মিলাদ জয়নুল:
জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব-আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে অন্তত: ২-৩ যুগ পূর্বে বিয়ানীবাজারে বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি আলোর পাঠশালা গঠন করা হয়। সময়ের ব্যবধানে আলো জ্বালানো সেসব পাঠশালায় শুধুই অন্ধকার।
বিয়ানীবাজার উপজেলার স্বীকৃত অন্তত: এক ডজন পাঠাগার এখন উইপোকা আর ইঁদুরের নিরাপদ বাসস্থান। অথচ একসময় এখানকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের জ্ঞান আহরণের জন্য সরব ছিল গাঠাগারগুলো। যথাযথ উদ্যোগ, সংরক্ষণের অভাব, সাহিত্য বিমুখতা, তথ্য প্রযুক্তির অবাধ অপব্যবহারসহ পড়ুয়াদের অনাগ্রহে উপজেলার পাঠারগুলোতে থাকা বিভিন্ন ভাষার দুর্লভ ১৫ হাজার গ্রন্থের ভাণ্ডারের দিকে এখন কেউ ফিরেও থাকায়না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময়ের সরব এই পাঠাগারগুলো ছিল দুর্লভ বই ও প্রতিদিনের বাংলা-ইংরেজি এবং সাপ্তাহিক পত্রিকার কেন্দ্রস্থল। এগুলো ঘিরে বসতো সাহিত্য প্রেমিদের আড্ডা। এসব পাঠাগার ঘিরে এখনো আছে পরিচালনা কমিটি, আজীবন ও সাধারণ সদস্য। পাঠাগারে রয়েছে বৈদ্যুতিক ফ্যান, চেয়ার, টেবিলসহ নানা জিনিসপত্র। অভাব কেবল পাঠকের, পড়তে আগ্রহীদের। নেই জানার আগ্রহীদের আনাগোনা।
জানা যায়, বিয়ানীবাজার পৌরশহরে পঞ্চখন্ড গোলাবিয়া পাবলিক লাইব্রেরী, গোলাবশাহ সমাজকল্যাণ সংস্থার গ্রন্থাগার, নবাং-সূতারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামমাত্র শিশু পাঠাগার, পূর্ব মুড়িয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. খসরুজ্জামান চৌধুরী পাঠাগার, মোল্লাপুরে মুন্সী ইসলামি স্মৃতি পাঠাগার, গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের আছিরগঞ্জ গণপাঠাগার, তিলপাড়ার উলুউরী গ্রামে ‘নানকার বিদ্রোহ স্মৃতি পাঠাগার’ একসময় সাহিত্য প্রেমিদের খোরাক মিটিয়েছে। এখন অনেক পাঠাগারের দরজা-জানালা খোলা হয়না মাসের পর মাস। চেয়ার-টেবিলে পড়েছে ধুলোর স্তর, উইঁপোকা খাচ্ছে কাঠ-ফার্ণিচার।
বইপ্রেমী আজিজ ইবনে গণি আফসোস করে জানান, পাঠাগার স্থাপনের শুরুর দিক এতো সহজ ছিল না। তখন পাঠাগার স্থাপনে যে স্বপ্নবাজ তরুণরা উদ্যোগ নিয়েছিল তারা কেউই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ছিল না। কেউ সারা মাসের পকেট খরচ বাঁচিয়ে, কেউবা মাসের টিউশনির টাকা, আর স্কুল পড়ুয়া ছোট ছেলে মেয়েদের টিফিনের জমানো টাকায় এবং সবার স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে ওঠে এসব পাঠাগার।
একই অবস্থা উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরীগুলোতে। ফলে শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞান অর্জনে মারাত্মক বিপত্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ের লাইব্রেরীগুলো কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে বেশীরভাগই হ-য-ব-র-ল। শিশুকিশোরদের উপযোগী বইসহ নেই পর্যাপ্ত পরিমানের বই, যে কয়েকটি বই রয়েছে তা প্রায় কাটা-ছেঁড়া এবং নিম্নমানের। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি সেশনে লাইব্রেরীর জন্য আলাদা ফি' নেয়া হলেও বইয়ের পরিধি বাড়েনা। কেবল পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত কিছু সংখ্যক বই ক্রয় করা হয়।
সিলেট শিক্ষাবোর্ড সূত্রে এমপিওভূক্ত প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে ১২শ’ এবং নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১ হাজার বই থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ একাধিক বিদ্যালয়ে বইয়ের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লাইব্রেরীর জন্য আলাদা কোনো কক্ষ নেই। বেশীরভাগ বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কক্ষে একটি বা দুটি সকেইছে অযত্ন-অবহেলায় গাদাগাদি করে লাইব্রেরীর বইগুলো রাখা হয়েছে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের কাঙ্খিত বইগুলো খোঁজে বের করতে লাইব্রেরীর দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষককেও হিমশীম খেতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক আবদুন নূর জানান, এখনকার প্রজন্মকে পাঠাগারমুখি করতে কেউ এগিয়ে আসছে না। অথচ গ্রামীণ জনপদে গড়ে ওঠা এসব পাঠাগারগুলো সঠিক তদারকি করলে দেশের কোনো ঘটনা নিয়ে কেউই ইতিহাস বিকৃতি করতে পারবে না।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তাফা মুন্না জানান, স্থানীয় পাঠাগার-গ্রান্থাগারের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে। প্রয়োজনে পাঠক বাড়াতে যুগোপযোগী উদ্যোগ নেয়া হবে।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২
ইমেইলঃ agamiprojonma@gmail.com, milad.jaynul@gmail.com