প্রজন্ম ডেস্ক:
সিলেটের কানাইঘাটে শিশু মুনতাহা খুনের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হয়েও হলো না। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মুনতাহাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে লাশ পুঁতে রাখার কথা স্বীকার করলেও কেন এই হত্যাকাণ্ড সেটি নিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে গ্রেপ্তারকৃত মার্জিয়া সহ অপর তিন আসামি।
এ কারণে পুলিশ ধারণা করছে; হত্যাকাণ্ডের গভীরে কোনো রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আলিফজান বিবি, তার মেয়ে শামীমা বেগম মার্জিয়া, প্রতিবেশী ইসলাম উদ্দিন ও নাজমা বেগমকে সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. আবু জাহের বাদলের আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কানাইঘাট থানার এসআই শামসুল আরেফিন। আদালত শুনানি শেষে তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
কানাইঘাটের বীরদল গ্রামের শামীম আহমদের ৬ বছরের শিশুকন্যা মুনতাহা আক্তার জেরিন। ৩রা নভেম্বর বাড়ির উঠোনে শিশুদের সঙ্গে খেলা করছিল। এ সময় হঠাৎ করে সে নিখোঁজ হয়ে যায়। কানাইঘাট থানা পুলিশ ঘটনাটির তদন্ত শুরু করে। এই অবস্থায় গত শনিবার রাতে পুলিশ সন্দেহজনক হিসেবে একই বাড়ির পার্শ্ববর্তী ঘরের বাসিন্দা মার্জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে যায়। এতে ভড়কে যান মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবি। তিনি রোববার ভোররাতে সবার অগোচরে খালে পুঁতে রাখা মুনতাহার লাশটি সরাতে গেলে জনতার হাতে ধরা পড়েন। পুলিশ গিয়ে আলিফজানকে আটক করে। ৭ দিন মাটির নিচে থাকা শিশুটির লাশ অর্ধগলিত হয়ে গিয়েছিল।
ঘটনার দিন গ্রেপ্তার হওয়া আলিফজান ও তার মেয়ে মার্জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিলেটের এডিশনাল এসপি (ক্রাইম) মো. রফিকুল ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন; নিখোঁজ হওয়ার দিনই মুনতাহাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে খুন করা হয়। এরপর লাশ পুঁতে রাখা হয় ঘরের পাশের খালে। সেখান থেকে লাশ সরানোর সময় মার্জিয়ার মা আলিফজানকে আটক করা হয়। বিকালে মার্জিয়ার স্বীকারোক্তি মতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত একই গ্রামের ইসলাম উদ্দিন ও নাজমা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে শিশু মুনতাহার আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকায় আলোচিত হচ্ছে তরুণী মার্জিয়ার নাম। তার মা আলিফজান ও নানী কুতুবজানকে নিয়ে বীরদল গ্রামে মুনতাহার পিতা শামীম আহমদের বাড়িতে ঘর বানিয়ে আশ্রিত হিসেবে বসবাস করতেন। তাদের মূলবাড়ি উপজেলার চতুল এলাকার চাউরা গ্রামে। ২২ বছর আগে তারা বীরদলে এসে শামীমের বাড়িতে আশ্রয় নেন। মার্জিয়ার মা ও নানী দু’জনই পেশায় ভিখারী। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা মার্জিয়া চার মাস ধরে মুনতাহাকে পড়ালেখা শিখাতো। হাউজ টিউটর হিসেবে সে ছিল। মুনতাহার পিতা ঘটনার সঙ্গে জড়িত মার্জিয়া সম্পর্কে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- কয়েক মাস আগে মার্জিয়ার নানা বিষয় নিয়ে তার সন্দেহ হয়। পাশের ঘরের মহিলা হওয়ায় মার্জিয়া প্রায় সময় মুনতাহাকে নিয়ে বাজারে চলে যেতো। না বলে কখন কোথায় যেতো এ নিয়ে আমরা চিন্তায় থাকতাম। এ কারণে মার্জিয়ার কাছে পড়ালেখা বন্ধ ছাড়াও সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়। এ ছাড়া কয়েক মাস আগে মুনতাহার কয়েকটি জামা চুরির ঘটনা ঘটে। চুরি হওয়া জামাগুলো মার্জিয়াদের ঘরে পাওয়া গিয়েছিল। তিনি বলেন- মা ও নানী এলাকায় ভিক্ষা করলেও মার্জিয়ার তিনটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ছিল। তার কাছে নামে-বেনামে সিম ছিল বেশ কয়েকটি। এ কারণে তার উচ্ছৃঙ্খল জীবনের নানা বিষয় নিয়ে আমাদের সন্দেহ হয়েছিল। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার হওয়া মার্জিয়া উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতো। সে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করতো বলে জানিয়ে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতো। ফিরতো রাতে। কখনো কখনো গাড়িযোগে লোকজন এসে তাকে নামিয়ে দিয়ে যেতো। চালচলনেও ছিল উচ্ছৃঙ্খল ভাব। এ কারণে তার সঙ্গে আশপাশের বাড়ির মহিলারা সম্পর্ক রাখতো না। ঘটনার দিনও চারখাই বাজারে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা কাটায় মার্জিয়া। তবে গ্রেপ্তার হওয়া ইসলাম উদ্দিন ও নাজমা বেগম প্রায় সময় তাদের ঘরে আসা-যাওয়া করতো বলে জানান তারা।
পুলিশ জানিয়েছে; গ্রেপ্তার হওয়ার পর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে মার্জিয়া ও তার মা আলিফজান খুনের ঘটনা স্বীকার করলেও কারণ সম্পর্কে পূর্ব বিরোধ বলেছে। একই বাড়ির বাসিন্দা হওয়ায় তুচ্ছ বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল বলে জানায় মার্জিয়া ও আলিফজান। থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খুনের ঘটনা স্বীকার করলেও আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করতে অস্বীকার করে। এ কারণে তাদের ফের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
Sharing is caring!