প্রজন্ম ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার জন্য লড়াই করছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও গভীরভাবে মার্কিন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে। ৫ নভেম্বরের (মঙ্গলবার) নির্বাচনে যেই জিতুক, এর প্রভাব সারা বিশ্বে অনুভূত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষমতায় থাকা ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিস জিতলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে কোনও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই। আর রিপাবলিকানরা জিতে গেলে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসার পাশাপাশি তাদের দৃষ্টিভঙ্গী ও কাজ করার ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে। তবে তাদের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হলেও বাংলাদেশ সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গীতে বড় কোনও পরিবর্তন আনবে না যুক্তরাষ্ট্র।
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক বৃহৎ একটি কৌশল হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি। যেই বিজয়ী হোক, এটির কোনও পরিবর্তন হবে না।’
ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির মাধ্যমে চীনকে আটকে রাখার কৌশলের প্রতি মার্কিন উভয় রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক লেন্স দিয়ে বাংলাদেশকে দেখে যুক্তরাষ্ট্র। যেহেতু চীন ঠেকাও নীতিতে (চায়না কনটেইনমেন্ট) পরিবর্তন আসার কোনও সম্ভাবনা নেই, ফলে বাংলাদেশ নিয়ে বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন হবে না।’
উল্লেখ্য, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। জ্বালানি খাতে তাদের বড় বিনিয়োগ আছে।
এ বিষয়ে সাবেক আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘ব্যবসা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রিপাবলিকানরা বেশি আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রের ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে ঋণ পেতে আগ্রহী বাংলাদেশ। কিন্তু ডেমোক্র্যাট প্রশাসন এ বিষয়ে আগ্রহী নয়। রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় আসলে এ বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের একটি সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।’
মানবাধিকার
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানবাধিকার। এটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটরা বেশি আগ্রহী। অপরদিকে রিপাবলিকানরা বিষয়টি গুরুত্ব দেয়, কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের মতো নয়।
এ বিষয়ে সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে মানবাধিকারের বিষয়টি বড় আকারে তোলার চেষ্টা করা হয় যদি ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় থাকে। এর মাত্রা রিপাবলিকানদের ক্ষেত্রে কম। সেজন্য যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসেন, তবে মানবাধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশকে কম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে বলে ধারণা করা যায়।’
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। তবে দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে— রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।
এ বিষয়ে আরেক সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা হচ্ছে জানিয়ে গত ৩১ অক্টোবর একটি টুইট করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই টুইটে তার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে- সেটিও উল্লেখ করা হয়।’
ওই টুইটটিতে ২৫ হাজার মন্তব্য, ৮৭ হাজার রিটুইট, তিন লাখ ৮৬ হাজার পছন্দ এবং তিন কোটি৩০ লাখ ব্যক্তি দেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হলে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও গভীর হবে। ফলে বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে।’
Sharing is caring!