প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৬শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

বিয়ানীবাজারের যেসব স্থানে নারকীয় গণহত্যা চালায় হানাদাররা

editor
প্রকাশিত মার্চ ২৫, ২০২৫, ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ
বিয়ানীবাজারের যেসব স্থানে নারকীয় গণহত্যা চালায় হানাদাররা

 

স্টাফ রিপোর্টার:

ব্যস্ততম সড়কের পাশেই টিলাভূমির উপর আধুনিকভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বিয়ানীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ। স্থানটি একসময় ছিল নির্জন সবুজ-শ্যামল। চারপাশ উঁচু-নিচু আরো কিছু টিলাভূমি ছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পুরোটা সময় মানুষদের ধরে এনে এখানে নারকীয় গণহত্যা চালিয়েছে পাকিস্তানি সেনারা। এরপর থেকে এই জায়গার নাম হয় ‘মরাটিল্লা’। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এটি ‘বধ্যভূমি ও গণকবর’ হিসেবে পরিচিতি পায়।

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ জানান, ১৯৭১ সনের ৮ জুন উপজেলা সদরের উপকন্ঠ দু’টি বধ্যভূমির প্রথমটিতে পাকি হানাদার বাহিনী স্হানীয় স্বাধীনতা বিরোধীদের সহযোগীতায় গনহত্যা শুরু করে। এদিন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের প্ররোচণায় বাড়ী থেকে ধরে এনে তৎকালীন ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আলতাফ হোসেনের পিতা বিয়ানীবাজারের নয়াগ্রাম (ফতেপুর) এর শহীদ মো: তাহির আলী, তার ছোট ভাই যুবনেতা শহীদ মো: আবুল হোসেন নিজাম, কসবা গ্রামের বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক শহীদ মো: আব্দুল মান্নান, মাথিউরা গ্রামের সমাজসেবক শহীদ মো: সিরাজ উদ্দিনকে প্রথমে স্থানীয় ডাক বাংলায় অমানুষিক নির্যাতনের পর ঐদিন বিকালে চোখ বেঁধে ১ম বধ্যভুমিতে (বর্তমান বিয়ানীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ) নিয়ে যায় এবং একত্রে ব্রাশ ফায়ার করে একই গর্তে মাটি চাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এটি ছিল উপজেলা সদরে সংঘটিত পাকবাহিনীর প্রথম গনহত্যার ঘটনা।

 

এরপর থেকে পাকবাহিনী স্বাধীনতা বিরোধী এবং রাজাকার, আলবদর এবং আলসামসদের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিকামী অসংখ্য মানুষদের ধরে এনে থানা শহরের প্রথম এবং দ্বিতীয় আরেকটি (উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের নিকটবর্তী টিলায়) বধ্যভুমিতে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ছিল। এছাড়া নিকটবর্তী উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুক্তিকামী মানুষকজনকেও ধরে এনে ঐ বধ্যভুমি গুলিতে হত্যা করেছে।

 

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক উদ্দিন জানান, বিয়ানীবাজারের দুটি বড় বধ্যভূমি ছাড়াও স্বাধীনতা বিরোধীদের সহযোগিতায় পাকিবাহিনীর নির্মমতার স্বীকার উপজেলার সর্বত্র অসংখ্য গণকবর রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের স্মরণে উপজেলা সদরের বধ্যভূমির প্রথমটিকে ১৯৮৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে উদ্বোধনের মাধ্যমে তৎকালীন সরকারের আমলে শহীদ পরিবারের সহযোগিতায় সিলেট জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ‘শহীদ স্মৃতিসৌধে’ রূপান্তরিত করে। এর নামকরণ করা হয় ‘বিয়ানীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ’।

 

জানা যায়, ১৯৭১ সালে বিয়ানীবাজার উপজেলার পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিকামী মানুষের একমাত্র সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছিল পূর্ব মুড়িয়া এলাকায়। মুক্তিযোদ্ধাদের বিতাড়িত করে পাকিস্তানী হানাদাররা দখল করে পূর্ব মুড়িয়া এলাকা। স্থানীয় রাজাকারসহ পাক বাহিনীর এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় মুক্তিকামী মানুষদের সারপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এনে নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের শিকার হন সারপারের মো. আবদুর রহমান, নয়াগ্রামের আবদুর নুর, তেরা মিয়া, আষ্টঘরীর কুতুব আলী, ঠেকইকোনার মোবারক আলীসহ অনেকে।

 

পাক বাহিনীর নির্যাতনে নিহত হয়েছেন নয়াগ্রামের মাওলানা মকদ্দছ আলী ময়না মিয়া, সারপারের মো. এরশাদ আলী, চাতলপাড়ের আইয়ুব আলী, বড়উধার মোস্তুফা উদ্দিন চৌধুরী (রেদন মিয়া), আব্দুস সাত্তার, আবদুল গ ফুর, মাইজকাপন-ইনামপুরের আবদুর রউফ কুটি মিয়া (অব. ইপিআর হাবিলদার), আব্দুল মুহিত (কনাই মিয়া)। এদের লাশ নয়াগ্রামের বর্তমান বিজিবি সংলগ্ন জয়নাল মেম্বারের বাড়ির সামনে সুনাই নদীর চর ও আশে পাশের বিভিন্ন গর্তে এনে গণকবর দেয়া হয়।

 

এদিকে বিয়ানীবাজার শহীদ সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম’৭১ এর পক্ষ থেকে ৮ই জুনকে বিয়ানীবাজার গণহত্যা দিবস এবং গণকবরগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০১৫ সালে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বরাবরে একটি আবেদন দেয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোনো জবাব বা আবেদনের পক্ষে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

 

Sharing is caring!