
প্রজন্ম ডেস্ক:
বেইজিংয়ে আগামী শুক্রবার (২৮ মার্চ) চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে অনুষ্ঠেয় বৈঠকটিকে নিকট ও দূরবর্তী ভবিষত্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এই সফরের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করার এবং নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে চীনের গভীর সম্পর্ক তৈরি হলে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে যে ভারসাম্যের প্রয়োজন রয়েছে, সেটির প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।
চীনের হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়াতে অংশগ্রহণ করতে বুধবার (২৬ মার্চ ) ঢাকা ত্যাগ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বোয়াও ফোরামে অংশগ্রহণ শেষে চীন সরকারের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা বেইজিংয়ে সরকারি দ্বিপাক্ষিক সফরে যাবেন। সেখানে আগামী ২৮ ডিসেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে বৈঠক হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে— সফরের প্রথম দিকে ধারণা করা হয়েছিল— দুই নেতার বৈঠকটি সৌজন্যমূলক হবে। সফরের কয়েক দিন আগে চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়— ৩০ মিনিটের বৈঠকটি ‘অ্যাক্রস দ্য টেবিল’ অর্থাৎ মুখোমুখি বৈঠক হবে। কূটনৈতিক রীতিতে এটিকে আনুষ্ঠানিক বৈঠক বলা হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাসহ ৯ (১+৮) জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ওই ৯ জনকে সহযোগিতা করার ৪ জন বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। মোটা দাগে টেবিলের একপাশে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বৈঠকে ১৩ (১+৮+৪) জন এবং টেবিলের অপরপাশে শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চীনের পক্ষ থেকে ১৩ জন অংশগ্রহণ করবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে বৈঠকটির গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে চীন।
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। বৈঠকের পরে যে যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে— আশা করি, সেখান থেকে আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।’
কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চীনের পক্ষ বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ নীতি কী হবে বা ঢাকা কোন মডেলে অগ্রসর হতে পারে, সে বিষয়ে জানতে চাইতে পারে।’
আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বা বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে চীন। একইসঙ্গে বৃহত্তর ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সখ্যতার বিষয়েও তাদের আগ্রহ থাকবে।’
বাংলাদেশ কী বলতে পারে
বাংলাদেশ সব সময় ‘ওয়ান চায়না নীতি’ অনুসরণ করে থাকে। এই বৈঠকেও প্রধান উপদেষ্টা সেটি বলবেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘শি জিনপিংয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেছে চীন। এবারের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেই উদ্যোগের প্রশংসা করা হতে পারে।’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা, পানি খাতে সহযোগিতা, বিভিন্ন খাতভিত্তিক সহযোগিতা, জ্বালানি সহযোগিতাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত ২৫ মার্চ পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চীন আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু এবং আমরা সেই বন্ধুত্বকে ধারণ করি। চীনের দিক থেকেও একই ধরনের মনোভাব আছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়ার মধ্য দিয়ে একটি বার্তা আমরা দিচ্ছি। এই সফর থেকে আমাদের প্রত্যাশা বহুমাত্রিক। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী। এছাড়া মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ছে। আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার করছি। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।
Sharing is caring!