![](https://www.agamiprojonmo.net/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
প্রজন্ম ডেস্ক:
দেশে গত পাঁচ বছরে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের পরিমাণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে দেশে তিন কোটির বেশি মানুষ বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিচ্ছেন। তবে এ খাতে ঋণ বিতরণের মতো খেলাপি ঋণের হারও আগের তুলনায় বেড়েছে।
দেশের ক্ষুদ্রঋণ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) বা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বার্ষিক পরিসংখ্যান প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এমআরএর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক বিশেষ অতিথি ও পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ফজলুল কাদের আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
দেশে বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, এনজিও, এমএফএস প্রভৃতি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি—৮৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে নিবন্ধিত বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান (এমএফআই)। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এমএফআই প্রতিষ্ঠানগুলো বিতরণ করেছে ২ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা।
এমআরএর প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে নিবন্ধিত এমএফআই প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৯–২০ অর্থবছরে এমএফআই প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছিল, সেখানে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। সে তুলনায় গ্রামীণ ব্যাংক, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম গত পাঁচ বছরে খুব একটা বাড়েনি।
বর্তমানে অনুমোদিত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের (এমএফআই) সংখ্যা ৭২৪। এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ, বিতরণ ও গ্রাহকের দিক থেকে শীর্ষ পাঁচে রয়েছে ব্র্যাক, আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ, টিএমএসএস ও সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিস (এসএসএস)। এদিকে এমআরএর প্রতিবেদনে দেখা যায়, এমএফআই খাতে খেলাপি ঋণের হার আগের তুলনায় বেড়েছে। ২০২৩ সালে এ খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা গত বছর বেড়ে ৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
এমআরএর কর্মকর্তারা জানান, করোনার সময়ে এমএফআই প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলো গ্রামে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ বাড়িয়েছিল। পরবর্তী সময়েও এ চাহিদা অব্যাহত থাকে। গত অর্থবছরে অর্থনৈতিক মন্দা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নির্বাচনের কারণে গ্রামে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যায়। ফলে অনেকে ঠিক সময়ে টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। এ কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
শহরে ক্ষুদ্রঋণ চালুর পরামর্শ
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ক্ষুদ্রঋণের বেশির ভাগই বিতরণ হয় করা গ্রামাঞ্চলে। তবে দারিদ্র্য এখন গ্রাম থেকে শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে শহর এলাকায়ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্যও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি পৃথক তহবিল থাকা উচিত।
অনুষ্ঠানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক বলেন, ‘বড় বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন এবং তাঁদের মধ্য থেকে বড় বড় খেলাপি হচ্ছেন। তাঁদের জন্য আমরা হয়রান অবস্থায় রয়েছি। সে তুলনায় ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতারা অনেক ভালো আছেন।’
টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে ক্ষুদ্রঋণ কতটা ভূমিকা রাখছে, সেই প্রশ্ন তোলেন পিকেএসএফের এমডি মো. ফজলুল কাদের। তিনি বলেন, বর্তমানে দাবি করা হয় যে ক্ষুদ্রঋণের ৬ কোটি ৪০ লাখ গ্রহীতা রয়েছেন। তবে একজনের একাধিক হিসাব সমন্বয় করলে এই সংখ্যা কমে যাবে। তাঁর মতে, সংখ্যাটি তিন কোটির বেশি হবে না।
‘এত প্রতিষ্ঠানের যৌক্তিকতা নেই’
এমআরএর প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে ১০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকার ওপরে ঋণ দেয়, এমন এমএফআই আছে ১৮৬টি। এই প্রতিষ্ঠানগুলোই ৯৮ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে থাকে। অন্যদিকে মাত্র ২ শতাংশ (৫৩৮টি) প্রতিষ্ঠান ১০ হাজার টাকার কম পরিমাণের ঋণ বিতরণ করে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমানে হাজারখানেক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এত প্রতিষ্ঠান রাখার যৌক্তিকতা নেই। এ ছাড়া অনেক এমএফআই প্রতিষ্ঠান মুনাফার টাকা দিয়ে ঋণের আওতা না বাড়িয়ে জমি কেনায় অর্থ বিনিয়োগ করে। এটিও ঠিক নয়।
বেসরকারি এমএফআই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি ২২টি সংস্থা থেকেও বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকারিভাবে এসব ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন গভর্নর। এ ছাড়া বিভিন্ন সমবায় সমিতির ঋণ কার্যক্রম নিয়েও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। গভর্নর বলেন, সমবায় সমিতিগুলো লোনশার্ক (আগ্রাসী ঋণ কার্যক্রম) তৈরি করছে।
Sharing is caring!