শেরপুর প্রতিনিধি:
৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার মো. আবুল কালাম আজাদ। জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রবাজ রশিদা বেগম কলেজ থেকে জিপিএ ২.৭৭ পেয়েছেন তিনি। আবুল কালাম বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) বোর্ডের চলতি বছরের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল পেয়ে বিকেলে তিনি মোবাইল ফোনে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন। আবুল কালাম গত ২০২২ সালে বাউবির বকশীগঞ্জের চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন।
আবুল কালামের বাড়ি শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়নের পশ্চিম লঙ্গরপাড়া গ্রামে। এলাকায় তিনি ‘কবি কালাম’ নামে পরিচিত। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ। স্কুলজীবনে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর পারিবারিক সংকটে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। পড়াশোনার প্রতি দুর্বলতা থেকেই ২০২০ সালে বকশীগঞ্জের চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম উচ্চবিদ্যালয়ে বাউবির আওতাধীন এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হন। ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একই স্কুলে এইচএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হন।
২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম সেমিস্টারে অংশ নিয়ে পাস করেন। এরপর ৯ আগস্ট থেকে দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাউবি কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা বাতিল করে এবং যারা প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের অটোপাস ঘোষণা করে। এর ধারাবাহিকতায় আবুল কালাম জিপিএ ২ দশমিক ৭৭ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
অনুভূতি প্রকাশ করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছোট ছেলে আনিসুর রহমানের কাছ থেকে পরীক্ষায় পাসের খবরটি প্রথম জানতে পারেন। এইচএসসি পাস করতে পেরে তার খুব ভালো লাগছে। বৃদ্ধ বয়সে পড়ালেখা করাটা চ্যালেঞ্জ। এরপরও পাস করেছেন। এখন স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন বলে জানান।
আবুল কালাম বলেন, পড়ালেখার প্রতি আমার ভীষণ দুর্বলতা। সব সময় সংবাদপত্র ও বই পড়ি। গান লিখি। কবিতা লিখি। কয়েকটি উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখেছি। এসবের পাণ্ডুলিপি যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করছি।
তিনি বলেন, শিক্ষার জন্য বয়স কোনো বাধা নয়। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি। সুশিক্ষা মানুষের জীবন ও মনকে উন্নত করে। কুসংস্কার থেকে মুক্ত রাখে।
খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া বলেন, স্বশিক্ষিত আবুল কালামের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের খবর শুনে তিনি ও এলাকার মানুষ খুব খুশি। তিনি বৃদ্ধ বয়সে ধৈর্য ধারণ করে পড়ালেখা অব্যাহত রেখেছেন। এটি সবার জন্য অনুকরণীয়। তার জন্য এলাকাবাসী গর্বিত।
বাউবির জামালপুরের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বাউবি যেকোনো বয়সের মানুষের পড়ালেখা করার সুযোগ করে দিয়েছে। এ জন্য বৃদ্ধ বয়সেও আবুল কালাম আজাদ তার পড়ালেখা করার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পেরেছেন। বাউবির অধীনে তিনি (কালাম) যত দিন পড়তে চাইবেন, তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে।
Sharing is caring!