স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটের গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য কূপ খনন, পানির সুষ্ঠ ব্যবহার ও কৃষির উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্প দু’টিতে সিলেটের ২টি কূপে গ্যাস অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া পানির সঠিক ব্যবহারের মধ্যমে সিলেটের কৃষি খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে আরেকটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়।
সিলেট পর্যটন প্যাকেজ
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সিলেটের এ দুই প্রকল্প ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে চার হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
একনেক চেয়ারপারসন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আজ বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকালে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত সভায় অনুমোদনের জন্য প্রকল্পগুলো উত্থাপন করা হয়।
সিলেট পর্যটন প্যাকেজ সিলেটের দুটি প্রকল্পের মধ্যে একটি হলো, সিলেট বিভাগে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি। প্রকল্পটি ৪৯৯.৯৯ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করবে বিএডিসি। এর মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৯ পর্যন্ত। এবং অপরটি হচ্ছে, ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯নং কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন। প্রকল্পটি সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) বাস্তবায়ন করবে, এবং এর ব্যয় হবে ৬৪৬.৪৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদকাল অক্টোবর ২০২৪ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত।
জানা যায়, সিলেট অঞ্চলের কিছু ভূমি উঁচুনিচু অসমতল হওয়ায় পানির অভাবে মাঠ ফসল উৎপাদনের জন্য তেমন উপযোগী নয়। পাহাড়ি ঝরনা বা ছড়ায় আড়াআড়ি যে মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয় তাকে ঝিরিবাঁধ বলে। উক্ত ঝিরিবাঁধের সাহায্যে উজান থেকে নেমে আসা পানি সংরক্ষণ করে বিস্তীর্ণ এলাকার জমিতে সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধা প্রদান করা সম্ভব।
‘সিলেট বিভাগে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পের আওতায় এ লক্ষ্যে কাজ করা হবে। প্রকল্পে কৃষির উন্নয়নে, নদী, ছড়া, পুকুর খনন, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য আইল ব্যবস্থাপনা, খাবার, গৃহস্থালি কাজে বৃষ্টির পানির ব্যবহার নিয়ে কাজ করা হবে।
তাছাড়া ভূ-উপরিস্থ সেচের পানি সাশ্রয়ে বেশ কিছু সেচ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হতে পারে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ড্রিপ পদ্ধতি, ভূনিম্নস্থ সেচনালা পদ্ধতি, ফিতাপাইপ ব্যবহার ও পাকা সেচ নালা ব্যবহার।
এদিকে, গ্যাসের চাহিদা পূরণ করতে ‘ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯ নং কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানায়, নতুন কূপ খননে গ্যাস পাওয়া গেলে ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯নং কূপ দুটি থেকে প্রথম ৫ বছরে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে এবং পরবর্তী ৫ বছরে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট হারে অর্থাৎ ১০ বছরে মোট ৫৬ বিসিএফ গ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার আংশিক পূরণ করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের আওতায় নতুন ২টি অনুসন্ধান কূপ (ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯) খনন; বৈদেশিক পরামর্শক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ এবং ১৪ কিলোমিটার গ্যাস গ্যাদারিং পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে।
উল্লেখ্য, সিলেট বিভাগের জৈন্তাপুর ও গোলাপগঞ্জ জেলায় ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯নং কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন করে গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেলে প্রথম ৫ বছরে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে এবং পরবর্তী ৫ বছরে দৈনিক ১২ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিড লাইনে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হবে, যা দেশের এবং ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিকও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখবে। এর ফলে দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটবে এবং এলএনজি আমদানি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
Sharing is caring!