স্টাফ রিপোর্টার:
বিয়ানীবাজারে বছরের প্রথম দিন বই বিতরণের প্রস্তুতি চলছে। ১ জানুয়ারি সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হবে। তবে এবার প্রথম দিন চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন বই পাচ্ছে না। কারণ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোনও বই উপজেলায় এসে পৌঁছেনি। ইতোমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বেশিরভাগ পাঠ্যবই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছে গেছে। ফলে এই তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পাবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সকল বই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্টানে পৌঁছানো হয়েছে। তাদের বই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এলেও চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কোনও বই আসেনি। ফলে বছরের প্রথম দিন এই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন বই পাচ্ছে না। এ নিয়ে কিছুটা মন খারাপ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের।
বিয়ানীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফনান আহমেদ এবার চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় ভালো ফল করে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছে। বছরের শেষ দিন মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিদ্যালয়ে এসে পরীক্ষার ফলের শিট হাতে পেয়ে দারুণ খুশি। তবে যখন শিক্ষকদের কাছে শুনেছে, বছরের প্রথম দিন নতুন বই পাবে না তখনই মন খারাপ হয়ে যায়।
আফনান আহমেদ জানিয়েছে, ‘এই স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি নতুন বই পেয়ে আসছি। তবে এবারই প্রথম, পঞ্চম শ্রেণিতে উঠার পর প্রথম দিন বই না পাওয়ার খবর শুনলাম। শিক্ষকদের কাছে বিষয়টি শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট শিট হাতে পেয়ে মন যেমন আনন্দে ভরে উঠেছিল, ঠিক তেমনই বই না পাওয়ার কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেছে।’
একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার জানায়, ‘বছরের প্রথম দিন নতুন বই পাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। তবে এবার প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন বই পাবে। কিন্তু আমরা নতুন বই পাচ্ছি না। এটা আমাদের জন্য বেদনার। সবার জন্যই নতুন বইয়ের ব্যবস্থা করা হলে ভালো হতো।’ চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোনও বই না আসায় কিছুটা মন খারাপ শিক্ষকদেরও।
এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই উল্লেখ করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা নৃপেন্দ্র নাথ দাস বলেন, ‘আসলে এবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল হয়ে গেছে। যার জন্য ছাপার কাজে দেরি হয়ে যায়। মূলত এসব কারণে বই পেতে দেরি হচ্ছে। তবে শিগগিরই আমরা বই পেয়ে যাবো।’
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলুদুর রহমান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার নতুন শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই পরিমার্জন করে ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রক্রিয়ায় বই পরিমার্জন ও ছাপার কাজে কিছুটা দেরি হয়। যার ফলে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণির বই এলেও চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই আসেনি। তবে কয়েক দিনের মধ্যে চলে আসবে। তখন সব শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া হবে।’
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তাফা মুন্না বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জন করাসহ ছাপাসংক্রান্ত কাজে বিলম্বের কারণে এবার এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
Sharing is caring!