প্রজন্ম ডেস্ক:
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও খুনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের প্রভাবশালী ২২ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই), এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ (র্যাব) বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। আলোচিত ‘আয়নাঘর’ এর সঙ্গে এসব কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ইমিগ্রেশনে জরুরি বার্তা পাঠানোর নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে। গত ১৮ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে পাঠানো চিঠিতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে ২২ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
পাসপোর্ট বাতিলের জন্য পাঠানো তালিকার এক নম্বরে রয়েছেন লে. জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবরের নাম। তিনি শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১১ সালের ২২ জুন পর্যন্ত যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। তালিকাভুক্ত লে. জেনারেল আকবর হোসেন, সাইফুল আবেদীন, সাইফুল আলম, আহমেদ তাবরেজ শামশ চৌধুরী, মেজর জেনারেল হামিদুল হক বিভিন্ন সময়ে ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের আমলে গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
তালিকায় আরও রয়েছেন মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদ, মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন, মেজর জেনারেল কবির আহমেদ, মেজর জেনারেল শেখ মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তানভির গনি চৌধুরী, কর্নেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান সাবেরী খান, সাবেক র্যাব কর্মকর্তা কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন, লে. কর্নেল কিসমত হায়াৎ, লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ, লে. কর্নেল মেহেদী হাসান, মেজর রাহাত উস সাত্তার, ওয়ারেন্ট অফিসার জিয়া-উর-রহমান এবং ওয়ারেন্ট অফিসার ইমরুল কায়েস। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও রয়েছেন, সাবেক পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী (ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন। র্যাব-১১-এর সাবেক কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে গুম ও ক্রসফায়ারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
গত ১৮ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির অনুরোধ অনুযায়ী কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। তদন্তের প্রয়োজনে বর্ণিত ব্যক্তিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে লক্ষ্যে তাদের পাসপোর্ট বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো গুম কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, বর্ণিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ৯ জন ডিজিএফআইয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত বিশেষ যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল বা জেআইসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলের বিভিন্ন সময় তারা সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান লে. জেনারেল সাইফুল আলম, লে. জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী এবং মেজর জেনারেল হামিদুল হককে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ডিজিএফআইয়ের অভ্যন্তরে সিটিআইবি নামক শাখায় দায়িত্ব পালনকারী ৭ কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা বিভিন্ন সময় র্যাবে সংযুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে লে. জেনারেল এস এম মতিউর রহমান ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি), কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন র্যাব গোয়েন্দা শাখার উপপরিচালক, র্যাব-১-এর অধিনায়ক এবং এডিজি ছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন ছিলেন সিটিআইবির কর্নেল জিএস। তিনি যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানতে পেরেছে গুম কমিশন। এর বাইরে পাসপোর্ট বাতিলের তালিকায় থাকা কর্নেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান সাবেরী খান ডিজিএফআই সদর দপ্তরের মেডিকেল অফিসার ছিলেন।
পাসপোর্ট বাতিলের জন্য গত ১০ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো গুম কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, এ কমিশনের কার্যক্রম ফলপ্রসূ করতে তদন্ত চলাকালে ওই ব্যক্তিদের দেশত্যাগে বিরত রাখার জন্য তাদের পাসপোর্ট বাতিল করে সব ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে অবগত করাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত আবশ্যক। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবগত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করছি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাসপোর্ট অধিদপ্তরে পাঠানো হয় ১৮ নভেম্বর। এরপর অধিদপ্তরের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্টদের কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
তবে কর্মকর্তাদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২/৩ দিনের মধ্যেই তাদের পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। তাদের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে বাতিল সংক্রান্ত তালিকা পুলিশের বিশেষ শাখা এবং ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছেও পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com