প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বিকল্পের অপেক্ষায় ভোক্তারা

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২, ২০২৪, ০৩:০১ অপরাহ্ণ
বিকল্পের অপেক্ষায় ভোক্তারা

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

সারা দেশের সুপারশপসহ কাঁচাবাজারে পলিথিন সরবরাহ ও ব্যবহার বন্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ ও বিতরণ বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। তবে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করায় পণ্যসামগ্রী বহনে সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। গ্রাহকদের দাবি পলিথিন সহজলভ্য হওয়ায় পণ্যবহন ছিল সুবিধাজনক। কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার সময় প্রয়োজনীয় পণ্য বা ছোটখাট কেনাকাটা করে পলিথিনে আনা সহজ ছিল। এখন পলিথিনের বিকল্প কী হবে, এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল।

এ ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনসহ ২০-২৫টি প্রতিষ্ঠান পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ সুপারশপ, কাঁচাবাজারসহ সংশ্লিষ্টদের সরবরাহ করবে।

পলিথিনের বিকল্প কী হবে বা প্রয়োজনীয় ব্যাগের সংকট হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারিক খান বলেন, সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাট, কাপড় ও কাগজের পর্যাপ্ত ব্যাগের উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে ব্যাগের কোনো সংকট হবে না। বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পাট উৎপাদনকারী দেশ। কাঁচা পাট রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। কাজেই পলিথিনের বিকল্প থাকবে না, এটা অচিন্তনীয়। পাটপণ্য বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী।

 

পলিথিনের বিকল্প ব্যাগের সংকট প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পাটের ব্যাগের ব্যবহার ও সরবরাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ করা হবে।’

পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ ও বিতরণ বন্ধ কার্যক্রম মনিটরিং করতে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও আইন অনুবিভাগ) আহ্বায়ক করে টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমের অন্য সদস্যরা হলেন, যুগ্ম সচিব (পরিবেশ-১ অধিশাখা), উপসচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ-১ ও ২) এবং সিনিয়র সহকারী সচিব (পরিবেশ-৩)।

মনিটরিং টিম রাজধানীর বাজার নিয়ন্ত্রণসহ সারা দেশের মাঠপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও প্রয়োজনে মাঠ কার্যক্রম পরিদর্শন করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহার জনস্বাস্থ্যসহ প্রাণী ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। তাদের মতে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকে। ফলে ক্যানসারের মত ভয়াবহ রোগের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হয়েছে। তাছাড়া পলিথিনের রাসায়নিক উপাদান বিসফেনল এ (বিপিএ) ও ফ্যালেটস মানবদেহে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যার মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে। এর ধোঁয়া বায়ুদূষণের মধ্য দিয়ে শ্বাসযন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পলিথিন ও মাইক্রোপ্লাস্টিক যেকোনো উভচর প্রাণীর পরিপাকতন্ত্র বিনষ্ট করে। ফলে প্রাণীদেহে অপুষ্টি, অনাহার, ক্ষুধামান্দ্য হওয়ায় দেহে নানা জটিলতা সৃষ্টি করে।

পলিথিন মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয়ে মাটির ঊর্বরতা হ্রাস করে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা যেমন হুমকির মুখে পড়ে তেমনই এর বড় অংশ চলে যায় নদী, সাগরে। ফলে বিভিন্ন জলজপ্রাণীর খাদ্য-শৃঙ্খলে প্রবেশ করে তাদের প্রজননে বিঘ্ন ঘটায়। এমনকি শ্বাসতন্ত্র আটকে মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। এভাবে মাছ, সামুদ্রিক পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ গোটা সামুদ্রিক প্রজাতি প্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে।

এসব কারণে পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ ও বিতরণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, কোনো সুপারশপ বা কাঁচাবাজারে পলিথিন শপিংব্যাগ সরবরাহ করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে।

ইতোমধ্যে পরিবেশ উপদেষ্টা সারা দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিআইজি), জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার এবং পুলিশ সুপারদের প্লাস্টিক পলিথিন এবং পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মতে, পলিথিন বন্ধ হলে ভোক্তারা বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ বাধ্য হয়েই ব্যবহার করবেন।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি আগারগাঁও পরিবেশ অধিদপ্তর ভবনে পলিথিনের বিকল্প পণ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় অংশ নেওয়া ২৪টি স্টলে পাট, কাগজ ও কাপড়ের মতো পচনশীল দ্রব্যের তৈরি ব্যাগ প্রদর্শিত হয়। ২০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১০০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন সাইজ এবং কোয়ালিটির ব্যাগ প্রদর্শন করা হয়।

মেলায় অংশ নেওয়া জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) মার্কেটিং হেড জানিয়েছেন, তারা এ পর্যন্ত বিভিন্ন সুপারশপ থেকে এক কোটির বেশি পাটের ব্যাগের কার্যাদেশ পেয়েছেন।

পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণসংক্রান্ত একটি মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারা পলিথিনের বিকল্প তৈরিতে আরও সক্রিয় হলে বাজারে ব্যাগের সংকট হবে না।’

বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পাটের ব্যাগ সরবরাহ করা সম্ভব জানিয়ে বিজেএমএর পরিচালক বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত মিলগুলোর কাছে পাটের বস্তা-ব্যাগের চাহিদা দিলে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শতভাগ সরবরাহ করা সম্ভব।’

এখন প্রায় সব প্রয়োজনের পাটপণ্য দেশেই উৎপাদিত হয় জানিয়ে বিজেএমএর সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারিক খান বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশে ২৮২টি পাটপণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। জনজীবনের প্রায় সব প্রয়োজনেই এসব পণ্য প্রয়োজন হয়। তাই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করতেই হবে বা সহজ ও সুলভ, এমন দাবি করাটা ভিত্তিহীন।’

Sharing is caring!