প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৪ঠা শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

লাশ বাড়ির উঠানেও নিতে দেয়নি পুলিশ

editor
প্রকাশিত মার্চ ৩০, ২০২৫, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ
লাশ বাড়ির উঠানেও নিতে দেয়নি পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার:
জুলাই বিপ্লবে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ যশোরের ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবিরের (২০) পরিবারে ঈদ নিয়ে নেই বাড়তি কোনো চঞ্চলতা। ঈদের কথা মনে হলেই মা মোছাম্মদ শিরিনার দুই চোখ ভেসে যায় পানিতে। বলেন, ‘একমাত্র ছেলেকে ছাড়া প্রথম ঈদ এবার। আরও ঈদ আসবে, যাবে। ঈদের আনন্দ আর ফিরে আসবে না।’ বাবা নওশের আলী হাটে, মাঠে, ঘাটে সময় ব্যয় করে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করেন। একমাত্র বোন এইচএসসি পরীক্ষার্থী জেরিন বলেন, ‘ভাইয়া ঢাকায় সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ পড়ত। পাশাপাশি প্রাইভেট পড়াত। বাড়িতে ফেরার সময় আমার জন্য নানান জিনিস কিনে আনত। নিজের জন্য কিছুই কিনত না।’ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরবাগ ইউনিয়নের দেউলি গ্রামের মেধাবী সহজসরল তরুণ ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির (২০)। তাঁর ছিল না কোনো বাড়তি চাহিদা। বাবা নওশের মাঝেমধ্যে বিরক্ত হয়ে বলতেন, ‘তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।’ জাবির বলতেন, ‘একদিন এমন কাজ করব, তুমি ভাবতেও পারবা না; কিন্তু গর্ব করবা।’

ছেলের পুরোনো সেসব কথা স্মরণ করে জাবিরের বাবা নওশের আলী বলেন, ‘আজ মানুষ আমাদের শহীদের মা, শহীদের বাবা, শহীদ পরিবার বলছে।’ তিনি বলেন, ‘এসএসসি, এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট করে জাবির। সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে বিবিএতে ভর্তি হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর খরচ চালানো খুবই কষ্টকর ছিল। প্রথম বর্ষে ছিল। ঢাকার রামপুরা-বনশ্রী এলাকায় মেসে থাকত।’

মা শিরিনা বলেন, ‘ছেলের স্বপ্ন ছিল স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকা যাবে। ছোট বোনকে ভালোভাবে পড়াশোনা করাবে। বাবা, মা আর বোনের চিন্তা করত। কোরবানির ঈদে বাড়ি এসেছিল। সপ্তাহখানেক পর ঢাকা চলে যায়। রান্না করা মাংস, গরুর ভুঁড়ি ভাজি, রুটি, দুধ, ডিম দিয়েছিলাম। আর বাড়িতে আসেনি। মৃত্যুর পর তার লাশটা বাড়ির উঠানেও নিতে দেয়নি পুলিশ আর গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা। ২৬ জুলাই রাত ১১টায় এলাকায় লাশ পৌঁছানোর পরপরই পারিবারিক কবরস্থানের পাশে দ্রুত জানাজা পড়া হয়। এরপর সঙ্গে সঙ্গে কবর দিয়ে দেওয়া হয়।’

বাবা নওশের বলেন, ‘১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে মহাখালীতে অংশ নেয় জাবির। তার শরীরে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট লাগে। বাড়িতে কাউকে বলেনি। ঢাকার আন্দোলনের খবর শুনে ভয় হতো। ফোনে তাকে বলতাম ঘর থেকে না বেরোনোর জন্য। জাবির বলত, ঘরে কে আছে? সবাই বাইরে। আমি স্বার্থপরের মতো ঘরে থাকব কী করে? পরদিন ১৯ জুলাই রামপুরায় আন্দোলনে অংশ নেয়। বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ সেখানে গুলি চালায়। জাবিরের সামনে পুলিশের গুলিতে আন্দোলনরত দুজনের মৃত্যু হয়। তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে জাবিরের ঊরুতে গুলি লাগে। ১৯ জুলাই বিকালে একজন ফোন করে জানায় জাবির মুগদা হাসপাতালে ভর্তি। দ্রুত রক্ত লাগবে। এক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করা হয়। আমরাও ঢাকায় পৌঁছে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করি। কোনো বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা করছিল না। গুলিতে তার কিডনির শিরা বন্ধ হয়ে গেছে। ডাক্তাররা পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন।

২২ জুলাই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। এদিন ডাক্তাররা বলেন পা কাটার প্রয়োজন নেই। বৃহস্পতিবার জাবিরকে ডায়ালাইসিস করার জন্য নেওয়া হয়। কিন্তু আধা ঘণ্টা পর ডায়ালাইসিস বন্ধ হয়ে যায়। নেওয়া হয় আইসিইউতে। বিফলে যায় সব চেষ্টা। ২৬ জুলাই শুক্রবার বিকাল ৪টায় শেষবারের মতো নিঃশ্বাস নেয় জাবির।’

Sharing is caring!