এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
১৯৮১ সাল। শহীদ হলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ক্ষমতা গ্রহন করলেন আব্দুস ছাত্তার। রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান এর মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহন করলেন প্রসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। ৯টি বৎসর ক্ষমতাসীন ছিলেন স্বৈরশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। বেগম খালেদা জিয়া দলীয় নেতাকর্মীদের অনুরোধে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহন করেন।
গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সারাদেশ ব্যাপি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে স্বৈরশাসক এরশাদ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়েছেন। এরশাদ সরকার তাহাকে অনেক লোভ লালসা দ্বারা প্রভাবিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেননি। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকার পতনের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম লালদিঘীর ময়দানে ৮,৭,৫ দলের যৌথভাবে সভা চলাকালীন সময়ে পুলিশ বাহিনী ষ্টীমরোলার চালিয়ে প্রায় ৩৫ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেন। বেগম জিয়া ঘোষনা দিলেন, এরশাদ সরকারের কোন পাতানো নির্বাচনে বি.এন.পি এর নেতৃত্বাধীন কোন দল নির্বাচনে যাবে না। শেখ হাসিনা আরও এক দাফ এগিয়ে ঘোষনা করলেন, এরশাদের অধীনে পাতানো নির্বাচনে যিনি যাবেন, তিনি হবেন জাতীয় বেইমান। অবশেষে ৮৬ এর নির্বাচনে শেখ হাসিনা কথা দিয়ে কথা রাখেননি। নির্বাচনে চলে গেলেন শেখ হাসিনা। খেতাব পেলেন, জাতীয় বেইমান। অপর দিকে বেগম জিয়া উপাধি পেলেন, আপোষহীন নেত্রী, গনতন্ত্রের মানষকন্যা। ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি মো: সাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, উক্ত নির্বাচনে ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করে প্রতিটি আসনে বিজয়ী হন বেগম জিয়া। অপরদিকে শেখ হাসিনা ৪টি আসনে নির্বাচন করেন। ২টি তে পরাজিত হন। যুবনেতা ছাদেক হোসেন খোকা, ও মেজর (অব:) আব্দুল মন্নান এ ধরনের মাঝারি নেতাদের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। শুধু পাশ করেন গোপালগঞ্জ ও পীরগঞ্জ এ ২টি আসনে।
জনগনের স্বার্থে বেগম খালেদা জিয়া যখন যেখানে আপোষ করা প্রয়োজন সেখানে আপোষ করেছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী নির্বাচন জনগন স্বত:স্ফূর্তভাবে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহন করেন নাই। শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলটি পাশ করে ১৫ ফেব্রুয়ারীর সরকার বিলুপ্ত করেন। চাইলে ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। ১৯৯১ সালে জনগনের স্বার্থে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে সংসদীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ১/১১ সরকার এর সাথে আপোষ করেননি। চাইলে করতে পারতেন ক্ষমতায় থাকার জন্য। কিন্তু করেননি। তাহাদেরকে সাফ জানিয়ে দেন, মরলে এ দেশের মাটিতেই মরবেন। কিন্তু শেখ হাসিনা চোখের চিকিৎসার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ১/১১ এর কুশিলবদের সাথে সমঝোতার পর বাংলাদেশে আসেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন প্রহসন হচ্ছে যেনে ও নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন বেগম জিয়া। গনতন্ত্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে নির্বাচন। প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহন করে তাহার দল মাত্র ৩২টি আসনে বিজয়ী হয়। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে কিন্তু নিজে ৫টি আসনে বিজয়ী হন। শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন। বেগম জিয়া বিরোধী দলীয় নেত্রী নির্বাচিত হন। সরকার শুরু করে ষড়যন্ত্র। ১/১১ এর কুশিলবরা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মামলা করেছিল তা কিন্তু ১/১১ এর সরকারের দায়ের করা সব ক’টি মামলা চলমান রাখেন শেখ হাসিনা। অপরদিকে শেখ হাসিনার ১২টি মামলা মাত্র ১ মাসের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় বি.ডি.আর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকস আর্মি অফিসার কে হত্যা করা হয়। ১/১১ এর কুশিলবরা ভারতের ইচ্ছা বাস্তবায়িত করে। প্রহসনের বিচারে নিরীহ বি.ডি.আর এর সিপাহীরা কারাবরন করিতেছেন। ২০১৩ সালে শাপলা চত্তরে আলেম-ওলামাদেরকে গনহত্যার মাধ্যমে তাহাদের সভা প্রসপন্ড করা হয়।
“শাপলা চত্তরের ট্রাজেডি” এর নায়িকা ছিলেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে বিনা ভোটে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংবিধানের মূল স্পিরিট প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। কিন্তু সংবিধান লংঘন করে অবৈধ পার্লামেন্ট গঠন করে সরকার গঠন করেন।
প্রধান বিচারপতি এস.কে, সিনহা (আমার স্যার) সরকার বা পার্লামেন্ট অবৈধ মর্মে স্ব-প্রনোদিত হয়ে মামালা দায়ের করার খবর গোয়েন্দা বাহিনী জেনে ফেলে। সরকার এক সপ্তাহের মধ্যে তাহাকে ক্যান্সারের রোগী সাজিয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে। তবে এস.কে, সিনহা অতি উৎসাহী হয়ে জনাব মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, সালা উদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাশেম আলী, কাদের মোল্লা, দেলওয়ার হুসেন সাঈদী, কামরুজ্জামান তাহাদেরকে ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে সরকারের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করেন। আস্থাবাজন বিচারপতি হতে চেয়েছিলেন কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছার কাছে কোন শক্তির-ই পিপড়ার ক্ষমতা থাকে না। বিচারপতির ইচ্ছার ফলাফল যেমন কর্ম তেমন ফল প্রবাদটি প্রতিষ্ঠিত সত্য প্রমান হয়। ২০১৮ সালে ড: কামাল হোসেন এর নেতৃত্বে বিরোধী দলীয় মৌর্চা গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। কথা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা, আমাকে ১টি বার ট্রাষ্ট করেন। জনাব কামাল ট্রাষ্ট করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনটি ছিল বিশ^মানচিত্রে নজীর বিহীন। দিনের ভোট রাতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শেখ হাসিনার মনোনীত সরকারী গোলামদের দ্বারা উক্ত নির্বাচনটি সম্পূর্ন করেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ছেলে আরাফাত রহমান কোকু মৃত্যুবরন করিলে প্রতারক হাসিনা কথিত শোক জানানোর জন্য ক্যামেরা ট্রায়াল করতে বেগম জিয়ার বাসায় গিয়েছিলেন। কিন্তু বিচক্ষন বেগম জিয়া শেখ হাসিনার মত পাপীকে তাহার বাসায় ঢোকার অনুমতি দেননি। ক্যামেরা ট্রায়ালে ব্যর্থ হয়ে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে তাহার গৃহপালিত সাংবাদিকদের দ্বারা বিষোদগার করতে থাকেন। ক্যামেরা ট্রায়াল করার ঘন্টার মধ্যে বেগম জিয়ার কাছে ক্যাঙ্গারু কোর্ট থেকে ওয়ারেন্ট এর কপি আসে। এ-ই হল প্রতারক শেখ হাসিনার চরিত্র। সাগর-রুনি দম্পতিকে হত্যার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঘোষনা দিয়েছিলেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে সকল আসামীদেরকে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু ১৫ বৎসরে ও আসামীদের গ্রেফতারতো দূরের কথা ১১২ বার আদালত থেকে সময় নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। খবর নিয়ে জানা যায়, সাগর-রুনি হত্যার পিছনে শেখ হাসিনা জড়িত। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বাংলাদেশে তাহাদের আদর্শ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর আদর্শ বিদ্যমান। দীর্ঘ ১৭ বৎসর নেতা কর্মীরা অবৈধ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দল ভেংঙ্গে একজন নেতাকর্মীকে ও নিতে পারেননি। কারন বেগম জিয়া ও তারেক রহমান আমার জানামতে আপাদমস্তক সৎ। সততাকে শেখ হাসিনা প্রতারনা ও প্রহসনের মাধ্যমে একাধিকবার প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। পলিটিক্যাল সাইন্স এর ভাষায় ডিভাইড এন্ড রুলস পলিসি এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা বিভিন্ন লোভ লালসার মাধ্যমে হেভিয়েট নেতাদের ভাগিয়ে নিয়ে বিরোধী দলকে দূর্বল করার চেষ্টা করে থাকেন। যেমনটি এরশাদ সরকার এর নেতা কর্মীরা দলছূট হয়ে বিভিন্ন দলে যোগদান করেছিলেন। শেখ হাসিনার পাতানো ফাদে পা দিয়ে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী ১৯৮৬ ও ১৯৯৪ সালে তাহার নেতৃত্বকে মেনে নিয়ে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যেমন: শেখ হাসিনা, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী, দেলওয়ার হুসেন সাঈদী, কামরুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লাকে অন্যায়ভাবে ফাসি দিয়েছেন। শুধু ফাসি দিয়ে ক্ষ্যন্ত হননি, বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছেন। এ দিকে জাতীয় পার্টিকে (কথিত বিশ^ বেহায়া এরশাদ) এর দল বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছেন শেখ হাসিনা। অবৈধভাবে ক্ষমতার স্বাদ নিতে ইচ্ছুক নহে বেগম জিয়া। জনগনের আস্থা ও ভালবাসায় সিক্ত বেগম জিয়া। কেন স্বৈরাচারি হতে যাবেন? সেই বিশ্বাস থেকে বেগম জিয়া অবৈধ সরকারের অবৈধ শাসনকালে আন্যায়ভাবে তাহাকে কারাবরন করতে হয়েছে। কিন্তু কোন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। জনগনের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়ে উপাধী পেয়েছেন “মাদার অব ডেমক্রেসি।” এদিকে নবেলজয়ী ড: ইউনুস সরকার ২১ শে নভেম্বর ২০২৪ সালে সেনাকুন্ডে স্বশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে যে বিরল সম্মান দেখিয়েছেন, তা কিন্তু বিশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। অনেকে তাহাকে ও তাহার নেতৃত্বকে নেল্সন ম্যন্ডেলার সাথে তুলনা করে-তাহাকে প্রশংসিত করেছেন। সুতরাং বেগম জিয়া ও তারেক রহমান এর রাজনৈতিক জীবন ধন্য।
লেখক: সভাপতি, সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট। মোবাইল: ০১৮১৯-১৭৬২১৭।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com