প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৪ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সময়টা কি নারীর জন্য শঙ্কার?

editor
প্রকাশিত মার্চ ১৩, ২০২৫, ০৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
সময়টা কি নারীর জন্য শঙ্কার?

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

‘রাতে একা বের হয়েছেন কেন’, ‘ওড়না পরেননি কেন’, ‘রাতে চায়ের দোকানে বসে থাকে খারাপ মেয়েরা’, কিংবা ‘তুমি নারী স্বাধীনতার কথা বলো তুমি নিশ্চয় শাহবাগী’। রাস্তাঘাটে এ ধরনের অসংখ্য কটূ কথার শিকার হতে হয় নারীদের। প্রতি দিন নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে, রূপ বদলাচ্ছে, ভয় বাড়াচ্ছে। একইসঙ্গে নারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদে মুখর হচ্ছেন। সেখানেও সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে।

একের পর এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘সরকার বারবার তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে এই বলে যে, মব ভায়োলেন্স (দলবদ্ধ সহিংসতা) বা মোরাল পুলিশিংয়ের (নীতি পুলিশিং) কোনও সুযোগ এ দেশে নেই। সরকার এর বিরুদ্ধে সব সময়ই শক্ত অবস্থায় আছে।’ যদিও মানবাধিকারকর্মী ও নারী অধিকারকর্মীরা মনে করেন, সরকার মুখে যতটা শক্ত করে বলছে, কার্যত তা দেখা যাচ্ছে না। ফলে তার নিষ্ক্রিয়তা শঙ্কার বড় কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারিতে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৬ জন, এরমধ্যে ২২ জনেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে। এর আগে জানুয়ারি মাসে এই সংখ্যা ছিল ৩৯, যার মধ্যে ১৫ জনের বয়স ছিল ১৮ বছরের নিচে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন জরিপের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ‘দেশের ৭০ শতাংশ নারী জীবনে একবার হলেও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। গত এক দশকে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা বেড়েছে ১.৩ শতাংশ। ২০১৫ সালে যৌন সহিংসতার হার ছিল ২৭.২ শতাংশ, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮.৫ শতাংশে।’

এদিকে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়লেও নারী অধিকার সংগঠনগুলোর তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। বরং কিছু নেটওয়ার্ক ও ব্যক্তি উদ্যোগে বিবৃতি চোখে পড়ে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে— অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন, হয়রানি, হিংসা–বিদ্বেষসহ বিভিন্ন ধরনের নিপীড়নের ঘটনা বেড়ে চলেছে। নারীরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন। এমন অবস্থায় প্রতিটি নিপীড়ন ও অন্যায্যতার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার এবং শাস্তি দিতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ জন ছাত্রীকে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী কায়দায় বহিষ্কার করা হয়েছে, যেটি নারীর প্রতি কাঠামোগত (সিস্টেমেটিক) নিপীড়নেরই একটি রূপ বলে তারা মনে করছেন। তারা বলেছে, ‘‘দেশে ‘মব ইনজাস্টিস’ তৈরি করে বিষোদ্গারের চর্চা তো বন্ধ হচ্ছেই না, উল্টো তা দিন দিন বাড়ছে এবং এবার এর শিকার বানানো হয়েছে দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে।’’ অনলাইনে নারীর প্রতি ‘রাজনৈতিক বিদ্বেষমূলক যৌন সহিংস আক্রমণে’ উদ্বেগ প্রকাশ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বিৃবতি দিয়েছেন দেশের ৫২ নারী।

নারীর জন্য পরিস্থিতি শঙ্কার কিনা প্রশ্নে ‘আমরাই পারি জোটে’র জিনাত আরা হক বলেন, ‘প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট যেকোনও দুর্যোগ ও পরিবর্তনের পরে প্রান্তিক মানুষ শঙ্কার মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেকটি প্রপঞ্চ— ধর্মান্ধতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। নারী ইস্যুতে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার নয়। তারা মুখ খুলছেন বটে, কিন্তু দৃশ্যমান অ্যাকশন নেই। ফলে জুলাই আন্দোলন পরবর্তীকালে নারীর স্টেক অদৃশ্য করা হয়েছে। এই রাষ্ট্র, এই সিস্টেম আমাদের বুঝাচ্ছে যে, তারা নারীবান্ধবতো নয়ই, নারীর প্রতি সংবেদনশীলও নয়।’ নারী অধিকার সংগঠনগুলো সক্রিয় নয় বলে তিনি মনে করেন না। যদিও প্রত্যেকে ফ্যাসিস্ট ট্যাগ খাওয়ার ভয়ে প্রতিবাদ করছে না বলে তিনি মনে করেন।

জিনাত আরা হক বলেন, ‘পরস্পরকে দায়ী করার রাজনীতিতে এমন নিরপেক্ষ নির্মোহ ইমেজ দাঁড় হয়নি যারা কথা বলবেন। আমরা নারী আন্দোলনের যে জায়গায় পৌঁছেছি, সেখানে এখন ওড়না নিয়ে আলাপের জায়গা নেই। ফলে সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তিও কাজ করছে।’

মানবাধিকার কর্মী ও গুম কমিশনের সদস্য নূর খান মনে করেন, খুব ছোট একটা গোষ্ঠী রাজনৈতিক মনোবাসনা প্রতিষ্ঠা করতে নানা ফর্মে এই অস্থিরতাগুলো তৈরি করছে। নারী অধিকার সংগঠনগুলো সক্রিয় না কেন প্রশ্নে তিনিও মব জাস্টিসের ভীতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘সবারর মধ্যেই মব নিয়ে ভয় কাজ করছে।’

Sharing is caring!