স্টাফ রিপোর্টার:
বিয়ানীবাজারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ‘বীর নিবাস’ নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দুই বছর আগে ঘরের নির্মাণকাজ শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি। উল্টো ঘর নির্মাণে সিমেন্ট, বালু ও মাটি দিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার। এছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত আবাসস্থল ‘বীর নিবাস’-এর নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও চরম ধীরগতির অভিযোগ অনেক পুরনো।
প্রকল্পের দুই দফা মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর পরেও নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে না। অনেক বাড়ি হস্তান্তরের আগেই রডে মরিচা, ইটে ময়লা পড়ছেG নির্মিতব্য এবং নির্মাণ শেষ হওয়া ‘বীর নিবাস’ ঘুরে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে।
বিয়ানীবাজারের দুবাগে নির্মিতব্য বীর নিবাসের মালিক মুক্তিযোদ্ধা সন্তান দেলোওয়ার হোসেন অভিযোগ করেছেন, দুই বছরের বেশী সময় থেকে তার আবাসনের ঘরটির নির্মাণ কাজ হচ্ছে। যা দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ।
বীর নিবাসের প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ১৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। তবে ২০২১ সালে এর জন্য বরাদ্দ ছিল ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব জমি বা ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধার জন্য সরকারি খাসজমিতে বাড়ি নির্মাণের ব্যবস্থা করে সরকার। ৭৩২ বর্গফুট আয়তনের একতলা বাড়িতে দুটি বেডরুম, একটি ড্রয়িং ও একটি ডাইনিং, দুটি বাথরুম এবং একটি বারান্দা রয়েছে। এছাড়া একটি উঠান, একটি নলকূপ, গবাদি পশু পালনের জন্য পৃথক শেড রয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৫৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে আবাসন (বীর নিবাস) নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আরোও ৮টি বীর নিবাস নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প ‘বীর নিবাস’ নির্মাণে তাগাদা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। উপজেলা প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অধিকাংশ ঠিকাদার পলাতক থাকায় কাজ শুরু নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি টিম সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছে।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানায়, নির্মাণ কাজে অনিয়ম হলেও বীর নিবাস বরাদ্দে সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার প্রভাব, সঙ্গে দলীয় সুপারিশও কাজ করেছে। নতুন করে যাতে বীর নিবাস নির্মাণ নিয়ে অনিয়মের প্রশ্ন না ওঠে, সেজন্য উপজেলা প্রশাসনকেন্দ্রিক কমিটি হয়েছে। বরাদ্দকৃত কিন্তু নির্মাণকাজ শুরু হয়নি-এমন প্রকল্প দ্রুত যাচাই-বাছাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার পলাতক থাকলে কাজ করতে সিদ্ধান্ত নেবে স্থানীয় প্রশাসন। তারা কাজ করতে না চাইলে বীর নিবাস নির্মাণে গঠিত কমিটি বা স্থানীয় প্রশাসন চাইলে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েও কাজ করতে পারবে। যাচাই-বাছাই কমিটি বীর নিবাসে কোনো অনিয়ম পেলে তাদের সুপারিশ মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যলয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পের অধিকাংশ ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। অনেক ঠিকাদার কাজ নিজে না করে সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছেন। ফলে কাজের মান খারাপ হয়েছে। বীর নিবাস বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, নির্মাণত্রুটির ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দেননি। যদি ত্রুটি থাকে, তাহলে সেগুলো মেরামত করে দিলেই কেবল ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হবে।
বীর নিবাস ঠিকাদারী কাজে জড়িত একজন অজ্ঞাত স্থান থেকে জানান, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর নির্মাণকাজ কোনও ঠিকাদার করতে চায় না। বর্তমান ঘরের বাজেটের সঙ্গে মালামালের দাম অনেক তফাত। আমার অধীনে ছয়টি ঘর সম্পূর্ণ করে দিয়েছি।’ অপর আরেক ঠিকাদার বলেন, কাজে কোনও অনিয়ম হয়নি। নিম্নমানের ইট, বালু, রড, সিমেন্ট দেওয়ার তথ্য ভূল। কর্তৃপক্ষ আমাদের যথাসময়ে টাকা দিচ্ছে না। কাজ অর্ধেক করলে একভাগের টাকা দেয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সেবা প্রদানসহ স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতি স্মরণ করে দেশপ্রেমে জাগ্রতের অংশ হিসাবে বীর নিবাস প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাসস্থানসহ স্যানিটেশনব্যবস্থা উন্নত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের সৃষ্টির পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।
Sharing is caring!