মেইনটেন্যান্সে ও আইএলএস-২ ইন্সটলেশনের জন্য রানওয়ের কার্যক্রম ও ফ্লাইট অপারেশন সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়। কাজ শেষ হয়েছে। আগামী মাসের শুরুতে বিদেশি একটি ফ্লাইট দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তি উদ্বোধন করা হবে। এরপর আইকাওর নির্দেশনা অনুযায়ী উন্মুক্ত করা হবে। এরপরও আবহাওয়া যদি বেশি খারাপ হয় সে জন্য ফ্লাইট সিডিউল যেন ঠিক থাকে সে জন্য ঢাকার বাইরে বিমানবন্দর প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বছরের পর বছর ধরে এ সমস্যা চলছে। এটি নিয়ে বেবিচকের গাফিলতি আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন আইএলএস-৩ ও আইএলএস-৩ (বি) ব্যবহার করছে সেখানে বেবিচক এখন আইএলএস-২ স্থাপন করছে। উচিত ছিল একবারে আইএলএস-৩ করা। আমাদের দ্রুত আইএলএস-৩ প্রযুক্তির দিকেই যেতে হবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জানান, উন্নত প্রযুক্তির আইএলএস-২ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই পরীক্ষামূলকভাবে ফ্লাইট শুরু হবে।
এ বিষয়ে বেবিচক সদস্য একেএম জিয়াউল হক বলেন, শাহজালালে আইএলএস-২ স্থাপন করা হয়ে গেছে। এটি কোরিয়ান প্রযুক্তি। আগামী মাসের প্রথম দিকে বিদেশি একটি ফ্লাইট দিয়ে এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হবে। এখনও সিডিউল হয়নি। এরপরে আইকাওর নিয়ম অনুযায়ী ২৮ দিন পর অপারেশনে যাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, একবারে আইএলএস-১ থেকে ৩ এ যাওয়া যায় না। এখন ২ সম্পন্ন হওয়ায় ৩ এ আপগ্রেড করা সহজ হবে। এখন ৪০০ মিটার পর্যন্ত ভিজিবিলিটি থাকবে। আইএলএস-৩ এ আপগ্রেডেশন হলে আর কোনো সমস্যা হবে না।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com