নাটোর প্রতিনিধি:
এমপিওভুক্তির সব শর্ত পূরণ করেও শুধু নামের কারণে ২২ বছর ধরে এমপিওবঞ্চিত নাটোরের বাগাতিপাড়ার ‘শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ’। প্রতিষ্ঠার প্রায় ২ যুগ পরও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা। দীর্ঘদিন পরও বেতন-ভাতা না পাওয়ায় চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন অনেকে। আবার সবশেষ শিক্ষক নিবন্ধনের (এনটিআরসি) মাধ্যমে নতুন নিয়োগ পেয়েছেন ৪ শিক্ষক।
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, জিয়াউর রহমানের নামের কারণেই কলেজটি এতদিনেও এমপিওভুক্ত হয়নি। তাই দ্রুত কলেজটি এমপিওভুক্তির দাবি জানান তারা।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে তৎকালীন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান (পটল) শহীদ জিয়াউর রহমান নামে কলেজটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ওই বছরই প্রতিষ্ঠানটি পাঠদানের অনুমতি পায় এবং স্বীকৃতি পায় ২০০৫ সালে। প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সব শর্ত পূরণ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সব শর্ত পূরণের পরও এমপিওপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের নামই যেন বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমপিও না হওয়া এবং নামের কারণে কলেজটি নিয়ে নানামুখী চাপের মুখে ২০২১ সালে কলেজের নাম বদলে রাখা হয় ‘দয়ারামপুর কলেজ’।
এছাড়া, ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে কলেজটিতে ২৭ শিক্ষক-কর্মচারী বিনাপারিশ্রমিকে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। একদিকে শিক্ষকদের বয়স বাড়ছে, অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও না হওয়ায় সামাজিকভাবে টিকে থাকার লড়াইয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবতের জীবনযাপন করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা সদর থেকে দয়ারামপুর ইউনিয়নের দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। সেখানে একটি সামরিক স্থাপনা (কাদিরাবাদ সেনানিবাস) থাকায় ওই এলাকায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেসামরিক শিক্ষার্থীদের আসন সংখ্যা কম এবং ব্যয় তুলনামূলক বেশি। ফলে ওই এলাকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। কলেজটি এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষকরা পাঠদানে আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আলতাব হোসেন (৫০) জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি কলেজটিতে শিক্ষকতা করছেন। দীর্ঘ ২২ বছর বিনাবেতনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন। বাংলাদেশের মধ্যে এটাই একমাত্র কলেজ যেখানে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র অথচ কলেজটি এমপিওভুক্ত নয় বলে জানান তিনি।
কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোরশেদ (৪৯) জানান, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই সব শর্ত পূরণ করে তারা এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করে এলেও এখনো কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়নি।
‘শহিদ জিয়াউর রহমান কলেজ’ নামের কারণেই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিহিংসার শিকার দাবি করে তিনি বলেন, একদিকে এমপিওভুক্ত না হওয়া, অপর দিকে রাজনৈতিক চাপে ২০২১ সালে তারা কলেজেটির নাম পরিবর্তন করতেও বাধ্য হন। নাম পরিবর্তন করেও প্রতিহিংসার কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে এমপিওভুক্ত করাতে পারেননি।
এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হা-মীম তাবাসসুম প্রভা জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত না। সবেমাত্র যোগদান করেছেন, খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবেন।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (কলেজ) মো. আলমাছ উদ্দিন বলেন, কলেজটির কাগজপত্র দেখলে বোঝা যেত কি অবস্থায় আছে। তবে এমপিওভুক্ত হওয়ার অনেকগুলো শর্ত রয়েছে। সেগুলো পূরণ করে নিয়মমাফিক আবেদন করা হলে এমপিওভুক্ত হবে।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com