স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের টিকরপাড়া থেকে বারইগ্রাম পর্যন্ত প্রধান রাস্তার সর্বত্র পরিবহণ স্ট্যান্ড স্থাপন করায় জনমনে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। উপজেলার উপর দিয়ে বহমান প্রধান সড়কে অন্তত: অর্ধশত পরিবহণ স্ট্যান্ডের কারণে প্রশস্ত রাস্তার বেশীরভাগ অংশ বেদখল হয়ে গেছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রবেশদ্বার টিকরপাড়া বাজার থেকে শুরু করে রামদা, চারখাই, জিরো পয়েন্ট, বৈরাগীবাজার ত্রিমুখি, পুরো পৌরশহর, জলঢুপ বাজার ও বারইগ্রামে প্রধান সড়কের উপর এসব অবৈধ পরিবহণ স্ট্যান্ডগুলো জনদূর্ভোগের প্রধান কারণ হয়ে ওঠেছে। রাস্তার উপরে বাস-মিনিবাস, মাইক্রো-কার, সিএনজি অটোরিক্সাসহ ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। তবে এসব কোন স্ট্যান্ডের অনুমোদন নেই। যদিও অনুমোদনহীন এসব স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা আদৌ সম্ভব কি-না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠছে।
সরজমিন দেখা যায়, সিলেট নগরী থেকে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের প্রবেশমুখ উত্তরবাজারেই অঘোষিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ৫টি স্ট্যান্ড। প্রধান সড়কের উপরে ঢাকা ও সিলেটগামী পরিবহন এবং সিএনজি ফোরস্ট্রোকের সারিবদ্ধ দীর্ঘলাইন এ জনপদের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ক্রমেই বৃদ্ধি করছে। এছাড়াও দক্ষিণ বাজারে আরোও ৪টি এবং কলেজ রোডে ২টি পরিবহণ স্ট্যান্ড জনভোগান্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি যানজট বাড়াচ্ছে। এসব স্ট্যান্ডে যত্রতত্র গাড়ি রাখার কারণে সড়কের প্রস্থ যেমন সংকুচিত হয়েছে তেমনি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। এখান থেকে দূরপাল্লার গাড়ি ঢাকা, সিলেট এবং সিএনজি ফোরস্ট্রোকসহ ছোট যানগুলো গোলাপগঞ্জ, চারখাই, জিরো পয়েন্ট, দুবাগ, বৈরাগীবাজারসহ প্রত্যন্ত এলাকায় যাতায়াত করে। ফলে প্রধান সড়কের প্রধান দু’ধার থাকে সারিবদ্ধ গাড়ির দখলে। তাছাড়া অদূরে অবস্থিত মাইক্রো-কার স্ট্যান্ড। কাছাকাছি একাধিক পরিবহন স্ট্যান্ড থাকায় মূলত ‘উত্তরবাজার পরিবহন স্ট্যান্ড’ বলে স্বীকৃতি পাচ্ছে। এসব স্ট্যান্ডে বিভিন্ন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে। একাধিকবার পরিবহন শ্রমিকরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে।
জানা যায়, বিয়ানীবাজার পৌরশহরকে যানজটমুক্ত করতে বিগত দিনে সেনাবাহিনী উদ্যোগ নিয়েছিল। তাদের সেই উদ্যোগ কিছুটা হলেও সফলতার মুখ দেখতে পায়। কিন্তু পরবর্তীতে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে গেলে সে উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ে। বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষ মূল শহরের বাইরে পরিবহন স্ট্যান্ডগুলো স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও সংশ্লিষ্টদের অসহযোগিতার কারণে সেটি আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। ফলে অযথাই যানজট সম্পর্কিত বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে উপজেলাবাসীকে। খোদ থানার নিচেই যানবাহনগুলো এলোমেলো রেখে দেন পরিবহন শ্রমিকরা। এখানকার ডিভাইডারের দু’পাশ এসব গাড়ির দখলে থাকায় রাস্তা অনেকটা বন্ধ হয়ে থাকে। একই অবস্থা দক্ষিণ বাজারেও। বারইগ্রামমুখী যানবাহনগুলো যেমন ইচ্ছা তেমনিভাবে রেখে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। গুরুত্বপূর্ণ এই পৌর শহরের ওপর দিয়ে প্রতিদিনই দূরপাল্লার যান চলাচল করায় যানজট সমস্যা ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করে। পথচারীদের দুর্ভোগও চলে যায় অসহনীয় পর্যায়ে। পৌরশহরের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডা: সুজা জানান, বিয়ানীবাজারের প্রধান সড়কের পুরোটাই পরিবহণ স্ট্যান্ড। সেনাবাহিনী এসব উচ্ছেদের ব্যবস্থা করলে জনগণ উপকৃত হবে।
বিয়ানীবাজার পরবহণ শ্রমিক নেতা বিলাল উদ্দিন বলেন, শহরের বাইরে পরিবহন স্ট্যান্ড ব্যবহার করলে যাত্রীদের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। আমরা যাত্রীদের উপকারের জন্যই স্ট্যান্ডটি উত্তরবাজারে নিয়ে এসেছি।
এদিকে বিয়ানীবাজার পৌরসভা বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় শহীদটিলা, সুপাতলা এবং লাসাইতলায় বাসস্ট্যান্ড নির্মাণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা তাতে বেঁকে বসলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পিছু হটে পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৫ বছর পূর্বে লাসাইতলায় আধুনিক স্ট্যান্ড নির্মাণ করা হলেও সেটিও এখন অনেকটা পরিত্যক্ত। উদ্বোধনের পর থেকে একদিনের জন্যও ওই স্ট্যান্ডটি ব্যবহার করেনি শ্রমিকরা।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক গোলাম মুস্তাফা মুন্না জানান, অবৈধ পরিবহণ স্ট্যান্ড উচ্ছেদের আইনী দিক খতিয়ে দেখা হবে। তবে এসব বিষয়ে নাগরিকদের সচতেন হওয়ার আহবান জানান তিনি।
Sharing is caring!