প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৯শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

বিয়ানীবাজারের শিক্ষার্থী খাতায় আছে বাস্তবে নেই, ধরা পড়ল টিকা কর্মসূচিতে

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ১১, ২০২৪, ০৩:৩৬ অপরাহ্ণ
বিয়ানীবাজারের শিক্ষার্থী খাতায় আছে বাস্তবে নেই, ধরা পড়ল টিকা কর্মসূচিতে

 

# জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধী টিকা দিতে গিয়ে বের হয়ে আসে এই তথ্য
# খাতা-কলমে নাম থাকলেও স্বাস্থ্যকর্মীরা বাস্তবে শিক্ষার্থী খুঁজে পাননি
# কেউ কেউ স্বীকার করে নিয়েছেন, অনুপস্থিত থাকা শিক্ষার্থী বাস্তবে নেই

 

মিলাদ জয়নুল:

 

শিক্ষা বোর্ডের মঞ্জুরি বহাল রাখা কিংবা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ (এমপিও) চালু রাখার স্বার্থে স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে খাতা-কলমে বাড়তি শিক্ষার্থী দেখানোর অভিযোগ পুরোনো। বিয়ানীবাজার উপজেলায় এবার এই থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) টিকা দেওয়ার সময়। স্কুল-মাদ্রাসায় খাতা-কলমে নাম থাকলেও স্বাস্থ্যকর্মীরা বাস্তবে শিক্ষার্থী খুঁজে পাননি। নির্দেশনা থাকলেও শিক্ষকেরা তাদের হাজিরও করতে পারেননি। কেউ কেউ স্বীকার করে নিয়েছেন, অনুপস্থিত থাকা শিক্ষার্থী বাস্তবে নেই।

বিয়ানীবাজার উপজেলায় টিকা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট তপন জ্যোতি ভট্রাচার্য বলেন, ‘টিকা প্রয়োগ শুরুর আগে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একাধিকবার করে গিয়েছি। বলেছি, বাস্তবে যে শিক্ষার্থী, সেই তালিকা যেন আমাদের দেওয়া হয়। বেতন-ভাতা চালু রাখার জন্য অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খাতায় অতিরিক্ত শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে। ভয়ে শিক্ষকেরা আমাদের আসল তালিকা দেননি।’ তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকে এ সমস্যা নেই, কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় আছে। স্কুলের চেয়ে আবার মাদ্রাসায় সমস্যা বেশি। আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের শিক্ষার্থীদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, পরে কাজে গিয়ে (টিকা দেওয়ার সময়) আমরা সেটা পাইনি। ফলে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, সেটা অর্জিত হয়নি।’

বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, এখানকার ২৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রায় ১৮ হাজার (১৭ হাজার ৭শ’) কিশোরীকে এই টিকা দেওয়ার কথা ছিল। তবে অনলাইনে মাত্র ৮ হাজার ছাত্রী এই টিকা নিতে নিবন্ধন করে। তন্মধ্যে প্রায় ৬ হাজার ছাত্রী টিকা নিয়েছেন। মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট তপন জ্যোতি ভট্রাচার্য এ বিষয়ে জানান, অপপ্রচার, গুজবের কারণে অনেকে টিকা নিয়ে আগ্রহী হয়নি। তবে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্টানে শিক্ষার্থী সংখ্যা খাতার তালিকা অনুযায়ী বাস্তবে কম বলে ধরা পড়েছে।

 

স্কুল পর্যায়ে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রীদের এইচপিভি টিকা দেওয়া শুরু হয় গত ২৪ অক্টোবর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়েই টিকা প্রয়োগ করা হয় ৭ নভেম্বর পর্যন্ত। ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরের ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের জন্য ক্যাম্পেইন পরিচালিত হবে।

স্কুল-মাদ্রাসায় টিকা প্রয়োগের সঙ্গে নিয়োজিতরা জানিয়েছেন, অন্তত: ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭টি মাদ্রাসা, ২টি উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্টানের খাতা এবং ছাত্রীর প্রকৃত সংখ্যায় গড়মিল আছে। বিয়ানীবাজারে প্রায় ১৮ শতাংশ ছাত্রী আসলেই আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

খাতায় অতিরিক্ত ছাত্রীর তালিকা রাখার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলুদুর রহমান বলেন, বিয়ানীবাজারের শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোতে স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠ কর্মীদের প্রেরণ করে তথ্য নেয়া হয়েছে। তথ্য দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ভূল থাকতে পারে। তিনি বলেন, জেলা থেকেও তথ্যগত গড়মিলের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হচ্ছে।

 

 

সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক আবু সাইদ মো: আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘মঞ্জুরির আবেদন এলে আমরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদেরই বলি, তিনি যেন এই শিক্ষার্থীর সংখ্যা সত্য—এমন প্রত্যয়ন দেন। তিনি প্রত্যয়ন দিলে আমরা বোর্ডের মঞ্জুরি নবায়ন করে থাকি।’

Sharing is caring!