প্রজন্ম ডেস্ক:
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ঢাকাসহ সারা দেশের থানা ও পুলিশের ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অস্ত্রই এখন পুলিশসহ আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই অস্ত্র দিয়েই অপরাধীরা এখন রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে বলে মনে করে পুলিশ। তাদের আশঙ্কা, লুট হওয়া ওই অস্ত্র আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে পারে। আর এ জন্যই এখন অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, জুলাই ও আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে মোট ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র লুট হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭৬৩টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এখনো উদ্ধার হয়নি ২ হাজার ৬৬টি। অস্ত্র লুটের সময় ৬ লাখ ৬ হাজার ৭৪২ রাউন্ড গুলিও লুট করেছে দুর্বৃত্তরা।
জানা গেছে, মোট খোয়া যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রায় ১৫১২টি অস্ত্র ও এর সঙ্গে গুলি লুট করা হয়। এ ছাড়াও গণভবন ও সংসদ ভবন এলাকা থেকে ৪৮টি অস্ত্র লুট হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। অস্ত্র লুটের সময় আতঙ্কে থানা ছেড়ে চলে গিয়েছিল পুলিশ।
লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, অ্যান্টি ড্রোন গানসহ অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। পুলিশের অস্ত্রের বাইরে ৯৪২টি ব্যক্তিগত অস্ত্রও এখন থানায় জমা পড়েনি; যা নিয়ে পুলিশের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।
গত ১৫ বছরে যেসব বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল সেই সব অস্ত্রও জমা দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্স করা অস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনো ৯৪২ জনের ব্যক্তিগত লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা পড়েনি। পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অস্ত্র লুটের ঘটনা বেশি ঘটে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীসহ প্রায় ২০টি জেলায়। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর অস্ত্র উদ্ধার অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। সেনাবাহিনী ছাড়াও পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারের সদস্যরা এই অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যারা অস্ত্র লুটের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, মেট্রো রেলস্টেশন, সেতু ভবন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানা, ত্রাণ ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এ সময় লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আন্দোলন চলার সময় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে।
সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্টের পর সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটছে প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে খুন। কোথাও কোথাও দুই পক্ষ আবার গোলাগুলিতে জড়াচ্ছে। মাদক কারকারবারিরা ব্যবহার করছে অস্ত্র। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশের সদস্যরা জানতে পেরেছেন যে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যে অস্ত্র লুট করা হয়েছিল সেই অস্ত্রগুলো দিয়ে মূলত অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এখন লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারেই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের শঙ্কার কারণ হচ্ছে, এই অস্ত্র যদি আবার আন্ডারওয়ার্ল্ডের হাতে চলে যায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। কারণ, ইতোমধ্যে কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছে। কেউ কেউ আবার মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এই সব শীর্ষ সস্ত্রাসীদের চক্রের সদস্যরা মাঠপর্যায়ে সক্রিয় হয়েছে। পুলিশ সেই বিষয়টিও খেয়াল রেখেছে। এ ছাড়াও লুট হওয়া অস্ত্র চোরাকারবারিদের মাধ্যমে সীমান্তের ওপারে চলে যেতে যেন না পারে সেই দিকেও লক্ষ্য রাখছে পুলিশ।
এদিকে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে গত ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর অভিযানে মোট গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৭৪ জন। এই সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে রিভলবার ১৯টি, পিস্তল ৭৬টি, রাইফেল ২২টি, শটগান ৩৭টি, পাইপগান ৮টি, শুটারগান ৪৩টি, এলজি ৩১টি, বন্দুক ৪৮টি, একে৪৭ ১টি, এসএমজি ৫টি, গ্যাসগান ৪টি, এয়ারগান ১০টি, এসবিবিএল ১০টি, টিয়ার গ্যাস লঞ্চার ২টি এবং থ্রি-কোয়ার্টার ২টি।
Sharing is caring!