প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১লা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৩রা শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ঈদের আনন্দে দুশ্চিন্তা ঢাকার বাসা

editor
প্রকাশিত মার্চ ২৮, ২০২৫, ০৯:৩৪ অপরাহ্ণ
ঈদের আনন্দে দুশ্চিন্তা ঢাকার বাসা

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের খুশিতে ঢাকা ছাড়ছেন এক কোটির বেশি মানুষ। অনেকেরই সঙ্গে থাকছে স্ত্রী-সন্তান। এবারে লম্বা ছুটি পাওয়ায় আনন্দ-উৎসাহের মাত্রাও খানিকটা বেশি। কিন্তু এই আনন্দের পাশাপাশি বেশ খানিকটা দুশ্চিন্তাও ভর করেছে গ্রামমুখী মানুষের মনে।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় যে বাসাবাড়ি রেখে যাচ্ছেন সেটি নিরাপদে থাকবে কি না, তা নিয়েই তারা উদ্বিগ্ন। এমনিতেই রাজধানীর আইনশৃঙ্খলায় বেশ কিছুদিন ধরে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তার মধ্যে ঢাকা ফাঁকা হলে পেশাদার অপরাধীদের তৎপরতা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সময়ে বাসাবাড়িতে চুরি ও ডাকাতির শঙ্কা ভাবিয়ে তুলেছে নগরবাসী ও ঈদে গ্রামে যাওয়া সাধারণ মানুষের। তবে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

রাজধানীর আদাবরের ৯ নম্বর রোডের বাসিন্দা পাভেল আহমেদ-মনি আক্তার দম্পতি তাদের দুটি শিশুসন্তান নিয়ে পাবনায় গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবেন আজ শুক্রবার। বাসাবাড়ি তালাবদ্ধ রেখে যাবেন ঠিকই, তার পরও চোর-ডাকাতের শঙ্কায় রয়েছেন তারা। আলাপকালে পাভেল আহমেদ বলেন, ‘এমনিতেই দেশের পরিস্থিতি ভালো না। তার ওপর চোর-ডাকাতের ভয় রয়েছে। তাই ঈদের আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরলেও বাসার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’

বাসাবোর কদমতলায় ৯ নম্বর লেনের বাসিন্দা সরওয়ার হোসেন লিটন ও মো. মাসুম। সরওয়ারের গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জে ও মাসুমের নরসিংদীতে। তারা দুজনেই পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবেন। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে গতকাল তাদের সঙ্গে আলাপকালে খবরের কাগজকে তারা বলেছেন, ‘এই এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নন। এর আগেও বেশ কয়েকটি বাসায় চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ঈদে ঢাকায় লোকজন কমে যায়, বাসাবাড়ি ফাঁকা থাকবে। এই সময়ে কী যে হয়, সেই চিন্তায় আছি। ঈদে আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি গেলেও টেনশন কাটছে না।’

মিরপুরের বাসিন্দা আব্দুল বাতেন-দোলা দম্পতি। তাদের রয়েছে দুটি শিশুসন্তান। ঈদ করতে তারাও যাবেন পাবনায় গ্রামের বাড়িতে। গতকাল দুপুরে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থানকালে আলাপ হয় আব্দুল বাতেনের সঙ্গে। তিনিও বাসাবাড়ি নিয়ে শঙ্কার কথা প্রকাশ করেন।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, বাসাবাড়ি তালাবদ্ধ রেখে অনেকেই গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছেন। কিন্তু ফাঁকা ঢাকায় ঈদের ছুটির সময়ে বাসাবাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহা
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এসএন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদে মহানগরীতে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ কাজ করছে। ঈদের সময় রাজধানীতে দিন–রাত পুলিশের ৬০০টি দল টহল দেবে। প্রতিদিন মহানগরের ৭৫টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া সব জায়গায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে বাসাবাড়ি, বিপণিবিতান, সোনার দোকান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টহল জোরদার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার থেকে পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করবে। পাশাপাশি ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ (সহায়ক বাহিনী) এবার বিপণিকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায় কাজ করবে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, ঈদে সরকার ২৮ মার্চ থেকে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। মানুষ ঢাকা ছাড়ায় বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট ও অফিস ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি রোধে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

ডিএমপি জানায়, থানা-পুলিশের বাইরে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) পুলিশ দল, পুলিশের বিশেষায়িত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।

 

তিন স্তরের নিরাপত্তা র‌্যাবের

ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম। তিনি জানান, ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে র‌্যাবের সাদাপোশাকের গোয়েন্দারা নজরদারির পাশাপাশি স্ট্রাইকিং মোবাইল ফোর্স কাজ করবে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক এই ঈদকে নির্বিঘ্ন করার জন্য তিনটি স্তরে নিরাপত্তা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। রাজধানীবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যখন ঢাকা থেকে আপনাদের নিজ গৃহের উদ্দেশে রওনা দেবেন, তখন ঢাকায় আপনাদের যে আবাসস্থল আছে, তা আপনার পক্ষে যতটুকু সম্ভব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাবেন। আর বাকি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঈদের আগে এবং পরে র‌্যাব সব সময় মাঠে থাকবে।

Sharing is caring!