স্টাফ রিপোর্টার:
মাত্র ১১ মাস আগে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের কলেজ রোডে ভাড়া নিয়ে দোকান শুরু করেছিলেন কামাল হোসেন। জামানত হিসেবে ১ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিয়ে সাজসজ্জা করেন। একটি বছর পুরো না হতেই নতুন বছরের শুরুতে তাকে দুই হাজার টাকা ভাড়া বাড়ানোর কাগজ ধরিয়ে দিয়েছেন কেয়ারটেকার। কামাল হোসেন এ নিয়ে আলাপকালে বললেন, ‘দোকান চালুর পর থেকে এখনো ফুরসত পাইনি। এরই মধ্যে যেভাবে ভাড়া বাড়ানো হলো, তাতে ব্যবসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।’
বিয়ানীবাজার পৌরশহরে বসবাসরত লোকজনের একটি বড় অংশ ভাড়াটিয়া। সংশ্লিষ্টদের মতে, ‘পরের জায়গায়’ ভাড়ার বিনিময়ে থাকা মানুষের সংখ্যা ৩০ শতাংশ। এই ৩০ শতাংশ ভাড়াটিয়ার গৃহবাস নির্ভর করে মালিকের খেয়ালখুশির উপর। এখানকার নয়াগ্রাম, খাসাড়িপাড়া, খাসা, পন্ডিতপাড়া, সুপাতলা, ফতেহপুর, দাসগ্রাম এলাকায় বড় অংকের ভাড়াটিয়া বসবাস করেন। তারা মাসে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে একেকটি বাসায় বসবাস করছেন। তবে মূলশহরে ১২ হাজার টাকার নীচে কোন বাসা ভাড়া দেয়া হয়না।
নতুন বছরের শুরু যত সম্ভাবনার বারতাই বয়ে আনুক, বিশেষ করে ভাড়াটিয়া বা ব্যবসায়ীদের বুক কাপন ধরায়। ভাড়াটেমাত্রেরই বুক ঢিপ ঢিপ করতে থাকে ডিসেম্বর এলেই। ব্যতিক্রম থাকলেও তার সংখ্যা নিতান্ত কম।
ভাড়া বাসা কিংবা আবাসন ব্যবসা এখন বিয়ানীবাজারে জমজমাট। পৌরশহরসহ উপজেলার সব জায়গায় প্রতিযোগীতা করে আবাসন ব্যবসা বিস্তৃত হচ্ছে।
নয়াগ্রামের হাসপাতাল রোডে তিনটি রুমের ফ্ল্যাটে থাকেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. জানে আলম। তাঁর বাড়ির মালিক ১ জানুয়ারি একলাফে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ভাড়া বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন। বাড়িওয়ালার যুক্তি হলো, বাথরুম আর রান্নাঘরে নতুন টাইল্স বসানো হয়েছে! জানে আলম বলেন, ‘কিছু করার নেই। বাসার পাশে বাচ্চার স্কুল; তাই মেনে নিয়েছি। গত এক বছরে আমার কোনো আয় বাড়েনি। ’
একই সমস্যার কথা বললেন নিমতলার শরীফ আহমেদ। তার বাসার মালিক প্রতিবছরই কমবেশি ভাড়া বাড়ান। এ বছরের শুরুতেও ২ হাজার টাকা বাড়ানোর কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
বিয়ানীবাজার পৌরশহরের বিপনী বিতানগুলোর ভাড়াটিয়াদের অবস্থা করুণ। সাটাঁরের ভাঁজে-ভাঁজে ভাড়া নেন দোকান মালিকরা। আর অগ্রীম নেয়া ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা। সে হিসাবে পৌর কর, সরকারি ট্যাক্স দিতে মালিকদের যত গড়িমসি। পৌরশহরের শতকরা ৯০ ভাগ দোকানে বছরে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। আয়-ব্যবসা না থাকলেও ভাড়া প্রদানে অজুহাত দেখানো যাবেনা। জামানত বাবদ অতিরিক্ত টাকা, মাসিক ইচ্ছেমত ভাড়া বৃদ্ধি মালিকদের এখন রুটিন কাজ।
খোঁজখবর করে দেখা যায়, বিয়ানীবাজারের বাড়ির মালিকেরা সাধারণত বছরে ১০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাসাভাড়া বাড়িয়ে থাকেন। নির্ধারিত উপার্জনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আয়ের সঙ্গে সংগতি নেই। কিন্তু নাগরিক জীবনের এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে খুব একটা তৎপরতা চোখে পড়ে না। ভাড়াটেরা নিজেরাও সংগঠিত নন। নাগরিক জীবনের অবিরাম দৌড়ে ব্যস্ত খুব কম ভাড়াটেই এসব নিয়ে ভাবেন। কেবল মাসের শেষে তাদের দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া উপায় নেই।
ভাড়াটিয়া বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে দেখা যায়, বিয়ানীবাজারে বাসাভাড়া এখন যেন আক্ষরিক অর্থেই আকাশচুম্বী। অনেক ক্ষেত্রে বাসার অবস্থান, আকার বা সুযোগ-সুবিধার সঙ্গেও তার তেমন সংগতি নেই।
ফতেহপুর পয়েন্টের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন আশরাফ উদ্দিন। তিনি বাসার ভাড়া দেন ১৫ হাজার টাকা। এর বাইরে সব বিল ও সার্ভিস চার্জ দিতে হয় তাকে।
বিয়ানীবাজার পৌরশহরের প্রকৌশলী কামরুজ্জামান পলাশ জানান, ‘এখানকার মানুষ এখন আবাসনমুখি ব্যবসায়। তারা কম জায়গা থেকে বেশী আয়ের উপায় খুঁজেন। ভবন নির্মাণেও মালিকরা আমাদের সে বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে বলেন।'
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com