স্টাফ রিপোর্টার:
হাসিনা সরকার পতনের পর ১৯ আগস্ট সিলেটসহ সারা দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে বর্তমান অন্তর্বর্তকালীন সরকার। পরে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদেরও অপসরাণ করা হয়।
মেয়র অপসারণের পর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিভাগীয় কমিশনারকে। এবার গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগের পথে হাঁটছে বর্তমান সরকার।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) সচিবালয়ে সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ জানান সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। অতি শীঘ্রই আপনারা দেখতে পারবেন এখানে (স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে) ফুলটাইম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ব্যবস্থা। এটা নিয়ে এখন চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে।
সাময়িক প্রশাসক দিয়ে এত বড় সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা পৌরসভার সেবাগুলো দেওয়া সম্ভব নয় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এখানে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব আছে, সার্বক্ষণিক কর্তব্য আছে। সেগুলো পালন করার জন্য সার্বক্ষণিক একজন প্রশাসকের প্রয়োজন। সে ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি।
তবে কাকে বসানো হতে পারে ‘স্থায়ী প্রশাসক’র চেয়ারে, এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
গত বছরের ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পঞ্চম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন নৌকার প্রার্থী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ নির্বাচনে দুইবারের নির্বাচিত নগরনন্দিত মেয়র বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী দলীয় নির্দেশনা মেনে অংশগ্রহণ করেননি। নির্বাচনের পর ৭ নভেম্বর নগরভবনে মেয়রের পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আনোয়ারুজ্জামান। কিন্তু গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের দিন থেকে তিনি লাপাত্তা রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অন্তত ৩০টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে একাধিক হত্যা মামলাও। আনোয়ারুজ্জামান বর্তমানে লন্ডনে আছেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণের পর নগরভবন পরিচালনায় ২৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এর মধ্যে মূল দায়িত্ব সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের। সদস্যসচিব করা হয় সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে। কমিটির বাকিরা ছিলেন- সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) যুগ্ম-কমিশনার, সংশ্লিষ্ট পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক মনোনীত) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি (চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত), সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি (চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত), জেলা প্রশাসন-স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক/উপ-পরিচালক (জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত), বাংলাদেশ টেলি-কমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর মহাব্যবস্থাপক, গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক/নির্বাহী প্রকৌশলী, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স-এর প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর প্রতিনিধি, প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক।
এ অবস্থায় নগরবাসী সহজে সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে তাদের মধ্য থেকে ১৪ জনকে ৪২টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সমূদয় দায়িত্ব পালনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৩টি ওয়ার্ড ভাগ করে দেওয়া হয় একেকজনের মাঝে।
জানা যায়- ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করবেন সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদ। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর ০১৭৩০৭৮২৬৬১।
৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন গণপূর্ত অধিদপ্তর সিলেটের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ ইলিয়াস আহম্মেদ। যোগাযোগের নম্বর ০১৭৫৩৯১০০৬৬।
৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সিলেটের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সুবর্ণা সরকার। যোগাযোগের নম্বর ০১৭৩০৩৩১০২১।
১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম। যোগাযোগের নম্বর ০১৭১১৮৫৫০৮৩।
১৩, ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেট সার্কেলের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ শেখ সাদী রহমতউল্লাহ। যোগাযোগের নম্বর ০১৭১৭৩১০৯৩৬।
১৬, ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী প্রকৌশলী মো. শাহাদাত আলী। যোগাযোগের নম্বর ০১৭৩০৩১৯৯৫৪।
১৯, ২০ ও ২১ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন জাতীয় গৃহায়ন অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন। যোগাযোগের নম্বর ০১৯১৩৩৮৩৯৪৬।
২২, ২৩ ও ২৪ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. জোবায়েদুর রহমান। যোগাযোগের নম্বর ০১৩২০০৬৭০০৩।
২৫, ২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পেয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা। যোগাযোগের নম্বর ০১৭২২২৯২৪৪৭।
২৮, ২৯ ও ৩০ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সিলেট অঞ্চলের উপপরিচালক আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ। যোগাযোগের নম্বর ০১৭১২৬৮৩৯৫৪।
৩১, ৩২ ও ৩৩ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বিভাগীয় উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন। যোগাযোগের নম্বর ০১৭৫৬৪১৩৮৭৮।
৩৪, ৩৫ ও ৩৬ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পেয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান। যোগাযোগের নম্বর ০১৭১৮০০৭১১১।
৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পেয়েছেন বন বিভাগ সিলেটের সহকারী বন সংরক্ষক তারেক রহমান। যোগাযোগের নম্বর ০১৭১০৪০০২৬৫।
৪০, ৪১ ও ৪২ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স সিলেটের বিভাগীয় উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। যোগাযোগের নম্বর ০১৭১০৪৭৩৬৫৪।
Sharing is caring!