প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৬শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

বিয়ানীবাজার পৌরসভা ছিল আশরাফ সিন্ডিকেটে জিম্মী

editor
প্রকাশিত মার্চ ২৩, ২০২৫, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ণ
বিয়ানীবাজার পৌরসভা ছিল আশরাফ সিন্ডিকেটে জিম্মী

 

# ২০কোটি টাকা হাতিয়ে অন্যত্র বদলী

# মেয়র-কাউন্সিলার, সবার উপর ছিল তার ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ

# টেন্ডার-উন্নয়ন কাজে তার ছিল একক আধিপত্য

# দরপত্রের গোপন মূল্য বা ‘রেট শিডিউল’ ফাঁস করতেন নিয়মিত

 

মিলাদ জয়নুল:

 

বিয়ানীবাজার পৌরসভার নকঁশাকার হিসেবে প্রায় ২০ বছর থেকে কর্মরত ছিলেন আশরাফুল আলম । যদিও পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের সকল কাজ তিনি একাই সামলাতেন। প্রশাসক থেকে নির্বাচিত একাধিক মেয়র-কাউন্সিলার, সবার উপর ছিল তার ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ। কেবল পৌরসভার উন্নয়ন কাজে নয়-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপরও খবরদারি করতেন তিনি। নকঁশাকার আশরাফের প্রভাবে বিয়ানীবাজার পৌরসভায় কোন প্রকৌশলী থিতু হতে পারেননি। এই সময়ে ৬ জন প্রকৌশলী আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। তাদের সর্বোচ্চ মেয়াদ ছিল ৪-৬ মাস।

 

পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী আশরাফুল আলম বর্তমানে অন্যত্র বদলী হয়েছেন। জুলাই অভ্যুথানে নিহত শহীদ সাংবাদিক আবু তাহের মো: তুরাবের নামে পৌর এলাকার ফতেহপুর রাস্তার নামকরণ নিয়ে জঠিলতা সৃষ্টি করেন তিনি। ওই ঘটনায় ছাত্র-জনতার তোপের মুখে পড়ে তিনি নিজ থেকে বদলী হয়ে যান। বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর পৌরসভায় যোগদান করেছেন আশরাফ। সেদিন বিক্ষুব্দ ছাত্র-জনতা তাকে মারধর করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। বদলীর পূর্ব পর্যন্ত আশরাফ বিয়ানীবাজার পৌরসভা থেকে দূর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ২০কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী একটি প্রকল্পের জামানতের টাকা অবমুক্ত করে তিনি একাই হাতিয়ে নেন ১৯ লক্ষ টাকা।

 

সূত্র জানায়, পৌর এলাকায় স্ট্রীট লাইট স্থাপন প্রকল্পের জন্য ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের জমা করা জামানতের টাকা মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার সময় হওয়ায় হিসাব থেকে উত্তোলন করে ফেলেন আশরাফুল আলম । ওই টাকা উত্তোলনে তৎকালীন পৌর প্রশাসক কাজী শামীমের সম্মতি ছিল। জামানতের টাকা উত্তোলনের পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, প্রশাসক এবং অন্যান্যদের ভাগ-বাটোয়ারা দিয়ে আশরাফ নিজে ১৯ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। এরমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানকে মাত্র আড়াই লক্ষ প্রদান করেন তিনি। নিম্নমানের ষ্ট্রীটলাইট লাগানোর কারণে ওই ঠিকাদারীন প্রতিষ্টানের জামানতের টাকা এতদিন আটকে রাখা হয়।

 

এছাড়াও পৌরসভার সকল ধরনের টেন্ডার-উন্নয়ন কাজে তার ছিল একক আধিপত্য। অনেক সময় বিনা টেন্ডারে তিনি নিজেই করতেন বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ। তার অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে পৌরসভার অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। তিনি মেয়র, কাউন্সিলার ও ঠিকাদারদের সাথে পৃথক সিন্ডিকেট ও সমন্বয় সাধন করে চলতেন। গত ৮ বছর থেকে পৌরসভার সকল উন্নয়ন কাজে এক ঠিকাদারের সাথে শক্ত সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন তিনি। ফলে ওই ঠিকাদার গত ৫ বছরে পৌরসভার ৭০ ভাগ উন্নয়ন কাজ একাই সম্পন্ন করেন। অথচ তার সম্পাদিত সকল উন্নয়ন কাজ ছিল অতি নি¤œমানের।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, নকঁশাকার আশরাফ নিয়মিত প্রকৌশলীর অনুপস্থিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভবনের নকশা অনুমোদন, পছন্দের ঠিকাদারের বিল শতকরা ১৫শতাংশ বৃদ্ধি করে কমিশন গ্রহণ, পৌরসভার জ্বালানী তেলসহ নানা সরঞ্জাম কেনাটাকার মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। এসব অর্থে তিনি বিভিন্ন স্থানে জমিজমা ক্রয় করেছেন। তার সিন্ডিকেটের ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে তিনি দরপত্রের গোপন মূল্য বা ‘রেট শিডিউল’ ফাঁস করে দিতেন। আরসিসি ঢালাইয়ের কাজে পুরুত্ব কম ও রড-সিমেন্ট কম লাগিয়ে নির্মিত সড়কে বিল পরিশোধ করেছেন দেদার। কাজ পাইয়ে দেয়া, বিল ও জামানতের চেক পরিশোধের ক্ষেত্রেও গুনে গুনে বুঝে নিতেন কমিশন।

 

বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতি এখনও ওপেন সিক্রেট। কাজ না করেই বিল উত্তোলন, নিম্নমানের কাজ, দরপত্রবহির্ভূত কোটেশনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার কাজ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ গুরুতর নানা অভিযোগ রয়েছে এই বিভাগের বিরুদ্ধে। আর এসব অপকর্মের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন আশরাফুল আলম । শুধু তাই নয়, মাস্টার রোলের কর্মচারীদের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি।

 

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সব অস্বীকার করেন পৌরসভার সাবেক নকঁশাকার আশরাফুল আলম । তার দাবি, আমি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করেছি। আমার কোন দায় নেই। আমাকে যা করতে বলা হয়েছে আমি তাই করেছি। ঠিকাদারী কাজে সিন্ডিকেট গড়ে তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

Sharing is caring!