প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৩১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২রা শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বিয়ানীবাজারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের মধ্যে বিশৃংখলা

editor
প্রকাশিত মার্চ ২৭, ২০২৫, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ণ
বিয়ানীবাজারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের মধ্যে বিশৃংখলা

 

স্টাফ রিপোর্টার:

খাস জমিতে সরকারি টাকায় বানানো সারি-সারি ঘর। পাকা দেয়াল আর টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরগুলোতে নেহাত ঠেকায় পড়ে বসবাস করছেন বাসিন্দারা। সুযোগ সুবিধা, নিরাপত্তার অভাব, ঘর নির্মাণে অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছাড়াও নানা কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বিশৃংখল পরিবেশ বিরাজ করছে।

 

বিয়ানীবাজারের ৪টি স্থানে নির্মিত এ প্রকল্পের অনেক ঘরের দরজায় তালা ঝুলছে। পতিত হাসিনা সরকারের এই রাজনৈতিক প্রকল্পে অস্বস্থিতে পড়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশপাশে বসবাসরত স্থায়ী বাসিন্দারা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের নানা অপ্রীতিকর ঘটনায় স্থায়ী বাসিন্দাদের পরিবার-পরিজন বিব্রত। বিগত দিনে পৌরশহরের পন্ডিতপাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণে প্রতিবাদ সভা করেন এলাকার মানুষ। দুবাগের চরিয়ায় এলাকাবাসীর বাধার কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করতে পারেনি সরকার।

 

জানা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলার ২৬৭টি পরিবারকে আশ্রয়ণের ঘর প্রদান করা হয়েছে। একেকটি ঘরে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরে দু’টি কক্ষ, রান্নাঘর ও একটি বাথরুম আছে। উপজেলার চারখাই, বৈরাগীবাজার, মুল্লাপুরের কটুখালিরপার ও পৌরশহরের খাসা পন্ডিতপাড়ায় এসব আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করে সরকার। স্থানীয়ভাব ঘর পাওয়া লোকজনদের অধিকাংশেরই বাসযোগ্য বাড়ি ছিল না।

 

আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীরা জানান, অনেক অধিবাসী নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। মাদক সেবন ও বিক্রি, প্রতিবেশী বসতঘরের অধিবাসীর সাথে অপ্রীতিকর আচরণ, নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়াসহ বসবাসরতদের মধ্যে বৈরী পরিবেশ তৈরী হচ্ছে। বসবাসরত কিশোর-তরুণদের মধ্যে ইভটিজিংয়ের অপরাধের অভিযোগও আছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিবাসীরা বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তাদের মধ্যে বনিবনা কম। একজন আরেকজনের সাহায্যে এগিয়ে আসেনা। বৈরী মনোভাবের কারণে তুচ্ছ ঘটনায় নিজেরা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়। একেকটি ঘরে অতিরিক্ত লোক গাদাগাদি করে থাকছেন। প্রায়ই এসব ঘরে অপিরিচিতদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। সম্প্রতি থানা পুলিশ পন্ডিতপাড়ার আশ্রয়ণ কেন্দ্র থেকে অপরাধে জড়িত এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।

 

এছাড়াও প্রকল্পের সারিবদ্ধ ঘরের বৃষ্টির পানি, ময়লা আবর্জনা, পয়ঃনিস্কাশনের নেই কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা। অল্প বৃষ্টিতে জমা থাকা পানি, প্রতিদিনের রান্নাবান্নাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পানি, পয়ঃনিষ্কাশনের পানি জমে থেকে মশা মাছির বিস্তার, দুর্গন্ধসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বসবাসরতরা।

 

 

কথা হয় ঘর বরাদ্দ পাওয়া পন্ডিতপাড়ার প্রদীপ দাসের সাথে। তিনি জানান, মোটর মেকানিকের কাজ করেন তিনি। অন্যান্য ঘরের বাসিন্দা কর্তৃক নানারকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রতিবেশী ঘরের বাসিন্দা আজাদ বলেন, প্রদীপ মাদকসেবন করে রাতে ঘরে ফিরে উন্মাদনা শুরু করেন। এতে বসবাসের অযোগ্য পরিবেশ তৈরী হচ্ছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়ণ কেন্দ্রের আরেক বাসিন্দা জানান, একেকটি ঘরের উচ্চতা মাত্র ৮ ফুট। এসব খুপঁড়ি ঘরে আশ্রয়ণের নামে নি¤œআয়ের মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ৪টি পরিবারের জন্য একটি টিউবওয়েল থাকার কথা। অপর্যাপ্ত থাকায় ১২টি পরিবার একটি টিউবয়েলের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। পানি সংকট এখানে চরম। কিছু কিছু ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিলে তা মেরামত করা হচ্ছেনা। বৃষ্টির সময় চাল দিয়ে পানি পড়ে।

 

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: হিরণ মাহমুদ বলেন, যারা নিয়মিতভাবে থাকছেন না তাদের কী সমস্যা তা নিরূপন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক তারা যাতে সুন্দরভাবে বসবাস করার সুযোগ পান, সে উদ্যোগ করা হবে।

Sharing is caring!