প্রজন্ম ডেস্ক:
রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ বন্ধে মালিকদের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান এই খাতে শ্রমিক অসন্তোষ যেন থামছেই না। অনেকে বলছেন, পরিকল্পিতভাবে এই খাতকে অস্থিতিশীল করতে কাজ করছে শ্রমিকদের পাশাপাশি কিছু কারখানা মালিকও। বেশ কিছু মালিক ব্যবসা করলেও শ্রমিকদের বেতন দিতে গড়িমসি করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেতন না দিয়ে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের মালিক এখন বিদেশে পালিয়ে রয়েছেন। মালিক দেশে নেই—এমন যুক্তি দেখিয়ে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে শ্রমিকরা আন্দোলনের সুযোগ পাচ্ছেন। বিশেষ করে অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে দেশের পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করে। বেতন না পেয়ে সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর ও মিরপুরে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন।
সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, শ্রমিকদের বেতন সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এ সময় সড়কের উভয় পাশে যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা স্থানীয় তারা টেক্স ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিক। এটি টঙ্গীর আউচপাড়া নাইমুদ্দিন মোল্লা সড়কে অবস্থিত। কারখানাটিতে কাজ করেন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। তাদের অক্টোবর মাসের বেতন বকেয়া। নিয়ম অনুযায়ী চলতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করার কথা। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন না দেওয়ায় সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা।
এদিকে, শ্রমিকদের নামে করা মামলা প্রত্যাহার এবং বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুর সদর থানার বানিয়ারচালা (বাঘের বাজার) এলাকার অ্যাপারেলস-২১ লিমিটেড (লিথি গ্রুপ) কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে তারা মহাসড়কের বাঘের বাজার মণ্ডল ইন্টিমেন্টস পোশাক কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।
আগের দিন ১২ নভেম্বর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে পার্কের প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। কিছু শ্রমিক সরে গেলেও অবরোধ দীর্ঘক্ষণ ধরে স্থায়ী ছিল। এতে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। যদিও পরে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন তারা।
টঙ্গীর তারাগাছ অ্যাপারেলসের প্রায় ২ হাজার শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন। কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বস্ত করেন নভেম্বরের ১৪ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করা হবে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন।
সাভারের এজিআই অ্যাপারেলসের প্রায় ২ হাজার শ্রমিকও অক্টোবর মাসের বেতন চেয়ে কারখানার বাইরের সড়কে বিক্ষোভ করেন।
মিরপুরে রিশাল গ্রুপের প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক অক্টোবর মাসের বেতন না পেয়ে কারখানা প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এছাড়া, গাজীপুরের বিকেএসপি এলাকায় ডরিন গার্মেন্ট হঠাৎ শ্রম আইন ১৩(১) ধারা অনুযায়ী সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করলে প্রায় ৫০০ শ্রমিক কারখানাটি পুনরায় চালুর দাবিতে জড়ো হন।
ইস্যু তৈরি ও অস্থিতিশীল করার চেষ্টা
গার্মেন্ট মালিকদের ভাষ্যমতে, বিগত সরকারের সময়েও প্রায় ৪ হাজার কারখানার মধ্যে দুয়েকটি কারখানায় সবসময়ই সমস্যা ছিল, কিন্তু শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেনি। এখন সমস্যা সৃষ্টি করে বা সামান্য সমস্যা হলেই একটি পক্ষ শ্রমিকদের মহাসড়কে নিয়ে যায়। এই খাতের উদ্যোক্তাদের দাবি— অভ্যন্তরীণভাবেই মিটমাট সম্ভব এমন ঘটনাকেও বড় ইস্যু বানানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে মহাসড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বিগত সরকারের আমলে সুবিধা পাওয়াদের একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে এই খাতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যেকোনও একটি বা দুটি কারখানায় সমস্যা দেখা দিলেই শ্রমিকদের মহাসড়কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সমস্যা নেই এমন কারখানার শ্রমিকরাও তাদের সঙ্গে অবরোধে শামিল হচ্ছেন।
বহু দলে বিভক্ত শ্রমিক সংগঠন
গার্মেন্ট খাতে শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভেদ, প্রতিবেশী দেশের স্বার্থে কাজ করা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের অনুসারী ও শ্রমিক নেতাদের মধ্যে অনৈক্যের কারণে শ্রমিক অসন্তোষ বন্ধ হচ্ছে না বলে জানালেন বেশ কয়েকজন গার্মেন্ট মালিক ও শ্রমিক নেতা। একজন কারখানার মালিক বলেন, পোশাক খাতে শ্রমিকদের বিভিন্ন নামে অন্তত ১০০টি সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনের বা ফেডারেশন নেতাদের জবাবদিহি নেই। আরেকজন উদ্যোক্তা জানান, শুধু শ্রমিকদের নিজেদের রাজনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য সাধারণ শ্রমিকদের সড়কে নামিয়ে দেওয়া হয়।
শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে ব্যাংকের তারল্য সংকট
ব্যাংক খাতের চলমান সংকটে বিপাকে পড়েছেন বেশ কয়েকজন গার্মেন্ট মালিক। তাদের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও শুধু ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না বেশ কয়েকটি কারখানা। শুধু তাই নয়, নগদ টাকার সংকটে এলসি খুলতে পারছে না, এমন ঘটনাও ঘটছে। এ প্রসঙ্গে সচল ও উৎপাদনে থাকা একটি কারখানার মালিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগের সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা বের করে নেওয়ার খেসারত দিচ্ছে গার্মেন্ট খাত। তিনি দাবি করেন, ব্যাংক যদি আগের মতো সাপোর্ট দিতো তাহলে কোথাও শ্রমিক অসন্তোষ থাকতো না।
শক্ত হাতে আইন প্রয়োগের অভাব
নতুন সরকার তিন মাস অতিক্রম করলেও গার্মেন্ট খাতের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আগের সরকারের লোকজনের হাতে। তারা শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের ইমেজ নষ্ট করার জন্য এই খাতকে বেছে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ থাকলেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শক্তহাতে আইন প্রয়োগ করছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কারখানার মালিক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতার সুযোগ নিয়েছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা। তিনি বলেন, পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের এখনও চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি।
সরকারের দফতরেও সমন্বয়ের ঘাটতি
সাধারণত পোশাক খাতে যেকোনও সমস্যা দেখা দিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, পোশাক মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে যে সমন্বয় থাকা জরুরি ছিল, তা নেই বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি কারখানার মালিক। একাধিক ব্যবসায়ী নেতা জানান, বিগত সরকারের আমলে যেকোনও সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়েছে মূলত সরকারের বিভিন্ন দফতর ও মালিক-শ্রমিকদের সমন্বয় থাকার কারণে।
এ প্রসঙ্গে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাক খাতে অধিকাংশ শ্রমিকই নিরীহ। তারা সবসময় কাজের মধ্যে ডুবে থাকে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে হাতে গোনা কিছু শ্রমিক। এদের মধ্যে কিছু দুষ্কৃতকারী, কিছু এনজিও’র লোক এই নিরীহ শ্রমিকদের অপকর্মে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতার সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক দলের হয়ে শ্রমিকদের একটি পক্ষ পোশাক খাতকে অস্থিতিশীল করছে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতাকে সন্ত্রাসীরা মনে করছে—সেনাবাহিনী হোক আর পুলিশ হোক, গুলি তো করবে না। এ কারণে তারা ক্রিমিনাল কাজ করতে ভয় পাচ্ছে না।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জে একটি কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন দিতে পারেননি। এ কারণে ওই কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হামলায় চালিয়ে কারখানাটি ভাঙচুর করে। পাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা ওই সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।
বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, কিছু কারখানার মালিক সত্যি বিপদে আছেন। আবার ব্যাংকের কারণেও অনেকে সমস্যায় পড়েছেন। এটা অনেক শ্রমিক বুঝতে চান না। দেখা যায় মালিক বেতনের জন্য ব্যাংকে চেক দেন, কিন্তু ব্যাংকে নগদ টাকা না থাকায় শ্রমিকদের বেতন পেতে সমস্যা হচ্ছে। আগের সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা লুট হওয়ার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, এতো বড় শিল্প খাতে একটা দুইটা কারখানায় সমস্যা হতে পারে। ব্যাংকের অসহযোগিতার কারণেও বেতন পেতে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু শ্রমিকরা ধৈর্য ধরতে চান না। সমস্যা একটি বা দুটি কারখানায় অথচ সেটাকে কেন্দ্র করে ৩০ টা কারখানার শ্রমিককে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে অরাজকতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা কোনও মতেই কাম্য নয়। তিনি উল্লেখ করেন, একটি বা দুটি কারখানার কারণে এতো শ্রমিক নেমে আসার বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি। যদি এই সেক্টরে অস্থিরতা তৈরি করাই তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে সাধারণ শ্রমিকরা সবাই সতর্ক হতে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের যৌক্তিক সমাধান করা হবে। শ্রমিকদের রাস্তা অবরোধ করে, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর ভরসা রাখুন। আমরা আপনাদের কষ্ট অনুভব করছি। আপনাদের ন্যায্য পাওনা অবশ্যই পাবেন।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মালিকপক্ষকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ভাতা সঠিকভাবে পরিশোধের আহ্বান জানিয়ে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘শ্রমিক ভাইবোনদের বকেয়া পাওনা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই মালিকদের কারখানা চলে। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। সব কারখানায় সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি ব্যত্যয়ের কোনও সুযোগ নেই। কেউ মজুরি বোর্ড বাস্তবায়ন না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মালিকপক্ষের সমস্যা পাওয়া গেলে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে।’ শ্রমিক অসন্তোষ তৈরিতে বহিরাগতদের উসকানি রয়েছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
শ্রমিক অসন্তোষের কারণ অনুসন্ধান করা ও তা নিরসনে ক্লাস্টার ভিত্তিতে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত। তিনি বলেন, ‘গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, সাভারসহ কারখানা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ক্লাস্টার ভিত্তিতে কমিটি গঠন করতে হবে। ওই কমিটি মালিকপক্ষকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। তারা বেতন-ভাতা পরিশোধ করছেন কিনা, সেটিও নিশ্চিত করবে। শ্রমিক অসন্তোষ কেন হচ্ছে, তা অনুসন্ধান করে সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।’
Sharing is caring!