সম্পাদকীয়:
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে এক মেয়াদ দায়িত্ব পালনের পর ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন। এবারের নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি বীরদর্পে ফিরে এলেন। বলা হচ্ছিল, এবারের নির্বাচন হবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ; কে প্রেসিডেন্ট হবেন, তার ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন ছিল। ট্রাম্পের জয়ের মধ্য দিয়ে সেই অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। বস্তুত মার্কিন জনগণ যা চেয়েছেন, সেটাই হয়েছে। গত চার বছর একজন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট দেশ শাসন করেছেন। মার্কিনিরা এবার চেয়েছিলেন পরিবর্তন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কিন নাগরিকরা সাধারণত অভ্যন্তরীণ বিষয়কেই বেশি গুরুত্ব দেন। নির্বাচনে এর বড় প্রভাব পড়ে। ট্রাম্পের জয়ের পেছনে নিশ্চয়ই আরও অনেক কারণ আছে। বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা সেসব বিশ্লেষণ করবেন। আমরা মার্কিন জনগণের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাই।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসীবিরোধী বলে পরিচিত। তিনি দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিম, কৃষ্ণাঙ্গ ও মেক্সিকানসহ অভিবাসী জনগোষ্ঠী স্বভাবতই উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৩০ লাখ বাংলাদেশি বৈধ বা অবৈধভাবে বসবাস করেন। অবৈধরা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা আশা করব, যুক্তরাষ্ট্র যে একটি অভিবাসীর দেশ এবং তাদের অবদানেই দেশটি আজকের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, এ সত্য অনুধাবন করবেন ট্রাম্প। সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মাবলম্বীর মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ভবিষ্যৎ ট্রাম্প প্রশাসন।
বিশ্বব্যাপী মার্কিন নীতির প্রভাব সর্বজনবিদিত। দেশটির ক্ষমতার পালাবদলে পররাষ্ট্রনীতিতে কী পরিবর্তন আসবে, ট্রাম্পের নেতৃত্বে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হবে, এটা এক বড় প্রশ্ন। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে রাতারাতি বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। দেশটির পররাষ্ট্রনীতি প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি পররাষ্ট্র বিভাগ, পেন্টাগন, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিল, সর্বোপরি কংগ্রেসের ভূমিকার ওপর নির্ভরশীল। এটি এক মিশ্র প্রক্রিয়া। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে এবার বিশেষত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে মার্কিন নীতিতে বড় পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটি যদি এ যুদ্ধ বন্ধে সহায়ক হয়, তাহলে তা বিশ্বশান্তির অনুকূলে কাজ করবে বলা যেতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষত ফিলিস্তিন ইস্যুতেও মার্কিন নীতির পরিবর্তন দেখতে চায় বিশ্ববাসী। আমরা আশা করব, এ ইস্যুতে দুই রাষ্ট্র সমাধানের ওপর জোর দেবে নতুন মার্কিন প্রশাসন। একমাত্র দুই রাষ্ট্র সমাধানই শান্তি আনতে পারে ফিলিস্তিন, তথা মধ্যপ্রাচ্যে।
নতুন মার্কিন নেতৃত্বের এশিয়া, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়া নীতি কী হবে, আমরা তা দেখার অপেক্ষায় থাকব। আমরা চাইব, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি বিশ্বশান্তির অনুকূলে ভূমিকা রাখবে। ক্ষমতার চেয়ার ব্যক্তিকে দায়িত্বশীল করে তোলে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাকি বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন, এটাই আমরা আশা করি।
Sharing is caring!