প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৮ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

ঈদের বাজারে পোশাকের দাম চড়া, হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা

editor
প্রকাশিত মার্চ ১৭, ২০২৫, ০৯:২২ পূর্বাহ্ণ
ঈদের বাজারে পোশাকের দাম চড়া, হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

‘অন্য বছরের তুলনায় এবার ঈদের পোশাকের দাম বেশি। কেনাকাটা করতে কষ্ট হচ্ছে। বেতন তো বাড়েনি। তারপরও দুই দিন ঘোরাঘুরি করে শৈলী ফেব্রিকস থেকে আত্মীয়স্বজনের জন্য থ্রি-পিস কিনলাম।’ ঈদ উপলক্ষে মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারে কেনাকাটা করতে এসে এভাবেই অভিমত প্রকাশ করেন একটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক কানিজ ফাতিমা। শুধু এই বাজারেই নয়, কৃষি মার্কেট, শ্যামলী রিং রোড, শ্যামলী স্কয়ার শপিংমল থেকে শুরু করে লালমাটিয়ার সানরাইজ প্লাজাসহ বিভিন্ন শপিং সেন্টারে দেখা গেছে এই চিত্র।

এসব দোকানের বিক্রেতারা পোশাক বিক্রির জন্য হাঁকডাক দিলেও বেশি দামের কারণে অনেকেই খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকে কিনছেন। তারা বলছেন, ‘এবার ঈদের পোশাকের দাম বাড়তি। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, সব জিনিসের দাম বেড়েছে। আমরাও তার বাইরে নই।’

রবিবার (১৬ মার্চ) ১৫তম রমজানে এই এলাকার ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীর অন্য এলাকার মতো মোহাম্মদপুর, আদাবরে জমে উঠেছে ঈদবাজার। পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনতে ছোট-বড় মার্কেট, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আউটলেট, শপিংমলে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। পিছিয়ে নেই ফুটপাতের বেচাকেনাও। তবে গত বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ বাজেটের মধ্যে মিলছে না পছন্দের পোশাক। বিভিন্ন মার্কেটে দেখা গেছে, ছেলেদের সুতি, এমব্রয়ডারি, সিক্যুয়েন্স, স্প্যানডেক্স, লিনেন পাঞ্জাবির দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। আর কাবলি সেট, ডিজাইনার পাঞ্জাবি ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে লিংক রোডের রিচম্যান আউটলেটে ফাহিম নামে এক ছাত্র বলেন, ‘একটা পাঞ্জাবি পছন্দ হলো, ট্রায়াল দিলাম। কিন্তু দাম বেশি, ৩ হাজার ৫০০ টাকা। তাই কেনা হলো না।’ দেখি অন্য জায়গায় বলে এই আউটলেট থেকে বের হয়ে যান।

 

টোকিও স্কয়ারের দ্বিতীয় তলায় জাহিদুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘এবার পোশাকের দাম বেশি। তারপরও কিনতে হলো। পাকিস্তানি থ্রি-পিস কিনলাম। ৫ হাজার টাকার ওপরে দাম। দোকানদার চেয়েছিলেন ৮ হাজার ৫০০ টাকা। রানজু এক্সক্লুসিভ কালেকশনে কামরুন নাহার নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘কয়েক জায়গায় দেখার পর একটা থ্রি-পিস ২ হাজার টাকায় কিনলাম। দাম বেশি মনে হচ্ছে।’

এই মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় বিক্রমপুর ফেব্রিকসসহ অন্য দোকানেও দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। কিন্তু সেই তুলনায় বেচাবিক্রি কম বলে বিক্রেতারা জানান। শৈলী ফেব্রিকসের বিক্রয়কর্মী আল-আমিন বলেন, ‘রমজানের প্রথম থেকেই বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে যেভাবে আশা করেছিলাম সেভাবে হচ্ছে না। অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন।’ দাম বেশি হওয়ার কারণেই এ অবস্থা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ডলারের কারণেই সবকিছুর দাম বেশি। পোশাকেও এর প্রভাব পড়েছে।’ বেশি দামের ব্যাপারে অন্য বিক্রেতারাও এমন তথ্য জানান। এই মার্কেটের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় বাচ্চা ও বড়দের পোশাকের দোকানের বিক্রয়কর্মীরা হাঁকডাক দিচ্ছেন। ক্রেতারা যাচ্ছেন তাদের দোকানে। কিন্তু বেশি দামের কারণে অনেকেই খালি হাতে ফিরে আসছেন। এই মার্কেটের নিচতলায় কসমেটিকসের দোকানেও দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়।

এদিকে টোকিও স্কয়ারের সামনে ইয়োলো আউটলেটেও দেখা গেছে একই অবস্থা। অনেকের পছন্দ হলেও বেশি দামের জন্য ট্রায়াল করার পর কিনছেন না। খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। তবে যাদের বাজেট বেশি, তারাই পছন্দের থ্রি-পিস, পাঞ্জাবিসহ অন্য জিনিস কিনছেন। এই এলাকার অন্য দোকানেও দেখা গেছে, মেয়েদের টপস, টু-পিস, থ্রি-পিস, জাম্পস্যুট, ২ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিশুদের জামা-কাপড়ের দামও চড়া। ফুটপাতেও ১ হাজার ৫০০ টাকার নিচে বাচ্চা মেয়েদের ফ্রক মেলে না। ফ্যাশন হাউসগুলোতেও পোশাকের দাম গতবারের তুলনায় বেশি। ক্রেতারা জানান, পোশাকের দাম বাড়তি। তাই কেনাকাটায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকেই দামদর জানার পর বাসায় চলে যাচ্ছেন।

রবিবার সানরাইজ প্লাজায় ল্যাকমি ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডে কথা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থেকে আসা সিনথিয়া নামে এক গৃহিণীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছরই ঢাকায় বাজার করতে আসি। কিন্তু এবার দেখছি দাম বেশি। বাজেটে কুলাচ্ছে না। কাটছাঁট করতে হচ্ছে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সাধারণ একটা থ্রি-পিসের দাম চেয়েছে ৩ হাজার টাকার ওপরে। দরাদরি করার পর শেষ পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ টাকায় দিয়েছে। এভাবে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেশি মনে হচ্ছে।’

Sharing is caring!